ব্রিসবেনের সাইটোপ্যাথোলজিস্ট ডক্টর পেটা ফেয়ারওয়েদার এক ইউটিউব ভিডিওতে জরায়ুর ক্যান্সার নিয়ে আলোচনাকালে বলেন, সচরাচর বা প্রায় সর্বত্র দেখা যায় এমন এক ভাইরাস—পেপিলোমা ভাইরাসের দ্বারা অনেকেই আক্রান্ত হন। অনেক ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ এক পর্যায়ে জরায়ুর ক্যান্সারে পর্যবসিত হয়।
এটা পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত যে, নারীদের কৈশোর প্রারম্ভে 'Human Papilloma Virus' (HPV) ভাইরাসের টিকা দেওয়া হলে তাদের জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া এবং এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এই কারনে ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বিনামূল্যে ন্যাশনাল HPV টিকাদান কর্মসূচি সূচনা করা হয়েছিল।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে যেসব ক্যান্সারে নারীরা সর্বাধিক আক্রান্ত হয় তার মধ্যে সার্ভিকেল ক্যান্সার চতুর্থ।
যুক্তরাজ্যেও একই ধরণের টিকাদান কর্মসূচি প্রচলিত আছে। সম্প্রতি চিকিৎসা গবেষণার বিখ্যাত সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে এই টিকাদানের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
এতে দেখা যায়, ৫০০টি উপাত্তে ক্যান্সার শেষ পর্যায়ে পৌঁছার আগে রোধ করা গেছে এবং ক্যানসারপূর্ব দশার সংখ্যা ১৭২০০টি কম ছিল।
A nurse preparing to give a patient an HPV vaccine to protect against cervical cancer Source: AAP
এইছপিভি ভ্যাক্সিন নিয়ে গবেষণার শুরু থেকে যুক্ত আছেন ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মার্গারেট স্ট্যানলি। তিনি বলেন, আমরা ভ্যাক্সিনের কার্যাকারিতার কথা জানতাম কিন্তু তা প্রমাণের পর্যাপ্ত তথ্য তখন আমাদের ছিলো না।
গবেষকরা জানান, ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সে টিকা দেওয়া নারীদের ক্ষেত্রে জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৬২ ভাগ হ্রাস পায়। টিকাদান কর্মসূচীর শুরুতে যেসব নারীর বয়স ছিলো ১৬ থেকে ১৮ বছর, তাদের ক্ষেত্রে এই হার এক তৃতীয়াংশ।
২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার ১৫ বছর বয়সী ৮০ ভাগ নারী HPV’র সবগুলো ডোজ, বা তিনটিই নিয়েছেন। পক্ষান্তরে একই অনুপাতে টিকা নেওয়া পুরুষের অংশ ছিল ৭৬ ভাগ। পুরুষদের জাতীয় HPV টিকাদান কর্মসূচিতে ২০১৩ সালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে’র হেলথ ইনফরমেশন ম্যানেজার ক্রিস বেটস কিশোর-কিশোরীদের জন্য টিকা সহজলভ্য করতে গুরুত্বারোপ করেছেন।
বলেন, অনেকে জীবদ্দশায় এইচপিভি বা হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এই ভাইরাসের কোন কোন প্রকরণ মানুষের দেহকোষের যে পরিবর্তন ঘটায় তার ফলে জরায়ুর ক্যান্সার হয়ে থাকে। তাই এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে কমবয়সে এই টিকা দেওয়া উচিৎ।
কিন্তু এ কথা সত্য যে কিছু মানুষ টিকা নিতে চাননা। সাম্প্রতিক কোভিড-১৯
এবং HPV টিকার ক্ষেত্রেও এমন দেখা গেছে। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের টিকা দেওয়ার বিপক্ষে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স মেডিসিন এর সহকারী অধ্যাপক এনা বেভিস বলেন,
ডাক্তার সহ জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের টিকা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। টিকা যে মানুষের জন্য কতটা জরুরী এবং তা নেওয়া যে নিরাপদ —এ কথা মানুষকে বোঝাতে হবে।
২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫ লক্ষ ৭০ হাজার নারী জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৩ লক্ষ ১১ হাজার।
প্রফেসর মার্গারেট স্ট্যানলি বিশ্বাস করেন এই রোগের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান হতে পারে একটি কার্যকর হাতিয়ার। বিশেষ আফ্রিকার দেশগুলোয় কিশোরীদের টিকা দেওয়া গেলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।