ভারতের আসামের নিষিদ্ধ বোরো গোষ্ঠী, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বোরোল্যান্ড তথা এনডিএফবি-এর সঙ্গে সরকারের সোমবার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছে্ন, এই চুক্তি অসমের বোরো অঞ্চলের উন্নতিতে সাহায্য করবে। এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক চুক্তি আখ্যা দিয়ে অমিত শাহ বলেছেন, এই চুক্তি স্থায়ী হতে চলেছে।
তিনি বলেছেন, চুক্তিটি করতে সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সমস্ত প্রতিশ্রুতি সময়মতো পূর্ণ করা হবে। এই চুক্তির ফলে আসামের বহু দশকের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটল।
আসামের মন্ত্রী ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপির প্রধানতম কৌশলী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, এই চুক্তির ফলে বোরো অধিবাসীদের সর্বাঙ্গীন উন্নতি নিশ্চিত হল এবং এই চুক্তি আসামের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখবে।
চুক্তির সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ত্রিপাক্ষিক চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল, এনডিএফবি ও এবিএসইউয়ের চারটি দল এবং কেন্দ্রের মধ্যে। অল বোরো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন-ও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। প্রসঙ্গত, তারাই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে।এই চুক্তি অনুযায়ী রাজ্যব্যাপী আন্দোলনে যারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে তাদের প্রতি সরকার সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে। আশা করা হচ্ছে ৩০ জানুয়ারি ১,৫০০-রও বেশি জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করবে। অমিত শাহ জানিয়েছেন, ওরা কেউ আর জঙ্গি নয়, সকলেই আমাদের ভাই। জানা গিয়েছে, যাদের রেকর্ড পরিষ্কার, তাদের আধাসেনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বোরো আন্দোলনে যাঁদের পরিবার প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। চুক্তি অনুযায়ী, যে অঞ্চলের নাম বিটিএডি ছিল, সেটির নতুন নাম হবে বোরোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অঞ্চল। কেন্দ্র আসামের পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী বোরো অধিবাসীদের পাহাড়ি উপজাতি বলে বর্ণনা করা হবে। সমগ্র আসামের সহযোগী সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হবে দেবনাগরী হরফের বোরো ভাষা।
Militants wait in queue to lay down their arms in a surrender ceremonery in Guwahati, Assam, India, 23 January 2020. Source: EPA
চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে আর্থিক প্যাকেজের কথাও। রাজ্য সরকার ৩ বছরের জন্য ২৫০ কোটি টাকা করে দেবে অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য। পাশাপাশি কেন্দ্রও সম পরিমাণ টাকা দেবে। সব মিলিয়ে ১৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। ওই টাকা অঞ্চলের শিল্পোন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরিতে বরাদ্দ করা হবে।
অন্যদিকে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সম্পূর্ণভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদে দুই কক্ষে আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতেই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সিএএ-র বিরুদ্ধে আনা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রস্তাবের জবাবে এমনটাই জানাল ভারত। সরকার আরও জানিয়েছে, কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয় সিএএ। প্রতিবেশী দেশগুলোর নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা এবং তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই এই আইন।রবিবার সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব হয় ইইউ। সিএএ নিয়ে ভারত সরকারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে ওই দিন ছ’টি খসড়া প্রস্তাব পেশ করে ইইউ-এর অধিকাংশ সদস্য। ৭৫১ সদস্যের মধ্যে ৬২৫ জনই সিএএ-র বিরোধিতা করেন। প্রস্তাবে সিএএ-কে বৈষম্যমূলক এবং ভয়ানক বিভাজনকারী বলেও উল্লেখ করা হয়। ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না করে, সঠিক পদক্ষেপ না করে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে ভারত সরকার। এটা কোনওভাবেই কাম্য নয়। শুধু তাই নয়, খসড়া প্রস্তাবে কাশ্মীর প্রসঙ্গটিও তুলে ধরে ভারত সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে।
Demonstrators during a protest against the Citizenship Amendment Bill (CAB) in Guwahati, Assam, India. Source: EPA
সিএএ-কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈষম্যমূলক আখ্যা দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত। ভারতের প্রতিক্রিয়া, এটা কোনও বৈষম্য নয়। ইউরোপও এমন পথে হেঁটেছে। তাই এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করার আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত বলেই জানিয়েছে ভারত। সামনেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে ভারতের যোগ দেওয়ার কথা। তার আগে সিএএ নিয়ে ইইউ সরব হয়েছে।