ভারতের রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক স্থাপনা লালকেল্লার একটি চুড়ায় উঠে সংগঠনের পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে আন্দোলনরত কৃষকরা। সেখানে একাধিক স্তম্ভের মাথায় কৃষক সংগঠনের পতাকা ঝুলিয়ে দেন। কেল্লার সামনের খুঁটি বেয়ে উঠে পতাকা টাঙিয়ে দিতে দেখা যায় এক আন্দোলনকারীকে। সেই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চরমে ওঠে।
দিল্লির আইটিও মোড়ে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। ট্র্যাক্টরে উলটে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। যদিও বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।কর্মসূচির আগে দিল্লির সিংঘু সীমানায় পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভরত কৃষকদের বিরুদ্ধে। পালটা লাঠিচার্জ করে পুলিশ, পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটায় পুলিশ।
সেন্ট্রাল দিল্লিতে পুলিশের বাস ভাঙচুরেরও অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। পুলিশি বাধা পেরিয়ে লালকেল্লায় ঢুকে পড়েন কৃষকরা। কেন্দ্রের তিন বিতর্কিত কৃষি আইনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার দিল্লিতে ট্র্যাক্টর র্যালির ডাক দিয়েছিলেন দেশের কৃষকরা। টালবাহানার পর শেষমেশ কৃষকদের র্যালির অনুমতি দিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। আর তারপরই, কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার রাজধানীতে প্রাণ গিয়েছে এক কৃষকের।
পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলাকালীন ট্র্যাক্টরটি উল্টে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে ঢোকার মুখে তাঁদের পথ আটকায় পুলিশ। এমনকি গুলিও চালানো হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষুব্ধদের দাবি, ট্র্যাক্টরটিতে সেই গুলি এসে লাগে। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় ট্র্যাক্টরটি। তার নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ওই কৃষকের।
তারপরই দিল্লির একা্ংশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। আংশিক বন্ধ করা হয়েছে দিল্লির মেট্রো পরিষেবাও। দু’রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কৃষক আন্দোলনের নেতারা অনুরোধ করেছেন শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন করতে। তবু দুপুর পর্যন্ত লালকেল্লা থেকে একবার কৃষকদের সরানোর পর, নতুন করে ট্র্যাক্টরে আরও প্রতিবাদী কৃষকরা এসে ভিড় করেছেন।
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ’ কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন সেটাই দেখেছে দিল্লি। দুপুরের পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিশেষ বৈঠকে বসে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়, নিরাপত্তা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই ইন্টারনেট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিঙ্ঘু, গাজিপুর, টিকরি, মুকারবা চক, নাঙ্গলোই-এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে আসরে নামেন কৃষক আন্দোলনের সমর্থক মুখ্যমন্ত্রীরা। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ কৃষকদের শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। একই আবেদন করেছেন আন্দোলনের মুখ যোগেন্দ্র যাদব, রাকেশ টিকায়েতরাও। তবে তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এদিকে কৃষকদের ট্রাক্টর র্যালিতে হিংসা নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, হিংসা কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তবে, হিংসার বিরোধিতা করলেও কৃষকদের দাবিকে যে তিনি সমর্থন করেন, সেকথা আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি।
তাঁর কথায়, সরকারকে তিনটি কালা কানুন প্রত্যাহার করতেই হবে। অনেকে মনে করছেন, লালকেল্লায় যেভাবে অন্য পতাকা ওড়ানো হল, সেটা জাতীয় পতাকার অবমাননার শামিল। স্বাভাবিকভাবেই, কৃষকদের র্যালি ঘিরে যে অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হল, তা থেকে দূরত্ব বাড়ানো শুরু করেছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি।
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইটে বলেছেন, হিংসা কখনও কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না।তাঁর কথায়,যার উপরই আঘাত করা হোক না কেন, হিংসা কখনও কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না।এতে এই দেশই ভুগবে। তাই দেশের স্বার্থে কৃষক বিরোধী আইনগুলি প্রত্যাহার করা উচিত।
এর মধ্যেই প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানী দিল্লিতেই কিছু সময়ের জন্য লালকেল্লার দখল নিয়েছিলেন বিক্ষোভকারী কৃষকরা। ওড়ানো হয় কৃষক সংগঠন নিশান সাহিবের পতাকা। আর সেই ঘটনার ছবি পোস্ট করে টুইটারে দিলজিৎ দোসাঞ্জ এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে আক্রমণ করেছেন কঙ্গনা রানাউত।
টুইটারে লিখেছেন,এবার জবাব দাও দিলজিৎ দোসাঞ্জ ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। গোটা বিশ্ব এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। এটাই তোমরা চেয়েছিলে তো, অভিনন্দন। এর আগে ৬ ডিসেম্বর কৃষক বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।
টুইটারে প্রিয়াঙ্কা লিখেছিলেন,আমাদের কৃষকরাই অন্নদাতা।তাই গণতান্ত্রিক দেশে তাঁদের দাবি যাতে মানা হয়, সে ব্যাপারটা নিশ্চিত করা উচিত।আর এই বিক্ষোভ নিয়েই কঙ্গনা ও দিলজিতের মধ্যে রীতিমতো বিতর্ক হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দিলজিৎকে করণ জোহরের পোষ্য বলেও কটাক্ষ করেছিলেন কঙ্গনা।
পালটা দিয়ে দিলজিৎ প্রশ্ন করেছিলেন, যাঁদের সঙ্গে কঙ্গনা কাজ করেছেন, তিনিও তাঁদের সকলের পোষ্য কিনা। সেই প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবারের ছবি তুলে ধরে দুই তারকার কাছে জবাব চেয়েছেন বলিউডের ক্যুইন, কঙ্গনা রানাউত। এর পাশাপাশি আরও একাধিক টুইট করেছেন কঙ্গনা।
একটি টুইটে অভিনেত্রী কঙ্গনা জানিয়েছেন, কৃষক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁর সঙ্গে ছ’টি সংস্থা বিজ্ঞাপনের চুক্তি বাতিল করেছে। সংস্থাগুলির আধিকারিকদের দাবি ছিল, কঙ্গনা কৃষকদের সন্ত্রাসবাদী বলেছেন। তার জেরেই অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত লিখেছেন, আজ তিনি প্রত্যেক ভারতবাসীকে বলতে চান, যাঁরা এই বিক্ষোভকে সমর্থন করছে প্রত্যেকে সন্ত্রাসবাদী আর এই দেশ বিরোধী সংস্থাগুলিও।
আরো দেখুনঃ