বাংলাদেশের ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা ও আওয়ামী লীগের দু’জন স্থানীয় নেতাসহ মোট ১৬ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের সবাইকে আসামি করে আদালতে জমা দেওয়ার জন্য অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আজ বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। এতে প্রত্যেক আসামির মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে। আর, অধ্যক্ষ সিরাজকে আসামি করা হয়েছে নুসরাতকে হত্যার ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে।
গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদর দপ্তরে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মামলার তদন্তকারী এই সংস্থাটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।
৭২২ পৃষ্ঠার এই চার্জশিটে ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর আসামিদের মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ১২ জন।
The mastermind, Sonagazi Islamia Senior Fazil Madrasa principal Siraj Ud Doula gave instructions from jail. Source: prothomalo.com
আসামীদের নাম ও পরিচয়
ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম, নূর উদ্দিন, জোবায়ের হোসেন, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, আফসার উদ্দিন, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, শাহাদত হোসেন শামীম, মোহাম্মদ শামীম, মহিউদ্দিন শাকিল, ইমরান হোসেন মামুন, হাফেজ আঃ কাদের, কামরুন নাহার মনি, অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা।
এই ১৬ জন আসামীর মধ্যে তিন জন নুসরাতের সহপাঠী ছিলেন। এরা হলেন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ও জাবেদ হোসেন।
এছাড়া, শাহাদাত হোসেন ও জোবায়ের আহমেদ এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে আসামিদের জবানবন্দি ও পিবিআইয়ের তদন্তে।
ঢাকার সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিবিআইয়ের প্রধান (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ঠান্ডা মাথায় এই হত্যায় চারটি শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছে। এরা হলো শিক্ষক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, স্থানীয় সরকার-প্রশাসন এবং শিক্ষার্থী।
খুনের পর নুসরাতের তিন সহপাঠী পরীক্ষার হলে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দেয়।
বনজ কুমার আরও বলেন, নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সরাসরি পাঁচজনের জড়িত থাকার বিষয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ১৬ জনের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আসামী করা হচ্ছে হুকুমদাতা হিসেবে। মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন এবং সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে পিবিআইয়ের চার্জশিটে।
Bangladeshi women held a protest rally of girl student Nusrat Jahan Rafi in Dhaka, following her murder by being set on fire. Source: Mamunur Rashid/NurPhoto via Getty Images
যেভাবে নুসরাতকে হত্যা করা হয়
অধ্যক্ষের দ্বারা নিপীড়নের ঘটনায় গত ২৭ মার্চ ২০১৯ নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য নুসরাতের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল।
গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় গেলে কৌশলে তাকে ভবনটির চার তলায় ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানো হয়। মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে, এ রকম সংবাদ দিলে তিনি ওই ভবনের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তাকে বেধে ফেলে এবং গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
ঢাকার ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ জন ব্যক্তি পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড সমাধা করে।