বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকার বইমেলা যেন বঙ্গবন্ধুময়।
বাংলাদেশের মহান স্থপতিকে শ্রদ্ধা জানাতে মেলার বিভিন্ন অংশ সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও বাণী দিয়ে। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কর্ম ও জীবনী।
মেলার প্রথম দিনেই প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর লেখা গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়া চীন’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলামঞ্চে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। এ ছাড়া অধিকাংশ প্রকাশনী সংস্থা প্রকাশ করছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা নানা বইপত্র।
বিশাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সবটুকু অংশজুড়েই এবার গ্রন্থমেলা আয়োজিত হয়েছে। বইমেলার ইতিহাসে এবারই পরিসর ও আয়তন সবচেয়ে বেশি। খোলামেলা আবহে সাজানো হয়েছে বইমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন। বাংলা একাডেমি অংশে অনুষ্ঠান মঞ্চ ও কিছু সরকারি স্টল ছাড়া বাকি সব কিছুই এবার স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। পরিসর বাড়ায়, মেলাটা একটা স্থানে নিয়ে আসায় সুবিধা হয়েছে ক্রেতা-পাঠকদের।
২০১৪ সালে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে অমর একুশে গ্রন্থমেলা স্থানান্তর হয় বাংলা একাডেমির পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ সিদ্ধান্ত যে যুক্তিসংগত ছিল, তা এখন প্রমাণিত। তখন প্রকাশক-পাঠকের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিস্তৃত পরিসরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বইমেলা স্থানান্তর করে আয়োজক বাংলা একাডেমি। পাঠকের চাহিদার কেন্দ্রে থাকা সৃজনশীল প্রকাশনাগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় উদ্যান অংশে।
উদ্যান অংশে স্থানান্তরিত মেলার প্রথম বছর শিশু চত্বর ছিল বাংলা একাডেমি অংশে। আর একাডেমির বহেড়াতলায় লিটল ম্যাগ কর্নার থেকে গেলেও শিশু চত্বর চলে যায় উদ্যান অংশে। এবার লিটল ম্যাগ কর্নারও চলে গেছে উদ্যান অংশে। সে অর্থে এবার গ্রন্থমেলা পরিপূর্ণ মেলার রূপ পেল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। অল্প কিছু সরকারি স্টল ও প্যাভিলিয়ন বাদ দিলে পুরো মেলা এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ফলে দুই অংশের বিড়ম্বনা থেকে এবার রেহাই পেল বইপ্রেমী মানুষ।
কী আছে বইমেলায়? শুধুই বই। স্টল-প্যাভিলিয়ন ভরা বই। তাই বলে মেলায় শুধুই কি বইয়ের বিকিকিনি? না। অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুধু বই বিকিকিনির মেলা নয়। মেলা ঘিরে জমে ওঠে লেখক, প্রকাশক, পাঠকের প্রাণবন্ত আড্ডা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে যেমন অনেকে মেলায় আসেন, বিদেশ থেকেও অনেকে এই মেলা কেন্দ্র করে দেশে ফেরেন। গ্রন্থমেলায় এদের সবার সরব উপস্থিতি মেলাকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
এর মধ্যে মেলায় সর্বাধিক চোখে পড়ে তারুণ্যের উপস্থিতি। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী ছুটে আসেন প্রাণের বইমেলায়। তরুণ-তরুণীরা দলবেঁধে বইমেলায় আসছেন, জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। বইও কিনছেন। তরুণদের মধ্যে যাঁরা সত্যিকার পাঠক, তাঁদের অনেকে প্রায় প্রতিদিন আসছেন মেলায়। প্রকাশকরা জানান, প্রতিদিনই বাড়ছে তরুণ পাঠকের সংখ্যা।