বাংলাদেশের বহুল আলোচিত মাদ্রাসা-ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৭ মাস পর আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯ রায় প্রদান করা হয়। ফেনী জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ আজ এই রায় ঘোষণা করেন। অভিযুক্ত ১৬ জন আসামীর সবাইকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে।
এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ২১ ব্যক্তিকে। তাদের মধ্যে ৫ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আসামীদের মধ্যে ১২ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর রায়ের দিন নির্ধারণ করে আদালত।
The mastermind, Sonagazi Islamia Senior Fazil Madrasa principal Siraj Ud Doula gave instructions from jail. Source: prothomalo.com
আসামীদের নাম ও পরিচয়
ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা (৫৭), মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন (৫৫), সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম ওরফে মাকসুদ কাউন্সিলর (৫০), নূর উদ্দিন (২০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ (১৯), আবছার উদ্দিন (৩৩), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), শাহাদত হোসেন শামীম (২০), মোহাম্মদ শামীম (২০), মহিউদ্দিন শাকিল (২০), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), কামরুন নাহার মনি (১৯), অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা (১৯)।
নুসরাতকে হত্যার কারণ
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে সোনাগাজী থানায় নুসরাত জাহান রাফির শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন তার মা শিরিন আক্তার। গত ২৭ মার্চ ২০১৯ দায়ের করা ঐ মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর থেকেই নুসরাত এবং তার পরিবারের উপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় গেলে কৌশলে তাকে ভবনটির চার তলায় ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানো হয়। মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে, এ রকম সংবাদ দিলে তিনি ওই ভবনের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তাকে বেধে ফেলে এবং গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। ঢাকার ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ জন ব্যক্তি পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড সমাধা করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাকির হোসেন এসবিএস বাংলাকে বলেন, যেখানে মানুষকে কুরআন, হাদীস ও ধর্মীয় বিষয়াদি শিক্ষা দেওয়া হয়, সেই মাদ্রাসাতে নিগ্রহের শিকার হয়ে অবশেষে মৃত্যুমুখে পতিত হলেন নুসরাত।
তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের অপরাধের দ্রুত বিচার হলে অপরাধীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর আগে চিন্তা করবে।”
এই মামলার রায় হতে সময় লেগেছে সাত মাসেরও কম। মাত্র ৬১ কার্যদিবস শুনানির পর এ রায় ঘোষণা করা হলো। এ বিষয়টিকেও ইতিবাচকভাবে দেখছেন প্রফেসর মোহাম্মদ জাকির হোসেন।