ক্রমবর্ধমান ইনফ্লেশন রেট বা মুদ্রাস্ফীতিও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় অবদান রাখছে। এর ফলে নিম্ন-আয়ের মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি ভুগছেন।
সম্প্রতি অ্যাংলিকেয়ার অস্ট্রেলিয়ার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ন্যূনতম মজুরি আয় করেন এরকম একজন পূর্ণ-কালীন কর্মরত মানুষের সপ্তাহের সব খরচ বাদে হাতে থাকে মাত্র ৫৭ ডলার।
অ্যাংলিকেয়ার অস্ট্রেলিয়ার নির্বাহী পরিচালক কেসি চেমবার্স বলেন, এই প্রথম তাদের সংস্থাটি ‘লিভিং কস্ট ইনডেক্স’ একত্র করেছে।
তিনি আরও বলেন, মহামারীর সময়ে যে কর্মীরা মানুষের সবচেয়ে বেশি সেবা দিয়েছে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনেক বেশি।
ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধের কারনে পেট্রোলসহ অন্যান্য জ্বালানী পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। যার প্রভাব এসে পড়ছে পরিবহন খাতে। আর সেখান থেকে দাম বাড়ছে সুপারমার্কেটের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেরও।
READ MORE
জীবনযাত্রার ব্যয় এতো বাড়ছে কেন?
মুদ্রাস্ফীতিকে কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া গত এক বছরে সুদের হার বেশ কয়েকবার বাড়িয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি কেনা মানুষেরা এর চাপ টের পাচ্ছে নিজের আর্থিক সামর্থ্যের ওপর। মর্টগেজ পরিশোধের ন্যুনতম কিস্তি বেড়ে যাওয়ার ফলে হিমশিম খাচ্ছে বাড়ির মালিকেরা। অনেক বাড়িওয়ালাই মর্টগেজের চাপ কমাতে বাড়ি-ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ওয়েলফেয়ার ও হাউজিং গ্রুপের জোট এভরিবডিস হোম-এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এসেনশিয়াল ওয়ার্কাররা নিজের মজুরির দুই-তৃতীয়াংশই খরচ করেন বাড়ি ভাড়ার পেছনে। সেই ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় চাপে রয়েছেন তারাও।
এদিকে নতুন অর্থ-বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকেই বিদ্যুৎ বিলের খরচ বেড়ে যাবে প্রায় ২৫ শতাংশ। ফেডারেল সরকার এর পেছনে দায়ী করছে মুদ্রাস্ফীতিকেই।
তবে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি আশা ব্যক্ত করছেন, সরকারের জ্বালানী মূল্যের উপরে ভর্তুকি দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জনসাধারণের উপরে চাপ অনেকটাই কমবে।
তিন বিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ান পরিবারগুলির উপর খরচের চাপ ৫০০ ডলার পর্যন্ত কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যদিও সরকারের অন্য একটি প্রস্তাব নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে। দ্য গ্রিনস ও কোয়ালিশন পার্টি সরকারের ১০ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবিত ‘হাউজিং অস্ট্রেলিয়া ফিউচার ফান্ড’ বিল সংসদে আটকে দিয়েছে। দুটি দলই এই বিল নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরেছে।
গ্রিনস দল বলছে, এই তহবিল ভাড়াটেদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হবে। আর কোয়ালিশন দল বলছে, এই প্রকল্পের ফলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।
যদিও হাউজিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনসহ আরও বেশ কয়েকটি সংস্থা সরকারের এই প্রকল্পকে সমর্থন জানিয়েছে।
টেনেন্টস ইউনিয়ন নিউ সাউথ ওয়েলস-এর সিইও লিও প্যাটারসন রস বলেন, এরকম তহবিলের পরিবর্তে সরকারের উচিৎ দীর্ঘমেয়াদী সমাধান বের করা।
তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়িত করতে হলে স্টেট ও টেরিটরির সরকারের সাথে মিলে ফেডারেল সরকারকে বাড়ি-ভাড়া সংক্রান্ত আইন ও প্রক্রিয়াগুলি ঢেলে সাজাতে হবে।
গ্রিনস দলের প্রস্তাবিত বাড়ি-ভাড়া নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি ফেডারেল সরকারের কাছে। তবে এটিকে ঢালাও সমাধান হিসেবে বিবেচনা না করার পরামর্শ দেন তিনি।
গ্রিনস ও কোয়ালিশনের এই বিলটি আটকে দেয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি এই বিলটির পক্ষে নিজের সমর্থন জানিয়েছেন।
এবিসি রেডিওকে তিনি বলেছেন, আবাসন খাতে বাড়ির সংকটকে উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই, তাই এই তহবিল জরুরি।
এদিকে মুদ্রাস্ফীতি সম্প্রতি আরও কমে শতকরা ৫.৬ এ এসে দাঁড়িয়েছে, যা হয়ত জনমনে স্বস্তি আনতে পারে। অনেকেই আশা করছে এর ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব অস্ট্রেলিয়া হয়ত সুদের হার বাড়ানো সাময়িকভাবে স্থগিত করবে। পর্যায়ক্রমে যা মর্টগেজ কিস্তি ও বাড়ি-ভাড়াকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে সহায়তা করবে।
সেই সাথে নতুন অর্থ বছর শুরুর সাথে সাথে সরকার ঘোষিত আরও কিছু পরিবর্তন হয়ত খানিকটা আশার আলো দেখাতে পারে অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে।
যেমন এই বছরে কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি বাড়বে ৫.৭৫ শতাংশ, সুপারঅ্যানুয়েশন ১০.৫ থেকে বেড়ে হবে ১১ শতাংশ।
বছরে ৮০ হাজার ডলারের কম আয়ের পরিবারগুলি তাদের চাইল্ড কেয়ার খরচের ৯০ শতাংশের জন্যে সরকারী ভর্তুকি পাবে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।