চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন গত মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ঢাকার গবেষণাগারে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পুরো কাজ হয়েছে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে আগেই করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করলেও এবার বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচিত হলো।এর ফলে ভাইরাসটির জীবনকাল, গতি-বিধি, আক্রমণের ধরন ইত্যাদি জানা সহজ হবে।
জিআইএসএইডের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, গতকাল শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহার নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সিকোয়েন্সটি জমা দিয়েছেন সেঁজুতি সাহা। প্রতিষ্ঠানটির অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা ড. সমীর সাহার মেয়ে। এই গবেষণায় তার সঙ্গী ছিলেন রলি মালাকার, সাইফুল ইসলাম সজীব, হাসানুজ্জামান, হাফিজুর রহমান, শাহিদুল ইসলাম, জাবেদ বি আহমেদ ও মাকসুদ ইসলাম। গত ১৮ এপ্রিল এই গবেষণা দলটি ২২ বছর বয়সী এক নারীর কাছ থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে।
সিএইচআরএফের নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা ঢাকার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের জিনম সিকোয়েন্স বাংলাদেশেও উন্মোচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো এ ধরনের গবেষণার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। কারণ এ ধরনের ভাইরাসের জিনম সিকোয়েন্সিং বেশ জটিল। কিন্তু তাঁদের গবেষক দল এটি খুব সহজভাবেই করেছে। তিনি বলেছেন, আরও ৫০ থেকে ১০০টি সিকোয়েন্স করলে বোঝা যাবে আমাদের দেশে কোন স্ট্রেইন (ধরন) সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এবং সেটা কতটা মারাত্মক।
এর ফলে বাংলাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ, বিস্তার, আচরণ এবং এর অভিযোজনের ধরনগুলোও জানা যাবে। একই সঙ্গে জিনম সিকোয়েন্সিংয়ের ফলে ভবিষ্যতে এই ভাইরাস প্রতিরোধে যে ধরনের ভ্যাকসিন আসবে সেগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটা কার্যকর এবং সেগুলো কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে কিনা তাও সহজে নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
জিনোম হলো প্রাণী বা উদ্ভিদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস বা নকশা। কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জিনোমে নিউক্লিওটাইডগুলো কীভাবে বিন্যস্ত আছে তার লিপিবদ্ধ করাকে বলে জিনোম সিকোয়েন্সিং। এই নকশার ওপরই নির্ভর করে ওই প্রাণি বা উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য।
সাধারণত ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং করা কিছুটা দুঃসাধ্য। সেখানে নভেল করোনাভাইরাসের মতো একটি সংক্রমণশীল ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং করা খুবই কঠিন।
চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করে মেটাজিনোমিক সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজটি সম্পন্ন করেছে। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন বলছে, খুব শিগগিরই বাংলাদেশের আরও কিছু স্থানের নমুনা থেকে আরও কিছু ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং করতে সক্ষম হবে তারা, যা ভাইরাসটির উৎপত্তি, গতি প্রকৃতি বুঝতে ও প্রতিরোধের উপায় খুঁজতে সহায়তা করবে।
এর আগে বাংলাদেশি গবেষকরা পাট, ছাগল ও মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন করে সফলতা দেখিয়েছিলেন।