প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেন, কোয়ালিশনের মধ্যেই 'ক্লাইমেট ডিনাইয়ার' বা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব অস্বীকারকারীরা আছেন।
তিনি এবিসি'র কিউ এন্ড এ প্রোগ্রামে বলেন, "কোয়ালিশনের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মৌলিক সমস্যা আছে। কারণ, লিবারেল এবং ন্যাশনাল পার্টিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা অস্বীকারকারীদের একটি গ্রুপ আছে।"
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকারের বিষয়টি নতুন নয়। ২০১০ সালে ইনসাইট অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রয়াত ক্লাইমেটোলজিস্ট স্টিফেন স্নেইডারের সাথে এমন বেশ কিছু অস্বীকারকারীদের সাক্ষাৎ ঘটে।
আজকে নয় বছর পর তাদের বক্তব্য কি ? তাদের মতামত কি পরিবর্তিত হয়েছে?
এখানে তাদের পূর্ব এবং বর্তমান বক্তব্য তুলে ধরা হলো:
মার্ক - নির্মাণ কর্মী
২০১০: "আমার মনে হয় প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার নিজস্ব ক্ষমতা আছে। আমরা যদি বৈশ্বিক উষ্ণতার চরমে পৌঁছি, তবে আমি নিশ্চিত যে পৃথিবীর নিজেকে শীতল করার নিজস্ব পদ্ধতি আছে।"
২০১৯: "আমি এখনো আমার বক্তব্যে (জলবায়ু নিয়ে) শতভাগ নিশ্চিত এবং পরিবেশ বিজ্ঞানী ও প্রকৃত বিজ্ঞানীদের মধ্যে বেশ ফারাক আছে। কারণ, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সরকার থেকে তহবিল পাওয়ার চেষ্টা করে আর প্রকৃত বিজ্ঞানীরা সিএসআইআরও (CSIRO) এবং অন্যান্য সংগঠনে বছরে ষাট হাজার ডলারে কাজ করে-এই হচ্ছে পার্থক্য। বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে আমি ঐসব ডাটা নিয়ে ভাবিত নই, এবং এখানে যে অগ্নিকান্ড হচ্ছে তা পরিবেশেরই পরিষ্কারকরণ এবং ভারসাম্য রক্ষাকরণেরই অংশ -ইকোসিস্টেম এটাই করে -সবাই চিৎকার করছে যে এটা গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এতো তাড়াতাড়ি আমার ধারণা পরিবর্তন হবে না। "
ডাঃ আয়ান - জেনারেল প্র্যাক্টিশনার
২০১০: "আমি জানি যে প্রকৃতির ৩ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড মানুষ দ্বারা উৎপাদিত। এতো কম মাত্রার কার্বন ডাই অক্সাইড পৃথিবীর মতো বড় স্থানকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে? এটা অবিশ্বাস্য। পৃথিবীতে হোমিওস্ট্যাটিস রয়েছে যাতে অল্প পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড সহজেই দ্রবীভূত হয়।"
২০১৯: "গত নয় বছরের গবেষণায় আমি কিছুই পেলাম না, বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষায় ব্যবহৃত গবেষণা পত্রে এমন কিছুই নেই যা আমার পূর্ব মতামতকে অস্বীকার করে।
আমি মানুষকে বলতে চাই না যে আমি পরিবেশ নিয়ে ভাবি না, পরিবেশ নিয়ে আমি গভীর ভাবে চিন্তা করি, আমার কোন এজেন্ডা নেই, আমি এখন ডাক্তার, আগে ইঞ্জিনিয়ার ছিলাম, আমার ব্যাকগ্রাউন্ড বিজ্ঞান, আমি বোকা নই, এবং অনেকেই আমার মত পৃথিবী নিয়ে চিন্তা করে। আমরা আমাদের ব্যাপারে এমন কিছু উপস্থাপন করতে চাই না যাতে মানুষ আমাদের একগুঁয়ে ভাবে, কারণ আমরা বৈজ্ঞানিক প্রমান চাই।"
তানিয়া - গৃহিনী
২০১০: "আমি মনে করি কার্বন ডাই অক্সাইড আমাদের জন্য উপকারী। এটি পৃথিবীকে উষ্ণ করছে, ফলে সবুজায়ন হচ্ছে, ফসল ফলছে, তাই যেসব নাটক হচ্ছে তার কোন কারণ দেখি না। এটি (কার্বন ডাই অক্সাইড) অল্প পরিমানে বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু এতে আমরা পুরো অর্থনীতিকে পরিবর্তন করতে পারছি। এটি আসলে আমাদের সাহায্য করছে, এটি আমাদের জন্য উপকারী।"
২০১৯: "আমার মতামতের কোন পরিবর্তন হয় নাই, আমরা আমাদের পুরো অর্থনীতিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে দিতে পারি না। অল্প কিছু কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির কারণে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে পারি না।"
পিটার - ট্রেন ড্রাইভার
২০১০: "না আমি এটা (জলবায়ু পরিবর্তন মানব সৃষ্ট) বিশ্বাস করি না। আমি জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তন হতেই থাকবে, কিন্তু আমি এমন কিছু প্রমান পাইনি যা প্রাকৃতিক ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করে, এবং আমি এমন অস্বাভাবিক কিছু পড়তে পেলাম না যাতে মনে হয় আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন কিংবা উষ্ণতা বাড়ছে।"
২০১৯: "জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে ৪.৬ বিলিয়ন বছরের ধারণা, এটি এখনো ধারণা যে যদি কার্বন ডাই অক্সাইড .০০১০২৬ বাড়ে তবে এটি পৃথিবীকে উষ্ণ করে দেবে, এটি প্রাকৃতিক উষ্ণায়ন প্রক্রিয়া যা মনে হচ্ছে কমে আসছে। আমি স্বীকার করি উষ্ণায়ন হচ্ছে তবে এটি কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, কোন কুসংস্কার বা অপরাধবোধ থেকে বলছি না যে এটি মানব সৃষ্ট। মানুষ অনেকভাবে ক্ষতি করছে কিন্তু এভাবে (ইচ্ছাকৃত কার্বন উৎপাদন ) নয়।"
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ডঃ ইয়ান ম্যাকগ্রেগর বলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সন্দেহ পোষণকারীরা মোট অস্ট্রেলিয়ান জনসংখ্যার খুবই কম অংশ - তাদের মতামত গ্রহণ করা কঠিন।
"আমরা বয়সে যত পরিণত হই, ততই নিজের মতামতে দৃঢ় থাকি, তাই এই ধারণার পরিবর্তন কঠিন।"
অস্ট্রেলিয়ার বর্তমানের বুশফায়ার সংকটকে অনেকে প্রকৃতির পরিবেশকে সূচীকরণের নিজস্ব পদ্ধতি বলে মনে করেন, এ ব্যাপারে তিনি স্বীকার করেন যে বুশফায়ারের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি যোগাযোগ নেই, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিকে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আরো পড়ুন:
READ MORE
অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বুশফায়ারের এক ঝলক