অস্ট্রেলিয়ার ‘গভহ্যাক’ () পিচিং দক্ষিণ গোলার্ধের সর্ববৃহৎ উন্মুক্ত ডাটা প্রযুক্তির প্রতিযোগিতা বলে মনে করা হয়, প্রতি বছর প্রায় এক হাজার প্রতিযোগী এতে অংশ নেয়। এই প্রতিযোগিতায় উদ্ভাবকদের উন্মুক্ত বিষয় নিয়ে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হয়। এবছরের থিম ছিল কভিড ১৯ এবং বুশফায়ার।
গত অগাস্ট মাসে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদের একটি দল, তাদের উদ্ভাবিত বিষয় হচ্ছে বুশফায়ারের সময় বাসিন্দাদের সতর্ক করতে । বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রযুক্তিবিদদের এই দলে আছেন ডাটা সায়েন্টিস্ট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, এবং বিশেষজ্ঞ গবেষক।
এই দলের সাথে আছেন রিসার্চ এন্ড ইভেলুয়েশন স্পেশালিষ্ট ডঃ সায়েম হুসেইন। তিনি জানান, প্রতিযোগিতার ফলাফল এখনো ঘোষণা হয়নি।
প্রতিযোগিতার বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়া প্রতি বছর গ্রীষ্মের শুষ্ক এবং তপ্ত আবহাওয়ায় বুশফায়ারের বিরাট ঝুঁকিতে পড়ে এবং ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আমরা তাই এমন একটি বিষয় বেছে নিয়েছি যাতে বৃহত্তর কমিউনিটি এতে লাভবান হয়।”
এই প্রকল্পটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমাদের জানামতে বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ানদের এমন উদ্যোগ বিরল।”
ইনস্ট্যান্ট ফায়ার এলার্ট সিস্টেম বা iFAS যেভাবে কাজ করবেঃ
ডঃ সায়েম হুসেইন জানান, এই সিস্টেমটি বুশফায়ারের ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের বিভিন্ন ধাপে সতর্ক করে দেবে। iFAS বনাঞ্চলগুলোতে এড-হক সেন্সর নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে এবং রিয়েল টাইম ডাটা সংগ্রহ করবে। এর মাধ্যমে ধোঁয়া, তাপ, বন্যপ্রাণীদের চলাচল, আর্দ্রতা, পারিপার্শ্বিক শব্দের উপাত্ত সংগ্রহ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিস্টেমটি গড়ে উঠবে। এভাবেই ফায়ার এলার্ট-এর বিভিন্ন স্টেজগুলোতে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হবে। এই দলের অন্যতম সদস্য তারেক জামান একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি GovHack সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারি ২০১৯ সালে যখন বোস্টনের এমআইটিতে একটি বুটক্যাম্পে অংশগ্রহণ করি। আমি নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি, বিশেষ করে যখন তা কমিউনিটির উপকারে আসে।”
অস্ট্রেলিয়ার ‘গভহ্যাক’ পিচিংয়ে বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের দল Source: Dr Sayem Hossain
এই দলের অপর সদস্য ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার ডঃ এহতেশাম হক বলেন, “গত বুশফায়ারের মৌসুমে বেশকিছু মৃতদেহ পুড়ে যাওয়া গাড়ীর মধ্যে পাওয়া যায়, অথচ তারা হাইওয়ে থেকে দূরে ছিল না। এই মর্মান্তিক ঘটনা থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি আমাদের এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে কোন কার্যকরী নোটিফিকেশান সিস্টেম নেই।”
তিনি বলেন, “আমি দেখলাম যে GovHack এমন একটি ন্যাশনাল প্লাটফর্ম যেখানে এই সমস্যাটি উত্থাপন করা হয়েছে। তাই আমি জাতীয় পর্যায়ে একটি উন্মুক্ত সমাধানের চিন্তা করেছিলাম, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ত্রুটিমুক্ত, তাৎক্ষনিক এবং কার্যকরী নোটিফিকেশান সিস্টেম গড়ে তোলা যায় কিনা।”
এই দলের আরেকজন সদস্য ডঃ শেখ মুস্তফা একজন ডাটা সায়েন্টিস্ট। তিনি এই পিচিং সম্পর্কে বলেন, “আমার প্রাথমিকভাবে মোটিভেশনটি ছিল সমমনা লোকদের সাথে উইকেন্ডে সময় কাটানো, যেখানে তারা বাস্তব সমস্যাগুলোর সমাধান বের করার উপায় খোঁজেন এবং অন্যদের সাথে তা শেয়ার করেন। এই প্রকল্পটি তাই আমার জন্য সামাজিকতার পাশাপাশি আইডিয়া উদ্ভাবনের সেশন।“
রিসার্চ এন্ড ইভেলুয়েশন স্পেশালিষ্ট ডঃ সায়েম হুসেইন এই প্রকল্পে তার ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, “গবেষণা করতে গিয়ে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিশীল উপায়ে সমাধান এবং উদ্যোগী ভূমিকা রাখার ব্যাপারটি সবসময় আমাকে প্রেরণা দেয়। তাই সুযোগ পেলেই নিজের মাথায় ঘুরতে থাকা আইডিয়া নিয়ে সমমনা লোকদের সাথে কথা বলি।”
তিনি বলেন, “আমি যখন আমার বন্ধু ডঃ মুস্তফার কাছে এমন একটি প্রতিযোগিতার কথা শুনলাম যেখানে আরও কয়েকজন একসাথে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে, তখন দ্বিতীয় কিছু না ভেবেই যোগ দিলাম। আমি ৪৮ ঘণ্টার একটি অতি উত্তেজনাকর সময়ের কথা বলতে চাই যেখানে অনেক মাথা খাটিয়ে আমরা একটা আইডিয়া বের করেছি এবং GovHack 2020 প্রতিযোগিতার জন্য একটি পিচ প্রস্তুত করেছি। পুরো প্রক্রিয়াটা আমি উপভোগ করেছি।“
ডঃ সায়েম হুসেইন তাদের এই প্রকল্প অস্ট্রেলিয়ার বুশফায়ার সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখবে বলে অত্যন্ত আশাবাদী।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রকল্পের বেশ কিছু অসাধারণ উপাদান আছে, এবং আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অস্ট্রেলিয়ার বুশফায়ার সংকট মোকাবেলা করতে এর বিরাট সম্ভাবনা আছে।”
এই প্রকল্পের সাথে আরও আছেন আহমেদ রিয়াদ হাসান যিনি পেশায় একজন মার্কেটিং ডাটা এনালিস্ট।
GovHack 2020 প্রতিযোগিতার ফলাফল সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ জানা যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ