বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী পাওয়া গেছে, আতঙ্কে বাসিন্দারা

বাংলাদেশের কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রথম করোনাভাইরাস পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে। নোংরা, ঘনবসতিপূর্ণ ওই ক্যাম্পটিতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Rohingya refugees walk through one of the arterial roads at the Kutupalong refugee camp in Cox's Bazar, Bangladesh (AAP)

Rohingya refugees walk through one of the arterial roads at the Kutupalong refugee camp in Cox's Bazar, Bangladesh (AAP) Source: AAP

বাংলাদেশের কক্সবাজারের সুবিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একজন পুরুষ শরণার্থীর শরীরে COVID 19-এর উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই ক্যাম্পে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষের বসবাস।

স্বাস্হ্য বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছিলেন যে ঘনবসতিপূর্ণ এবং নিম্নমানের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে কক্সবাজার জেলার ওই ক্যাম্পটিতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রতিবেশী মায়ানমারের সেনা অভিযানের কারণে হতভাগ্য সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমরা প্রায় দুই বছর আগে সেখানে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা তাঁবু এবং বাঁশ দিয়ে তৈরী ঘরে মানবেতর দিন যাপন করছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য সমন্বয়ক আবু তোহা ভূইয়াঁ বলেন, প্রাথমিকভাবে দু'জন ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন পরে বলেছে একজন রোহিঙ্গা পুরুষ এবং ক্যাম্পের পাশে থাকা আরেকজন স্থানীয় ব্যক্তিকে করোনার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
WHO-এর মুখপাত্র ক্যাটালিন বেরকারও এএফপিকে বলেন, "একজন রোগী শরণার্থী শিবিরের এবং অন্যজন পাশের এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা।

মিস বেরকারও বলেন, রেপিড ইনভেস্টিগেশন টীমকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে ওই দু'জনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। রোগীদের যাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে প্রতিরোধ এবং রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
Rohingya refugees gather in Teknaf near Cox's Bazar, Bangladesh.
Rohingya refugees gather in Teknaf near Cox's Bazar, Bangladesh. Source: AP
দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

এপ্রিলের প্রথমদিকে কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার জেলা এবং আশেপাশের এলাকায় COVID 19 কেস পাওয়ার পর পুরো এলাকা লকডাউন করে দেয়।

এলাকাটিতে ১ মিলিয়ন শরণার্থীসহ প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন মানুষের বাস করছে। বাংলাদেশ ওই ক্যাম্পটি থেকে গাড়ি বের হওয়া এবং ঢোকার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে এবং সাহায্য সংস্থ্যাগুলোর কর্মীদের উপস্থিতি ৮০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছে। 

কিন্তু একজন জ্যেষ্ঠ্য মার্কিন কর্মকর্তা ওই ক্যাম্পটি পরিদর্শন করে বলেছেন সেখানে ভাইরাস পৌঁছানো শুধু সময়ের ব্যাপার।

ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রীডমের অ্যাম্বাসেডর-এট-লার্জ মিঃ ব্রাউনব্যাক বলেন, "শরণার্থী শিবিরটি অবিশ্বাস্য রকমের ঘনবসতিপূর্ণ। COVID ভাইরাস সেখানে দুৰ্ভাগ্যবশতঃ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। "

তিনি শরণার্থীদের বাংলাদেশের স্বাগত জানানোর বিষয়টির প্রশংসা করেন, সরকারের সীমিত সম্পদের বিষয়টিও জানেন, কিন্তু সেখানে যথেষ্ট স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ না থাকা এবং ক্যাম্পের ভেতর ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করার বিষয়টির ব্যাপারে সতর্ক করেন।

মিঃ ব্রাউনব্যাক ওয়াশিংটনে রিপোর্টারদের বলেন, "আমি বাংলাদেশ সরকারকে সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার আহবান জানাচ্ছি। এটা সেখানে না থাকার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। "

তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়েও নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তিনি বলেন, সেখানে মিলিটারি 'ব্যাপকভাবে, পরিকল্পিত উপায়ে' এমন নীতি গ্রহণ করেছে যাতে রোহিঙ্গারা কোন স্বাস্থ্যসেবা নিতে না পারে। বৌদ্ধ সংখ্যাগুরুর দেশটি রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিকই ভাবে না।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থ্যা এবং সাহায্য কর্মীরা বলেছেন, শরণার্থী ক্যাম্পে ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে, এরপর থেকে বাসিন্দারা আগের চেয়ে আরো বেশি ভুল তথ্য পাচ্ছেন।

রেফিউজি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র মানবাধিকার এডভোকেট ড্যানিয়েল সুলিভান বলেন, COVID 19 কেস হয়ে উঠেছে 'দুঃস্বপ্নের চিত্র'।

তিনি বলেন, "সেখানে গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে COVID 19 হলে আর রক্ষা নেই, অথবা যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে তারাই শুধু নিরাপদে থাকবে। সেখানে ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা এবং রোগটির বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুক্ত আলোচনা খুবই জরুরি।"
Water and sanitation facilities built by MSF in Jamtoli camp for Rohingya refugees, Cox’s Bazar, Bangladesh.
Water and sanitation facilities built by MSF in Jamtoli camp for Rohingya refugees, Cox’s Bazar, Bangladesh. Source: Anthony Kwan/MSF
'হাজার হাজার' মানুষ মারা যেতে পারে

চ্যারিটি সংস্থা সেভ দা চিলড্রেন সেখানে কাজ করছে, তারা বলছে মহামারীর ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে রোহিঙ্গারা আসলে কত অসহায়।

সংস্থাটির বাংলাদেশ হেলথ ডিরেক্টর শামীম জাহান এক বিবৃতিতে বলেন, "এখন ভাইরাস কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে ঢুকে পড়েছে, যার প্রেক্ষিতে আমরা সত্যিকার অর্থে আশংকা করছি COVID 19-এ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।"

মিঃ জাহান বলেন, "রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এই মুহূর্তে কোন ইনটেনসিভ কেয়ার ব্যবস্থা নেই।"

বাংলাদেশে প্রথম নভেল করোনা ভাইরাসের রোগী পাওয়া গিয়েছিলো মার্চের শুরুতে, এবং এরপর থেকে এর প্রাদুর্ভাব শুধু বেড়েই চলেছে, এখনো পর্যন্ত ২৮৩ জন মারা গেছেন এবং প্রায় ২০,০০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রকৃত অবস্থার তুলনায় এই সংখ্যাটি কম করে দেখানো হচ্ছে।

সরকার গত ২৬শে মার্চ থেকে সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে যাতে রোগটির বিস্তার ঠেকানো যায়।

কিন্তু এরপরেও সাম্প্রতিক সময়ে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং মৃত্যু ও সংক্রমণ সংখ্যা প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

মায়ানমার মিলিটারির নৃশংস অভিযানে প্রায় ৭৪০,০০০ রোহিঙ্গা পার্শবর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে কক্সবাজারের ভীষণ অপরিচ্ছন্ন শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়, যেখানে আগে থেকেই আরো ২০০,০০০ রোহিঙ্গা বাস করে আসছিলো।

আরো পড়ুন:



Share
Published 15 May 2020 4:36pm
Presented by Shahan Alam
Source: SBS

Share this with family and friends