২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির এক বিশেষ দিন। এদিন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা। সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকরা। আর তাদের রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয়েছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাভাষী জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভাষা শহীদদের স্মরণে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল, সাইন্টিফিক এন্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেসকো) একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণা দেয়। এরপর ২০০০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি।
সারাবিশ্বে যেখানেই বাঙালিরা আছেন সেখানেই পালিত হয়ে থাকে একুশে ফেব্রুয়ারী তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ এন্ড কালচারাল স্কুল, মেলবোর্ন (BLCS) প্রতিবারের মত এবারও পালন করবে দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষে আগামী শনিবার ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১.৩০ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংগঠনটি।
নতুন প্রজন্মের বাংলাভাষী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাভাষা এবং সংস্কৃতি চর্চ্চা অব্যাহত রাখতে ১৯৮৪ সালে গুটিকয়েক বাংলাদেশী পরিবার বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ এন্ড কালচারাল স্কুল, মেলবোর্ন বা BLCS প্রতিষ্ঠা করে। স্কুলটি এথনিক স্কুলস এসোসিয়েশনসের সদস্য। বাংলা ভাষা শেখানো ছাড়াও স্কুলের আয়োজনে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখসহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো পালিত হয়ে আসছে।
একুশে ফেব্রুয়ারী তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী পূরবী চৌধুরী জানান, "দিনের শুরুতে থাকবে প্রভাতফেরি এরপর দুপুর ১২টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃতি, নাটক প্রদর্শনী, সঙ্গীত এবং স্কুলের শিক্ষার্থী এবং পিতামাতাদের নৃত্যানুষ্ঠান। বিকাল ৪টায় শিশুদের জন্য রয়েছে চিত্রাঙ্কন কর্মসূচি। এছাড়াও হরেক রকম বাঙালি খাবারের স্টল।"এবারের অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ প্রখ্যাত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্পের অনুপ্রেরণায় নির্মিত নাটক 'গুপী গাইন-বাঘা বাইন'।
এবারের অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ প্রখ্যাত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্পের অনুপ্রেরণায় নির্মিত নাটক 'গুপী গাইন- বাঘা বাইন' Source: Sannidhyan Shom
এই প্রসঙ্গে মিসেস পূরবী বলেন, "BLCS-এর শিশু শিক্ষার্থীরা নাটকটিতে অভিনয় করেছে, আধো আধো বাংলা বলা এবং অনেক সাধনা করে সংলাপ মুখস্ত করা, এভাবেই অনেক কষ্ট করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নাটকটির। ওদের এই পরিশ্রমের অনুপ্রেরণা শুধুই শিক্ষকদের বর্ণিত স্বপ্নপুরী বাংলাদেশের কথা, বাংলা ভাষার কথা ও সত্যজিত রায়ের মনকাড়া ছবিগুলো। এই নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন তরুণ মেধাবী সংস্কৃতি কর্মী এবং ডেকিন ইউনিভার্সিটির ছাত্র সান্নিধ্যেন সোম।"
আয়োজকরা আশা করছেন দিবসটি পালনের মধ্যে দিয়ে অন্যান্য ভাষাভিত্তিক কমিউনিটি বাঙালির বাংলাভাষা রক্ষার বেদনাদায়ক ইতিহাস এবং আত্মত্যাগের কথা জানতে পারবে। অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হবে আগামী শনিবার, ২২শে ফারুয়ারি মেলবোর্নের চ্যান্ডলার কমিউনিটি সেন্টার, কিসবরোতে।
আরো পড়ুন: