বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয় গত রবিবার রাতে। বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক এই ছাত্রকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয় বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে অভিযোগ উঠেছে।
আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জড়িতদের ধরা হয়েছে, অপরাধীদের শাস্তি হবে, তারপরও আন্দোলন কেন?
এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,
“আমি যখনই বুয়েটের খবর পেয়েছি, সাথে সাথে পুলিশকে বলেছি আলামত সংগ্রহ করতে এবং সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে। এরপর আমি দাবির অপেক্ষা করি নাই, পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে।”
“অপরাধ অপরাধই, যারা অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা আমি মেনে নেব না। আমি সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগকে ডেকেছি। তাদের বহিষ্কার করতে বলেছি, পুলিশকে বলেছি অ্যারেস্ট করতে।”
“যে মা-বাবা সন্তান হারিয়েছেন, তাদের যে কষ্টটা কী সেটা আমি বুঝি। একটা সাধারণ পরিবারের ছেলে, একটা ব্রিলিয়ান্ট ছেলে, তাকে কেন হত্যা করা হলো? এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। কোনও দল-টল বলে আমি মানি না।”
হত্যা তদন্তে মামলা, গ্রেপ্তার
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহর করা হত্যামামলায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলেন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম, ইফতি মোশারফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমান, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান, আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।
এদের মধ্যে ১২ জন এজাহারভুক্ত আসামি। এদের মধ্যে প্রথম স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বুয়েটের বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইফতি মোশাররফ। তিনি বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। মামলার ১৯ জন আসামির মধ্যে সাতজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র যত দ্রুত সম্ভব দেওয়া হবে।
কেন এই হত্যাকাণ্ড?
সরকারের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী আবরার ফাহাদ। ঢাকার গণমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এর জন্যই তিনি সরকার-সমর্থক গোষ্ঠীর রোষাণলে পড়েন। আরও বলা হচ্ছে যে, তার সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতা ছিল। সেজন্য তাকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
https://www.facebook.com/plugins/post.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fabrarfahad225%2Fposts%2F970644499935903&width=500
বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি
আবরারের খুনের ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এই জের ধরে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। এ ছাড়া, সামাজিক-যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে প্রবল আলোড়ন তৈরি হয় এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরে। এসব দাবি মানা না হলে বুয়েটের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে তারা হুমকি দেয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি নুরুল হক ঢাকা থেকে প্রকাশিত -কে বলেন, এটা হলো সামগ্রিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের একটা কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা চলছে, সেখানে যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
BUET students take part in a protest and block road for four consecutive days to protest against the murder of Abrar Fahad in Dhaka, Bangladesh, 10 October 2019 Source: EPA
এদিকে, আবরার ফাহাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। গত বুধবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত আবরারের বাড়িতে না ঢুকে সামনের রাস্তা থেকে পুলিশ ও আওয়ামী-লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রহরায় দ্রুত চলে যান তিনি।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ঐ গ্রামে যান উপাচার্য। সেখানে আবরারের কবর জিয়ারত করেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। ভিসির গাড়িবহর চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের লাঠিচার্জে আবরারের মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী তমা গুরুতর আহত হয়েছে বলে রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে।উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের পদত্যাগের দাবি তুলছে বিভিন্ন মহল। তবে এসব পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। তিনি বলেন, পদত্যাগের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
Guard talk his mobile phone next to Abrar graffiti art is seen on the campus wall during the four consecutive days to protest against the murder of Abrar Fahad. Source: EPA
এদিকে আবরার হত্যার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার। ১০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক বিবৃতি দিয়েছেন তিনি।
Follow SBS Bangla on .