ভারপ্রাপ্ত ইমিগ্র্যাশন মিনিস্টার এলান টাজ বলেছেন অস্থায়ী ভিসাধারীদের অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসার জন্য করোনাভাইরাস-জনিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই; যদিও তারা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে গিয়ে ফিরে আসতে না পেরে সরকারের কাছে ফেরার আবেদন জানিয়েছেন।
গত ২০ মার্চ থেকে সরকার করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে, এতে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক নয় এমন শত শত দক্ষ শ্রমিক এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ার বাইরে আটকা পড়েছেন। কেউ কেউ বিশেষ কারণে ফেরার অনুমোদন পেয়েছেন।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন এমন অস্থায়ী ভিসাধারীরা এসবিএস নিউজকে বলেন, এই মহামারী শুরুর আগে গত বেশ কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া হয়ে উঠেছিল তাদের ঘর-বাড়ি, এসত্বেও মানবিক বিবেচনাতেও তাদের অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
অস্থায়ী ভিসাধারীদের তাদের ঘর ও পরিবার এবং কাজে ফিরিয়ে নিতে ফেডারেল পার্লামেন্টে ১২,০০০ ব্যক্তির একটি পিটিশন জমা পড়েছে।
কিন্তু মিঃ টাজ বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এবং পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট ছাড়া আর বাকি সবার জন্যই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সীমান্ত বন্ধ থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, "এ মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সীমান্ত জোরদার করা।"
"পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে।"
লুসি ক্রিস্প এবং তার পার্টনার মাইকেল ফ্ল্যাহেরটি মহামারী শুরু হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় আর ফিরতে পারছিলেন না।
ইউকে সিটিজেন মিস ক্রিস্প (২৭) প্রথম এই পিটিশনটি শুরু করেছিলেন, তিনি ও তার পার্টনার গত পাঁচ বছর ধরে মেলবোর্নে বাস করছিলেন, তিনি ৪৫৭ স্কীলড শর্টেজ ভিসায় কাজ করছিলেন।
এই যুগল যুক্তরাজ্যে তাদের পরিবারকে দেখতে দু'সপ্তাহের জন্য গিয়েছিলেন, আর তখনি সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা এসেছে। কিন্তু এটি কার্যকর হওয়ার আগে তারা অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসার কোন ফ্লাইট পেতে ব্যর্থ হন।
প্ৰায় দু'মাস দেনদরবারের পর তারা অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসার অনুমোদন পান।
তিনি এসবিএস নিউজকে বলেন, "আমরা বাড়ি ফিরতে যা যা করার প্রয়োজন তাই করেছিলাম। অস্ট্রেলিয়ায় বাস করতে আমরা বেশ বড় ধরণের অঙ্গীকার করেছিলাম।"
মিস ক্রিস্প বলেন, অষ্ট্রেলিয়ায় ফিরতে তারা বেশ কতগুলো আবেদন করেছেন মানবিক বিবেচনা থেকে, তাদের পেশা, এপার্টমেন্ট এবং একটি পোষা কুকুর থাকার পরও প্রাথমিকভাবে তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।
তিনি বলেন, "যতবার আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়ে ইমেইল আসতো তখন আমাদের মনে হতো কবে এই দুঃস্বপ্ন দূর হবে এবং কখন আমরা ঘরে ফিরতে পারবো।"
বেশ কিছু অস্থায়ী ভিসাধারীরা এই অবস্থায় তারা তাদের পার্টনারদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন, তাদের আবেদনও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
গ্রিন ডেপুটি লিডার নিক ম্যাককিম গত বুধবার রাতে সিনেটে একটি পার্লামেন্টারি পিটিশন দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন, হাজার হাজার অস্থায়ী ভিসাধারীরা বিদেশে গিয়ে ফিরতে পারছেন না, তারা অনেকেই অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করেন এবং ট্যাক্স দেন। তারা তাদের পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গেছেন।
তিনি সিনেটে বলেন, "অন্তত যাদের এখানে পরিবার আছে, চাকরি আছে এবং বাড়ি আছে তাদের ফিরে আসতে দিতে হবে।"
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কারা কারা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন এ সংক্রান্ত কোন মানদণ্ড না থাকার মানে হচ্ছে অনেক মানুষই তাদের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছেন।
"অনেক মানুষই বুঝতে পারছেন না কেন তাদের ভ্রমণ বাতিল করা হলো।"
মিঃ টাজ বলেন, বর্ডার ফোর্স কমিশনারের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে এক্সেম্পশন দেয়ার ক্ষমতা আছে যদি কারণগুলো ব্যতিক্রমী হয়। কিন্তু বর্তমান ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরো বেশ কিছুদিন থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
তিনি সরকারের সীমান্ত নিরাপদ রাখার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেন, মহামারীকালীন দুই-তৃতীয়াংশ করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে বিদেশ থেকে আগতদের দ্বারা।
তিনি বলেন, "যদি ভ্যাকসিন পাওয়া যায় তবে সমীকরণ পরিবর্তন হয়ে যাবে, তবে সীমান্তকে নিরাপদ রাখাই আমাদের সবচেয়ে বড়ো অগ্রাধিকার।"
এ মাসের শুরুর দিকে বর্ডার ফোর্স কমিশনার মাইকেল উট্রাম COVID-19 সিনেট এনকোয়ারিতে সরকারকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে এক্সেম্পশন দেয়ার বিষয়ে একটি মানদণ্ড নির্ধারণে চাপ দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, এই সব আবেদন প্রক্রিয়াকরণে 'নো ফ্যাক্টর ওয়েইটেড স্কোরিং মডেল' বা কিসের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে সেরকম কোন দিক নির্দেশনা না থাকায় প্রতিটি আবেদনই মূল্যায়ন করতে 'বেগ পেতে' হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ান বর্ডার ফোর্স গত ৫ মে পর্যন্ত ১১৭০টি এরকম আবেদন অনুমোদন দিয়েছেন এবং ২২০টি প্রত্যাখ্যান করেছে।
রেস্ট্রিকশন শিথিল করতে ফেডারেল সরকারের যে রোডম্যাপ আছে তাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জুলাই থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে অনুমোদন দেয়া হবে।
কিন্তু অস্থায়ী ভিসাধারীরা বলছেন অস্ট্রেলিয়ায় কখন তারা ফিরতে পারবেন এ বিষয়ে নিশ্চয়তা পেতে তারা ভীষণ উদগ্রীব।
মিঃ টাজ বলেন, আবেদনকারীরা ইমিগ্র্যাশন বিভাগে যোগাযোগ করতে পারেন যদি তারা মনে করেন তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে এক্সেম্পশন পাওয়ার যথেষ্ট যুক্তি আছে।
আরো পড়ুন:
READ MORE
কোভিড-১৯ বদলে দিয়েছে মানুষের জীবন