সবকিছু এত দামি হয়ে যাচ্ছে কেন?
সুপারমার্কেটে, কফি কেনার সময়, গাড়িতে পেট্রোল ভরা বা কোন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বুক করার চেষ্টা করার সময় আপনি হয়তো নিজেই নিজেকে ইদানিং জিজ্ঞাসা করেছেন এই প্রশ্নটি।
বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞরা অস্ট্রেলিয়ানদের সতর্ক করেছেন যে তাদের দৈনন্দিন জিনিসপত্রের জন্য আরও বেশি ব্যয় করতে হবে, কারণ জীবনযাত্রার খরচ এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
কিন্তু কেন এটি ঘটছে, কোন পণ্য কিনতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় এবং এজন্য কী করা যেতে পারে?
এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হল মুদ্রাস্ফীতি, কিন্তু ব্যাপারটি এত সহজ নয়।
এএমপি ক্যাপিটালের প্রধান অর্থনীতিবিদ শেন অলিভার বলছেন যে মুদ্রাস্ফীতির হার অস্ট্রেলিয়ার কোভিড -১৯ বিধিনিষেধ পরবর্তী বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্কিত।
তিনি বলছেন, এই মহামারী সত্যিই অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। আমরা সার্ভিসগুলিতে ব্যয় করতে পারিনি, আমরা বরং আমাদের সমস্ত অর্থ পণ্যের জন্য ব্যয় করেছি, যেমন গৃহস্থালী পন্য, নতুন গাড়ি বা নতুন নৌকা বা বাড়ির সংস্কার ইত্যাদি।
"দুর্ভাগ্যবশত, সেই পণ্যগুলির সরবরাহ কম ছিল। তাই চাহিদাও বেড়েছে, দামও বেড়েছে। এবং অবশ্যই, বিপদ হল যে এটি ১৯৭০ দশকের মন্দার মত হতে পারে এবং তা হলে পণ্যের দাম কমতে একটু সময় লাগবে।"
কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রাস্ফীতির হার গত এক বছরে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ৩.৫ শতাংশ বেড়েছে।
মিঃ অলিভার বলছেন প্রাথমিকভাবে মহামারীকে দায়ী করা হলেও, এখন রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণও একটি কারণ।
তিনি বলছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন বিশ্বের গম রপ্তানির ২৫ শতাংশের মতো উত্পাদন করে। রাশিয়া বিশ্বের তেলের ১১ শতাংশ বা তারও বেশি উত্পাদন করে। তাই নিষেধাজ্ঞার ফল হচ্ছে এই পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী আর পাওয়া যাচ্ছে না, তাই সরবরাহ কমে দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
গ্র্যাটান ইনস্টিটিউটের অর্থনৈতিক নীতি কর্মসূচির সিনিয়র সহযোগী, অ্যালেক্স ব্যালানটাইন বলছেন যে সরবরাহের ধাক্কা, পণ্যের স্বাভাবিক উত্পাদন এবং বিতরণে ব্যাঘাত ঘটেছে।
তিনি বলছেন, মহামারী, বন্যা, যুদ্ধ - মনে হবে বাইবেল পড়ার অনুভূতি - কিন্তু এই সবই পণ্য সরবরাহকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাই কোভিডের কারণে কারখানার উৎপাদন বন্ধ, শিপিংয়ের খরচ অনেক বেড়ে গেছে , কর্মী ঘাটতি, এই সমস্ত বিষয়গুলি বিভিন্ন ভাবে পণ্য সরবরাহ-চাহিদা প্রভাবিত করে, তাই দামও বেড়ে যায়।
মিঃ ব্যালানটাইন বলছেন যে সবকিছুর দাম বেশি হওয়ার আরো কারণ আছে।
"আমরা দৈনন্দিন জীবনের জন্য কিছু অপরিহার্য পণ্য সবসময়েই কিনি, তাই আমরা ওই বিশেষ পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি বুঝতে পারি।"
যে অপরিহার্য পণ্য বা সার্ভিসগুলো প্রভাবিত হচ্ছে তার মধ্যে আছে পেট্রোল, গ্রোসারি পণ্য, কফি এবং এমনকি আন্তর্জাতিক ভ্রমণও।
অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পেট্রোলিয়াম বলছে যে পেট্রোলের দাম গড়ে গত সপ্তাহে প্রতি লিটারে ১৪.৯ সেন্ট বেড়ে রেকর্ড ২১২.৫ সেন্ট পৌঁছেছে, এবং এটি ২১০.৪ সেন্ট থেকে ২১৪ সেন্টের মধ্যে উঠানামা করছে।
এবং অর্থনীতিবিদরা আশংকা করছেন দাম আরও বাড়তে পারে।
তেলের মূল্য বৃদ্ধি অনিবার্যভাবে যে কোন পণ্য ও সার্ভিস প্রভাবিত করে, যার মধ্যে ভ্রমণ একটি।
মিঃ ব্যালানটাইন বলছেন যে জ্বালানির দাম বাড়ার মানে হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের টিকেটের দাম বা শিপিং খরচও বাড়বে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাফে ওনার্স অ্যান্ড বারিস্টাস অ্যাসোসিয়েশন বলছে যে কোন কোন ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ানদের কফির জন্য ৭ ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে হতে পারে।
শিপিং কনটেইনার ঘাটতি এবং ফার্মারদের জন্য অমৌসুমি আবহাওয়া থেকে শুরু করে পরিবহন খরচ বৃদ্ধিই এর কারণ।
স্যাম গ্যাব্রিলিয়ানের মত স্থানীয় কফি রোস্টার এবং ক্যাফে মালিকরা বলছেন যে তারা ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে দাম বেশি রাখেননি, কিন্তু আগামী ছয় মাসে দাম আরও বাড়তে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে সরকার এ ব্যাপারে কী করছে?
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ানদের উপর দাম বৃদ্ধির চাপের বিষয়ে সচেতন কারণ তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলছেন, পেট্রোলের দাম বাড়ছে সে সম্পর্কে আমরা খুব সচেতন....ইউরোপে যুদ্ধ এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে এটি ঘটছে। আমরা এটি বুঝতে পারছি যে জীবনযাত্রার উপর এর প্রভাবগুলি বাস্তব।
ফেডারেল ট্রেজারার জশ ফ্রাইডেনবার্গ অস্থায়ীভাবে জ্বালানি তেলের উপর এক্সাইজ ডিউটি প্রতি লিটারে ৪৪ সেন্ট কমানোর কথা বিবেচনা করছেন।
কিন্তু ডেলয়েটের অর্থনীতিবিদ ক্রিস রিচার্ডসন বলছেন যে এতে কোন লাভ হবে না, এটি একটি ব্যান্ড-এইড সমাধান, রাজনীতিবিদরা জনগণকে প্রবোধ দিচ্ছেন।
তাহলে, দাম কী কমবে না?
এএমপি ক্যাপিটালের মিঃ অলিভার বলছেন যে অস্ট্রেলিয়ানদের জীবনযাত্রার বর্তমান ব্যয় বেড়ে যাওয়া মূলত পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধের কারণে - তবে পুরোপুরি নয়।
তিনি বলছেন, শীঘ্রই একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছালে এবং যুদ্ধের অবসান হলেও সরবরাহের ঘাটতি থাকবে, তাছাড়া চীনও সম্প্রতি কোভিড লকডাউন দিয়েছে। ওমিক্রনের কারণে সরবরাহে ব্যাঘাত অব্যাহত থাকবে এবং এটি সম্ভবত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির পিছনে সবচেয়ে বড় একক কারণ।
এদিকে, মিঃ ব্যালানটাইন বলছেন যে সরকার যদি মূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার উপর চাপ কমিয়ে আনতে চায় তবে মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সহায়তা করা দরকার।
তিনি বলছেন, কষ্টে থাকা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা না হলে আমরা দিন দিন জীবনযাত্রার মানের অবনতি দেখবো।
পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:
আরও দেখুন: