অনেকেই করোনা ভাইরাসের জন্য চীনা নাগরিকদের দায়ী করে তাদের খাদ্যাভ্যাস বা লাইফস্টাইল নিয়ে দায়িত্বহীন ও ঘৃণাপূর্ণ তথ্য বিশ্লেষণ ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড চাইনিজ ইউনাইটেড কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল মাইকেল মা বলেন, করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে চাইনিজ অস্ট্রেলিয়ান এবং চাইনিজ নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ সহ্য করা হবে না।
মিঃ মা বলেন, ভাইরাস কেন্দ্রিক ভীতি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে বৈষম্যমূলক ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি বলেন, "এটা একটা ভাইরাস, যাকে আমরা করোনা ভাইরাস বলি, 'চায়না ভাইরাস' নয়। আমরা ভাইরাসকে আলাদা করতে চাই, চাইনিজদের নয়। তাই এটিকে কেন্দ্র করে যে কোন ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা করছি।"
তবে সামাজিক মাধ্যমে অতি উৎসাহমূলক বর্ণবাদী পোস্টের কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। এই আচরণ বর্ণবাদী এবং ঘৃণাপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
বিশিষ্ট কলামিষ্ট-লেখক-গবেষক আলতাফ পারভেজ এক ফেইসবুক পোস্টে লিখছেন, "চীনে যে ভাইরাসের উৎপত্তি তা বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোন স্থানে হতে পারতো। জাইকা, ইবোলাসহ নানান ভাইরাসের কাহিনী নিশ্চয়ই আমাদের স্মরণ আছে। ফলে করোনা বিপর্যয় নিয়ে দায়িত্বহীন ও ঘৃণাপূর্ণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ না ছড়িয়ে দেশটির মানুষের পাশে থাকা দরকার।
চীনের নাগরিকমাত্রই এই স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের জন্য দায়ী নয়। সুতরাং জাতিহিসেবে চীনাদের বিরুদ্ধে নানান অসত্য সংবাদ ছড়িয়ে সামাজিক ঘৃণা উস্কে দেয়া অন্যায় হবে। বরং তাদের মানসিক ও বস্তুগত সংহতি দরকার এমুহূর্তে।"
সেই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন চীনের ‘উন্নয়ন মডেল’ এবং দেশটির মানবাধিকার ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার রেকর্ড নিয়ে বিতর্ক ও আপত্তি আছে অনেকের। সেটা ন্যায্য।...... কিন্তু সেই আপত্তি ও লড়াইকে আমরা যেন করোণা সংকটের সঙ্গে একাকার করে না ফেলি।"ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন সিডনির পিএইচডি গবেষক মোস্তফা মাহমুদ আলম এ বিষয়ে এসবিএস বাংলাকে বলেন, " বিষয়টিকে কেন্দ্র করে পুরো একটা জাতিকে রিলেট করা এবং জেনারালাইজ করা, নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট তৈরী করা খুবই দুঃখজনক। এখন সময় হচ্ছে, যে ভাইরাসের কথা বলা হচ্ছে সেটাকে মানবিকতার সাথে মোকাবেলা করা।"
লেখক-গবেষক আলতাফ পারভেজের ফেইসবুক পোস্ট থেকে Source: Altaf Parvez/ Facebook
তিনি বলেন, করোনা ইস্যুকে কেন্দ্র করে রোগ নির্ণয়, সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে আরো অধিক গবেষণা হতে পারে, কিন্তু এটা কোন বিশেষ জাতির সমস্যা নয়, এর দায় নির্দিষ্ট কোন জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া কোন ভাবেই কাম্য নয়।
মেলবোর্নের সিটি অফ বোরনডারায় কর্মরত জুবাইদুল জেকব বলেন, " এটা সত্যি যে চাইনিজদের খাদ্যাভ্যাস কিছুটা ভিন্ন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে কারণেই ভাইরাস ছড়াচ্ছে, কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না যে এটা নির্দিষ্ট কোন সোর্স থেকে এসেছে। কিছুদিন আগেও সোয়াইন ফ্লুয়ের কথা শোনা গেছে, তখন তো এরকম কিছু দেখিনি। যারা সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য জায়গায় বিষয়টি নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্য করছেন, পোস্ট দিচ্ছেন, আমার চোখেও পড়েছে, তা খুবই দুঃখজনক।"
তবে তিনি বলেন, চীন অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগামী হওয়া সত্ত্বেও তাদের হেলথ স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে প্রশ্ন আছে। চীনে ফুড স্ট্যান্ডার্ড রক্ষায় যথেষ্ট পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে কথা বলা যায়।
"কিন্তু তারা কি খাচ্ছে, সে বিষয়ে বলবো জাতিগোষ্ঠী বা সমাজ ভেদে খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন হতেই পারে, যেমন আমরা বাংলাদেশিরাও মিঠা পানির মাছ খাই; তাই অন্য দেশের নাগরিকরা কি খায় তার সাথে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার গল্প জুড়ে দেয়ার কোন কারণ নেই, এটা নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করা বর্ণবাদীতার পর্যায়ে পড়ে।"
আরো পড়ুন: