বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে বিধিনিষেধসহ আরও পরিবর্তন আসছে অস্ট্রেলিয়ার গ্যাম্বলিং ইন্ডাস্ট্রিতে

"Pokies" - Gambling in Australia

16 October 2018, Australia, Melbourne: In a pub in the Australian metropolis of millions, a man sits in front of one of the electronic poker machines, the so-called pokies. For many they belong to the Aussie culture like surfing or barbecue. (to dpa "The misery at the "Pokies" - Australians gamble like nobody else" from 30.11.2018) Photo: Christoph Sator/dpa (Photo by Christoph Sator/picture alliance via Getty Images) Credit: picture alliance/picture alliance via Getty Image

রাজ্যের সব পাব ও ক্লাবগুলিতে গ্যাম্বলিং সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রদর্শন নিয়ে নতুন বিধিনিষেধ এনেছে নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেটের লেবার-সরকার। অনলাইন গ্যাম্বলিং এ ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা নিয়ে নতুন আইন প্রণয়নের ব্যাপারটিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গ্যাম্বলিং বা জুয়া খেলা নিয়ে এত সতর্কতা জরুরী কেন? শুনুন এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন।


অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে গ্যাম্বলিং বা জুয়া খেলা অপরিচিত কোনো ঘটনা নয়। প্রতি বছর, বিশেষ করে মেলবোর্ন কাপের দিনে, অনেক অস্ট্রেলিয়ানই বছরে একবার কোনো ঘোড়ার জেতার পক্ষে বাজি ধরেন।

তবে অনেকের জন্যেই বেটিং বা গ্যাম্বলিং এর অভিজ্ঞতা আরও বেশি নিয়মিত অভ্যাস। এবং যখন এই অভ্যাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়।

এ দেশে গ্যাম্বলিং করার অনেক উপায় রয়েছে। ক্যাসিনোতে গিয়ে পোকার মেশিনে খেলার ব্যবস্থাসহ, অনলাইন ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে বেটিং করা যায়।

সহজে বেটিং করা যায় বলে মানুষ এতে আরও বেশি ঝুঁকছে, এমনটা মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞই।
ড. রেবেকা জেনকিনসন গ্যাম্বলিং রিসার্চ সেন্টারের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে কাজ করছেন, যেটি আবার অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফ্যামিলি স্টাডিজের একটি অংশ।

এই সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ানদের বেটিং-এ অংশগ্রহণের একটি নিয়মিত চিত্র। লটারি টিকেট, স্ক্র্যাচি, ঘোড়দৌড়, পোকিজ বা অন্যান্য খেলার উপরে ধরা বাজি, এরকম অনেকভাবেই জুয়া খেলায় অংশ নেয় অস্ট্রেলিয়ানরা।

তবে এই প্রতিবেদনে আরও যেটি পরিস্কার হয়েছে, তা হল, বেটিং বিষয়ক বিভিন্ন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের সাথে গ্যাম্বলিং বেড়ে যাবার ঝুঁকির সম্পর্ক।

ড. জেনকিনসন জানিয়েছেন, এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী। কারণ বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ানরাই নিজের চারপাশে এই বিজ্ঞাপনগুলি নিয়মিত দেখতে পান।

তবে সঙ্গত কারণেই গ্যাম্বলিং বা জুয়া খেলা এখন কেবল শখ হিসেবে বিবেচিত হয় না। অনেকের জন্যেই এটি একটি ক্ষতিকর আসক্তিতে পরিণত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা পঞ্চাশ ভাগ জুয়াড়িদের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং এর ফলে নিজের বা অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা দেখা গেছে। এ ছাড়াও, নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও জুয়াড়িদের মধ্যে অনেক বেশি দেখা যায়।

পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, অস্ট্রেলিয়ানরা প্রতি বছর প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ জুয়ার পেছনে খরচ করে। জনসংখ্যার অনুপাতে এই খরচের পরিমাণ পুরো বিশ্বেই সর্বোচ্চ।

ড. জেনকিনসন বলেন, জুয়ার কারণে অনেকেই কেবলমাত্র আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং আরও অনেক বড় ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন।
২০১৮ সালে হাউজহোল্ড, ইনকাম অ্যান্ড লেবার ডাইনামিক্স ইন অস্ট্রেলিয়া বা হিলডা-র এক পরিসংখ্যানে দেখে গেছে, প্রায় ৬.৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান প্রতি মাসে কোনো না কোনো উপায়ে জুয়া কিংবা বাজির সাথে জড়িত ছিল।

আর এই মানুষদের মধ্যে প্রায় ১.৩৩ মিলিয়ন মানুষকে জুয়া সম্পর্কিত আরও বড় কোনো ক্ষতির অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে।

নাটালি রাইট রাজ্য সরকারের অফিস অব রেসপন্সিবল গ্যাম্বলিং এর ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, গ্যাম্বলিং এর কারনে ক্ষতির মুখে পড়েছে এমন মানুষদের ভেতরে মাইগ্র্যান্ট বা অভিবাসীদের সংখ্যা অনেক বেশি।

এই তথ্য সামনে আসায় গ্যাম্বলিং সংক্রান্ত সহায়তাগুলি এখন ইংরেজির পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি ভাষায় দেয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে।

জুয়ার ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। তবে সচেতনতার সাথে সাথে সরকারের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করছেন অনেকে।

পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব অস্ট্রেলিয়ার টেরি স্লেভিন বলেন, বিধিনিষেধে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, গ্যাম্বলিং ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরকার যে অর্থ আয় করে, সেটা ব্যয় করা উচিত এই ইন্ডাস্ট্রির নিয়ম কানুন ও ক্ষতিগুলি কমানোর কাজে তদারকির পেছনে।

ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি এখন গ্যাম্বলিং সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বাজি ধরার কাজে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

কম্যুনিকেশন মিনিস্টার মিশেল রোল্যান্ড বলেন, বেটিং-এ ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এখন সরকারের অতি জরুরী কাজের তালিকায় রয়েছে। এর ফলে অনলাইনে বেটিং এর প্রবণতা আরও কমবে বলে আশা করছে সরকার।
গ্যাম্বলিং সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচারের উপরেও কড়াকড়ি আরোপের কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ এখন প্রচলিত থাকলেও, এর নানা রকম ফাঁকফোকর কাজে লাগাচ্ছে অনেক বিজ্ঞাপনদাতা।

অনেক বুকমেকার বা জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠানই দেশের প্রধান খেলাগুলির সাথে সম্পর্ক তৈরি করছে, প্রচার-স্বত্বও কিনে নিচ্ছে অনেকেই।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য অ্যান্ড্রু উইকি মনে করেন, এই প্রবণতা অত্যন্ত বিপদজনক।

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার সম্প্রতি গ্যাম্বলিং বিজ্ঞাপন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের সব পাব ও ক্লাবের বাইরে থেকে জুয়া-সম্পর্কিত বিজ্ঞাপনগুলি সরিয়ে নিতে বলছে সরকার।

এ বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই বিষয়ে আরও কড়াকড়ি আনবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্‌স।

কিছুদিন আগেই গ্যাম্বলিং প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে রাজনৈতিক ডোনেশন নেয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্‌স বলেন, সংসদের কাছ থেকে তিনি আরও সহায়তা পেলে গ্যাম্বলিং ইন্ডাস্ট্রিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে।

অ্যালায়েন্স ফর গ্যাম্বলিং রিফর্মের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন ক্যারল বেনেট। প্রিমিয়ার মিন্‌স-এর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।

জুয়া বা গ্যাম্বলিংসহ যে কোন আসক্তির জন্য সাহায্য পেতে ভিজিট করুন বা www.gamblinghelponline.org.au

সাহায্য পেতে কল করুন:

অথবা

 সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share