ল্যাবরেটরিতে ভয়ানক করোনাভাইরাসের রেপ্লিকেট বা অনুলিপি বানাতে সমর্থ হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানিরা। নতুন এই ভাইরাসটি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে কাজে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
চীনের বাইরে অস্ট্রেলিয়াই প্রথম দেশ যারা এ কাজে সফল হলো। মেলবোর্নের পিটার ডোহার্টি ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটির একদল গবেষক এক্ষেত্রে সফল হলেন।
সংক্রামিত একজন রোগীর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ল্যাবোরেটরিতে এই ভাইরাসটি বানানো হয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস যথাযথভাবে ডায়াগনসিস করার ক্ষেত্রে এটি কাজে লাগবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কর্মরত ইওরোপের এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এই ফলাফল শেয়ার করা হবে।
এছাড়া, পরীক্ষামূলক প্রতিষেধকের কার্যকারিতাও এর মাধ্যমে নিরূপণ করা হবে।
নতুন করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স প্রকাশ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। গত ডিসেম্বরে এই ভাইরাসটির প্রাদূর্ভাব দেখা যায় চীনের হুবেই প্রদেশে।
মেলবোর্নের পিটার ডোহার্টি ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি ল্যাবরেটরির প্রধান ড. জুলিয়ান ড্রুস বলেন, ডায়াগনসিসের ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি অনেক কাজে আসবে। গত বুধবার তিনি বলেন,
“আসল ভাইরাসটি পাওয়ার অর্থ হলো আমরা এখন যাবতীয় পরীক্ষণ-পদ্ধতি সত্যিকারভাবে নিরূপণ ও পরীক্ষা করতে পারবো এবং বিভিন্ন ফলাফল যাচাই ও তুলনা করে দেখতে পারবো।”
যে-সব রোগির দেহে এই ভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ দেখা দেয় নি এবং যারা জানেন না যে তারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে তাদের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মেলবোর্নের পিটার ডোহার্টি ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি ল্যাবের ডেপুটি ডাইরেক্টর ড. মাইক কেটন বলেন, এর ফলে ভাইরাসটি সনাক্ত করার ক্ষেত্রে আরও বাস্তবসম্মত চিত্র পাওয়া যাবে। তিনি বলেন,
“অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে আমরা সন্দেহভাজন রোগীর শরীরে এই ভাইরাস আছে কিনা তা নিরূপণে সক্ষম হবো। এভাবে আমরা এই ভাইরাসটি কতোটা বিস্তৃত সে সম্পর্কে আরও সঠিক চিত্র লাভ করবো। এর ফলে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এর সত্যিকারের মৃত্যুহারও জানা যাবে।”
অস্ট্রেলিয়ান চিফ মেডিকেল অফিসার প্রফেসর ব্রেন্ডান মারফি বলেন, নতুন এই ভাইরাসটির উদ্ভাবন তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত, বিভিন্ন টেস্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং অ্যান্টি-বডি টেস্টের জন্য।”
এবিসি রেডিও-কে তিনি বলেন,
“এটি অনেক তাৎপর্যবহ অগ্রগতি এবং এটি অনেক, অনেক ইতিবাচক।”করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা গবেষকরা।
Medical workers in Wuhan form an "assault team" to battle against the deadly coronavirus epidemic. Source: AAP
এ পর্যন্ত এতে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, চীনের মূল ভূখণ্ডে কমপক্ষে ৪,৫০০ ব্যক্তি এর দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে।
এই ভাইরাসটি ছড়ানো বন্ধ করতে এর প্রাদূর্ভাবের মূল কেন্দ্র চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরটিকে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য শহরগুলো থেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে চীন কর্তৃপক্ষ।
অস্ট্রেলিয়ায় এ পর্যন্ত পাঁচ ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে চার জনই নিউ সাউথ ওয়েলসের। এদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।