AAP image/AP Photo/Bebeto Matthews Source: AAP image/AP Photo/Bebeto Matthews
বিশ্বের দুইশ’টি দেশের রাজনৈতিক নেতা ও জলবায়ু কূটনীতিকরা সম্মেলনটিতে অংশ নিয়েছেন।দুই সপ্তাহ ব্যাপি এই সম্মেলনে বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংকট জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্মেলন এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বলেছেন, বিশ্ব এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোন সুযোগ থাকবে না। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এতদিন ধরে যেসব পদক্ষেপ বিশ্ব নেতারা নিয়েছেন সেগুলো ‘একবারেই পর্যাপ্ত নয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি ।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর এবং অনুমোদন করেছে এবং চুক্তির শর্তাবলী অনুযায়ী তাদের সবাইকে ২০২০ সালের আগেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই পুরো বিশ্ব তাকিয়ে আছে মাদ্রিদে চলমান জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৫ এর দিকে।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, জলবায়ুর পরিবর্তন প্রভাবে আফ্রিকার কয়েক মিলিয়ন মানুষ খেতে পায় না। দাতব্য সংস্থাটি বলছে এর প্রভাবে সৃষ্টঘূর্ণিঝড় ও খরাজনিত কারণে ৩৩ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পর্যায়ে রয়েছে।স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে শুরু হওয়া জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৫ লিডার্স সামিটে ‘অ্যাকশন ফর সারভাইবাল: ভালনারেবল নেশনস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘আমরা যদি শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হই, তাহলে শিশুরা আমাদের ক্ষমা করবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে ধরিত্রী সম্মেলন শুরু হওয়ার পর আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাসের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হইনি। এর নিঃসরণ এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রবণতা বিশ্বের জন্য এখনো টেকসই নয়। মোকাবিলার সীমিত সক্ষমতা এবং সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির ধকল বয়ে বেড়াচ্ছি, অথচ এ ক্ষেত্রে আমাদের যৎসামান্য অথবা কোনো দায়ই নেই। এটি মারাত্মক অবিচার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।’
জাতিসংঘের উদ্যোগে স্পেনের মাদ্রিদে কপ-২৫ লিডার্সসামিট শুরুর প্রাক্কালে অক্সফাম তাদের গবেষণায় ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা দেখিয়েছে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে , যুদ্ধে যে পরিমাণ মানুষবাস্তুচ্যুত হয়, তার চেয়ে তিন গুণেরও বেশি মানুষ ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হয় বন্যা ও দাবানলে।অক্সফামের জলবায়ুবিষয়ক পলিসির নেতা টিম গোরে বলেন, কিউবা, ডমিনিকা, টুভালুর মতো দ্বীপরাষ্ট্রগুলো গড়ে প্রতিবছর তাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশকে বাস্তুচ্যুত হিসেবে দেখতে পেয়েছে। অর্থাৎ তাদের বাড়ির বাইরে থাকতে হয়েছে।টিম গোরে আরো বলেন ‘বিশ্ব উষ্ণ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন থেকে আমরা সতর্ক করেছি। এখন আমরা নিজের চোখেই দেখছি কিভাবে দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। এসব বিপর্যয় বহু দরিদ্র দেশকে এমন এক অবস্থানে ফেলে যায় যে, তারা ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আরেকটি বিপর্যয় তাদেরকে আঘাত করে।’ যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়ার মতো কিছু দেশ তো ক্ষতবিক্ষত হয় খরা ও বন্যা দুটিতেই।কখনও কখনও একই বছরে এই দুইটি দুর্যোগসেখানে হানা দেয়।
জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী বিশ্বনেতাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন বিশ্বের কিশোরে কিশোরীরা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে এ নিয়ে সমাবেশ হয়েছে এনিয়ে কিছু করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এর প্রতি তারা আহবান জানিয়েছে।সম্প্রতি সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ পৃথিবীর সুরক্ষার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী বিশ্বনেতাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা এই জলবায়ুকর্মী একত্রিত করেছেন হাজার হাজার শিশু-কিশোরকে।এই সমাবেশ থেকে সবাইকে সতর্কবার্তা দিয়ে বুঝিয়েছে জলবায়ু ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়া কতটা জরুরি। গ্রেটার ডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে জড়ো হয়েছিলো প্রায় ২ শ হাজারের ও বেশি মানুষ।
ওই সমাবেশের সামনের সারিতে ছিল ১৬ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোরী রেবেকা শবনম। সেখানে শবনম সবাইকে বোঝাতে চেয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নিউ ইয়র্কে হাজার হাজার মানুষের সামনে তিনি বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, যা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর মধ্যে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।’ বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কেমন করে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তাও তুলে ধরেছেন রেবেকা।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অব্স্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারসহ উন্নয়নের বর্তমান পরিবেশ বৈরী ধারা-প্রবণতা বজায় রাখলে ভয়ঙ্কর জলবায়ু ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ। এখানে নারী, শিশু ও রোহিঙ্গা শরণার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শবনম বলে, ‘ভেবেছিলাম যখন বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হবে তখন সবাই চুপ থাকবেন। তবে সবার সাড়া দেখে আমি নিজেই অবাক। এটা শুধু পরিবেশগত সংকট না। এটা মানবাধিকার সংকটও। বাংলাদেশের নারীরা পাচারের শিকার হন আর এটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আরও বেড়েছে। আমরা বাংলাদেশে থাকা নারী ও রোহিঙ্গাদের জানাতে চাই, তাদের জীবনের জন্য বিশ্বজুড়ে আন্দোলন করছি আমরা।’