পেমোলওয়ে ছিলেন একজন আদিবাসী যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা, এবং একজন সত্যিকারের বীর - কিন্তু হয়তো আপনি কখনো তার নামই শোনেননি।
এই এবরোজিনাল মানুষটি সিডনির বাসিন্দা ছিলেন যখন ব্রিটিশরা ১৭৮৮ সালে প্রথম আসে, এবং তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক দশকের প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
(এবরোজিনাল এবং টোরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডের মানুষদের জ্ঞাতার্থে সতর্কতার সাথে জানানো যাচ্ছে এই ফীচারটিতে যুদ্ধে নিহত মানুষদের বর্ণনা রয়েছে)
এবরোজিনাল যোদ্ধা পেমোলওয়ের প্রতিরোধ যুদ্ধের কাহিনী ইতিহাসের গর্ভে হারিয়ে গেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকের একটি চিত্রে দেখা যায় একটি নৌকায় পাল তুলে চলেছেন একজন আদিবাসী মানুষ, ছবিতে তার ছিল পেশীবহুল পেটা শরীর, পেমোলওয়ের সম্পর্কে যেমন অতিকায় বর্ণনা পাওয়া যায় ওই ছবির সাথে তা মিলেও যায়।
অনেক এল্ডাররা বলেন, এই এবরোজিনাল যোদ্ধার অবদান সংরক্ষণ এবং স্মরণ রাখতে হবে।
দুইশ বছরেরও বেশি হয়ে গেছে, সিডনির লা পেরোজে বিজিগাল ল্যান্ডে এখনো তার বীরত্বের কাহিনী মানুষের মুখে মুখে ছড়ায়।
বিজিগাল এল্ডার আঙ্কল ভিক সিমস এই বীর যোদ্ধার কিংবদন্তি যাতে মুছে না যায় তার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আঙ্কল সিমস বোটানি বে'তে জন্মেছিলেন এবং বড় হয়েছেন, এখানেই ব্রিটিশদের প্রথম ফ্লিটটি নোঙর করেছিল। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার অন্ধকার ইতিহাস আলোতে আনা প্রয়োজন।
ইতিহাসবিদরা ইউরোপিয়ান সেটেলমেন্টের প্রকৃতি এবং বিস্তৃতি নিয়ে অনেকদিন ধরেই বিতর্ক চালিয়ে আসছিলেন, কিন্তু সিডনির সেই সময়ে পেমোলওয়ের সেটলারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের ঘটনাগুলো বার বার উল্লেখিত হয়েছে।
যতদূর জানা যায় পেমোলওয়ে ১৭৫০ সনের দিকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সিডনির বোটানি বে'তে বিজিগাল ল্যান্ডে। তার শারীরিক বর্ণনায় দেখা যায় তার বাঁ চোখে একটি দাগ ছিলো, তার পায়ের পাতাগুলো ছিলো বাঁকানো - এই বৈশিষ্টের কারণে তাকে অনেকেই 'বুদ্ধিমান ব্যক্তি' বলে মনে করতো, সেই সাথে তার অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাও ছিল বলে মনে করা হতো।
ধারুগ এল্ডার আঙ্কল রিচার্ড গ্রীন ব্যাখ্যা করে বলেন, "তিনি খুব লম্বা ছিলেন না, পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি হয়তো হবে, কিন্তু খুব শক্তিশালী মানুষ ছিলেন, এক হাতেই তিন/চারটি ক্যাঙ্গারু বহন করতে পারতেন।"
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে পেমোলওয়ে তার আশেপাশের এবরোজিনাল গোষ্ঠীগুলোকে একত্র করেছিলেন ব্রিটিশ সেটলার এবং মিলিটারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য। প্রায় ১২ বছর ধরে উপনিবেশিকরণ রোধ করতে এবং কিছু টেরিটোরি ধ্বংস করতে তার সাফল্যও ছিলো।
তবে সেই যুদ্ধগুলো সবসময়ই গৌরবময় ছিল না। আঙ্কল সিমস বলেন, তিনি কয়েকবার যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন।
কিন্তু অনেক বছরের যুদ্ধে পেমোলওয়েকে জীবিত বা মৃত ধরার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তিনি ১৮০২ সালে ব্রিটিশদের হাতে নিহত হন। তার দেহাবশেষ ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয় পরীক্ষার জন্য। তবে সেটি এখন কোথায় আছে এখনো জানা যায় নি।
প্রফেসর জ্যাকলিন ট্রয় ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির ইন্ডিজিনাস রিসার্চ বিভাগের ডিরেক্টর। তিনি বলেন, পেমোলওয়ের কাহিনীর এটি একটি বিয়োগাত্মক অংশ।
এই বীর যোদ্ধার ভয়ংকর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর পরেও, আঙ্কল ভিক এবং আঙ্কল রিচার্ডের মত মানুষেরা তার বীরত্বের কাহিনী সংরক্ষণ করছেন। তারা বলেন, এই যোদ্ধার স্মৃতি এবং আত্মা এখনো অস্ট্রেলিয়ার বিজিগাল ভূমিতে বিদ্যমান।
আজকে পেমোলওয়ে এবং তার কষ্টগুলোকে স্মরণ করার জন্য রয়েছে শুধু লা পেরোজে একটি ফলক। প্রফেসর ট্রয়সহ তার অন্যান্য ভক্তরা এর পরিবর্তন চান।
ইদানিং বেশ কিছু ইন্ডিজিনাস গল্প সিনেমায় সাফল্য পেলে, পেমোলওয়েকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
২০২১ সালে তাকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে, এটির চিত্রনাট্য এবং প্রযোজনা করবেন ইন্ডিজিনাস অস্ট্রেলিয়ানদের একটি টিম, তারা কমিউনিটি এল্ডারদের নিয়ে এবিষয়ে আলোচনা করে গল্প লিখবেন।
আঙ্কল রিচার্ড এই ফিল্মটির চিত্রনাট্য লিখতে ধারুগ ভাষার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করবেন। তিনি প্রত্যাশা রেখে বলেন, এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পেমোলওয়ের বীরত্বের গল্প আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
আরো দেখুন: