অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং প্রকৃতির ক্ষতি বন্ধের 'জরুরী এবং দ্রুত পদক্ষেপের' এক নতুন বৈশ্বিক অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছে।
এই সপ্তাহের ইউএন সামিটের আগে ৬৪টি দেশের সরকার অঙ্গীকার করেছে যে তারা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ু দূষণ, মহাসাগরের প্লাষ্টিক বর্জ্য এবং আরো টেকসই খাদ্য চক্র গড়ে তুলবে।
কিন্তু মরিসন সরকার এই অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেনি, এই প্রস্তাব উপেক্ষা করে তাদের সাথে যোগ দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, চীন, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একজন মুখপাত্র এসবিএস নিউজকে বলেন, ফেডারেল সরকার ইতিমধ্যেই প্যারিস ক্লাইমেট এগ্রিমেন্টের অনুযায়ী একটি 'উচ্চাভিলাষী এবং অর্জনযোগ্য' লক্ষের জন্য কাজ করছে এবং জিরো কার্বন এমিসনের জন্য 'যতটা সম্ভব দ্রুত' লক্ষে পৌঁছে যাচ্ছে।
মুখপাত্র বলেন, "এখন আমরা আরেকটি লক্ষের জন্য চুক্তি করতে পারি না যতক্ষণ না অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের আমরা বলছি এই ব্যবস্থার জন্য আমাদের কতটা মূল্য দিতে হবে এবং কিভাবে তা আমরা অর্জন করবো।"
প্রধানমন্ত্রীর অফিস এসবিএস নিউজকে বলেছে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রীন এনার্জি'র জন্য ১৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করছে, এটা তাদের প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের রোডম্যাপ।
লিডার্স প্লেজ ফর নেচার -এর স্বাক্ষরকারীরা বলেন পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রকৃতির 'অপূরণীয় ক্ষতি' হয়ে যাচ্ছে, বাড়ছে অসাম্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, সেইসাথে ভবিষ্যতে কোবিদ ১৯-এর মত প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং মেক্সিকো আগামী বছরে চায়নার কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিতব্য UN COP15 বায়োডাইভার্সিটি কনফারেন্সের আগে একটি 'উচ্চাভিলাষী' পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য কাজ করছে।
ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার বরিস জনসন বলেন, "আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে এখনই - এক্ষুনি। আমরা আর আলস্য এবং বিলম্ব করতে পারবো না কারণ আজ আমরা জীববৈচিত্র্য হারাতে বসেছি এবং তা ভয়ংকর গতিতে ঘটে চলেছে।"
"আমরা যদি এটি প্রতিরোধ না করি এর পরিনাম আমাদের সবার জন্য ভয়াবহ।"
"সারা জীবনের জন্য আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো - তাই আমাদের এখনই কাজ করতে হবে।"
এই পরিকল্পনায় আছে ফসিল ফিউয়েলের ওপর 'ক্ষতিকর' ভর্তূকি প্রত্যাহার এবং বন, জলাশয় ও বৈশ্বিক ফার্মিং সিস্টেম পুনরায় ঢেলে সাজানো যাতে বন ধ্বংস এবং খাদ্য অপচয় কমানো সম্ভব হয়।
বর্তমানে বিশ্বে উৎপাদিত ১.৩ বিলিয়ন টন খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়।
এই মাসে প্রকাশিত WWF-এর দ্বিবার্ষিক লিভিং প্ল্যানেট ইনডেক্স অনুযায়ী ১৯৭০ সালের পর থেকে বন্যা পশুপাখি, মৎস এবং গাছগাছালির পরিমান ৭০ ভাগ কমে গেছে।
WWF ইন্টারন্যাশনাল ডিরেক্টর জেনারেল মার্কো লাম্বার্টিনি বলেন, "প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস এতই প্রকট যে এটি আমাদের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং জীবিকাকে বিরাট হুমকির মধ্যে ফেলেছে।"
"আমরা এটিকে আর এড়িয়ে যেতে পারি না, এবং আমাদের পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে।"
ইউএনের বৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষা পরিকল্পনার রিভিউ থেকে দেখা যায় যে দেশগুলো তাদের নেয়া ২০ টি লক্ষের সবকটিই অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, তারা প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধের ২০১০ সালের পর্যায়ে আছে, আর এর পরেই এই অঙ্গীকারের বিষয়টি উঠে এসেছে।
পোস্টডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট রিসার্চ-এর ডিরেক্টর এবং ইন্টারন্যাশনাল আর্থ কমিশনের কো-চেয়ার জোহান রকস্ট্রোম বলেন, "যে দুটো রিপোর্ট এই মাসে প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায় আমরা পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছি।"
"আমরা আমাদের সহনশীলতার জন্য সাধারণ বৈশ্বিক স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছি। এবং আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীল গ্রহ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছি।"
পরিবেশ কর্মীরা আশা করছেন প্রকৃতি রক্ষায় আগামী বছর প্যারিস-স্টাইলে একটি চুক্তি হবে, এতে বিভিন্ন দেশ একটি বৈশ্বিক কাঠামো দাঁড় করাবে যাতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কমানো এবং ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব হয়।
আরো দেখুন: