বাংলাদেশে গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে ইউনির্ভাসিটি অব ওয়েষ্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. উইলিয়াম এরসকিন, অস্ট্রেলিয়ার আর্ন্তজাতিক কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসিআইএআর এর ব্যবস্থাপক ড. এরিক হাটনার, এসিআইএআর এর দক্ষিণ এশিয়ার কো-অর্ডিনেটর ড. প্রতিভা সিং এবং ইউনির্ভাসিটি অব ওয়েষ্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার ড. এম, জি, নিয়োগী সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে এসিআইএআর এবং কেজিএফ এর আর্থ-সামাজিক সহায়তায় গত দুই বছরে ডাল ও গমের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রখ্যাত ডালশস্য বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. উইলিয়াম জানান, কাউপি বা ফেলন ডাল বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ডাল, যা প্রতিকূলতাসহিষ্ণু বলে গবেষণার ফলাফলে প্রতিয়মান হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় পৃথিবীর বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক কৃষি গবেষণা সংস্থা থেকে ৩৪৫টি ফেলন ডালের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরিশাল কেন্দ্রে গবেষণা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, খুব সহসাই প্রতিক‚লতাসহিষ্ণ ও উচ্চ ফলনশীল ২-৩ টি ফেলন ডালের জাত বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হবে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণ গবেষণার আওতায় বারি সিডার মেশিন মুগডাল চাষাবাদে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। শুধুমাত্র সিডার মেশিন দিয়ে মুগডাল চাষাবাদে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কমছে, অন্য দিকে ডালের ফলন বাড়ছে।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের পরিবর্তে জানুয়ারী মাসে মুগ ডালের বীজ বপন করতে পারলে কৃষক পরিবার কম করে হলেও একবার বেশি ছেই বা পড তুলতে পারছে। এতে কৃষক ফলন বেশি পাচ্ছে এবং বৃষ্টির হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে পারছে।
এছাড়াও জলাবদ্ধতাসহিষ্ণ খেসারী ডাল চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের উপর গবেষণা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে খেসারী ডাল চাষাবাদ কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হবে এবং উপকূল অঞ্চলের কৃষক কাংখিত ফলন ঘরে তুলতে পারবে।
গম গবেষণার অগ্রগতি বিষয়ে ড. এম, জি, নিয়োগী জানান, বাংলাদেশ থেকে ১৫০টি গমের জেনোটাইপ লবণাক্ততা সহনশীল মাত্রা পরিমাপের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সিএসআইআরও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া উপকূল অঞ্চলে শুস্ক মৌসুমে কয়রা এবং দাকোপের মত অপেক্ষাকৃত বেশী লবণাক্ততা সমৃদ্ধ পতিত জমিতে গম চাষের লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় গমের দেশী- বিদেশী ২৪টি জেনোটাইপ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা ২-৩টি জাতকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন, যেগুলো দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে ভাল ফলন দিতে সক্ষম।
প্রতিনিধিরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। এই আগাম বৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিক‚লতাসহিষ্ণ গমের জাত দক্ষিণাঞ্চলের পতিত জমিতে লাভজনক গম উৎপাদন সম্ভব।
ড. হাটনার এবং ড. প্রতিভা সিং বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে এসিআইএআর এর বর্তমান ভূমিকা এবং ভবিষৎতের কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করেন। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, লবণাক্ত জমির ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি সুরক্ষায় এসিআইএআর এখন কাজ করছে। আগামী দশ বছরে বাংলাদেশে কি ধরনের কর্ম পরিকল্পনা এসিআইএআর গ্রহন করতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। প্রতিনিধিরা আগামী নভেম্বর মাসে এ সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকায় একটি কর্মশালা আয়োজনে কৃষি মন্ত্রীর সহযোগীতা কামনা করেন।
বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধানের উৎপাদন হচ্ছে। সরকার ধান উৎপাদনের পাশাপাশি অন্যান্য ফসল যেমন ডাল, গম, ভুট্টা, তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনে কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে। এসিআইএআর এর বর্তমান কার্যক্রম বাংলাদেশ সরকারের চিন্তা এবং কর্মপন্থার সাথে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ। এজন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং অস্ট্রেলিয়ার এ ধরনের কার্যক্রমকে সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দেন।