এ বছর ট্যাক্স রিটার্নে কী রকম পরিবর্তন এসেছে?

Australian Tax Form

A stock photo of the Australian Tax forms. Source: iStockphoto

নতুন অর্থ-বছর শুরু হয়েছে। ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় এসে গেছে। বিগত অর্থ-বছরের পুরোটাই অতিবাহিত হয়েছে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর মধ্য দিয়ে। এ বছর ট্যাক্স রিটার্নের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে?


কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর এই সময়টিতে অস্ট্রেলিয়ায় পুরো একটি অর্থ-বছর অতিবাহিত হলো। এ সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন দেখা গেছে।

এ বছর ট্যাক্স রিটার্নও কিছুটা ভিন্ন রকম হবে।

অস্ট্রেলিয়ান ট্যাক্স অফিস (ATO) বলছে, এ বছর ডিডাকশন বা কর ছাড় বৃদ্ধি পাবে। বিশেষত, যারা ঘরে থেকে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে। যেমন, বিদ্যুৎ খরচ, টেলিফোন-ইন্টারনেট এবং অফিস-সরঞ্জামের ডেপ্রিসিয়েশনের জন্য।
সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির অ্যাকাউন্টিংয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর কেন ডিভোস বলেন, ঘরে থেকে কাজের ক্ষেত্রে ডিডাকশন দাবি করার জন্য বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করা যায়। আপনার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে আপনি কোন পদ্ধতি বেছে নিবেন। সবচেয়ে সোজা-সাপ্টা পদ্ধতি হলো, অস্থায়ী সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি। এতে কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে-সব খরচ আপনি নিজের পকেট থেকে করেন, সেগুলোর জন্য ঘরে কাজের ক্ষেত্রে ঘণ্টা প্রতি ৮০ সেন্ট করে ডিডাকশন দাবি করা যায়।

তবে, এই সামুদয়িক পদ্ধতিটি হয়তো সবার জন্য সর্বোত্তম পন্থা নয়।

আরেকটি বিকল্প পদ্ধতি হলো ৫২ সেন্ট রেট মেথড। এটি ৮০ সেন্ট মেথডের মতোই। তবে, এতে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং অফিস-আসবাবপত্রের সংস্কার ও ডেপ্রিসিয়েশন অন্তর্ভুক্ত। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, কম্পিউটার এবং স্টেশনারী খাতের ব্যয়গুলো এতে আলাদাভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।

আরেকটি পদ্ধতি হলো, সত্যিকারের খরচ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ডিডাকশন দাবিকারীকে অনেক বেশি রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হয়।

কেন ডিভোস বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনার সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে সেটা নির্ধারণ করা।

তিনি বলেন, মানুষের এটা মনে রাখতে হবে যে, এই অর্থ-বছরে হোম অফিসের খরচ হয়তো বেড়ে গেছে, তবে, অন্যান্য খরচও হয়তো কমে গেছে।

ATO এর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার টিম লোহ এসবিএস অন দ্য মানি-কে বলেন, ঘর থেকে কাজের ক্ষেত্রে মানুষ সব ধরনের ডিডাকশন দাবি করার চেষ্টা করে থাকেন।
কেন ডিভোস বলেন, ডিডাকশন দাবি করার ক্ষেত্রে সেসব খরচই অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যেগুলো আপনার উপার্জনের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং যেগুলো আপনার নিয়োগকারী পরিশোধ করেন নি।

আপনার উপার্জন ঘোষণা করার ক্ষেত্রে ATO বিভিন্ন বিষয়ে নজর রাখে। ছয় লাখেরও বেশি অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রতি বিট কয়েনের মতো ক্রিপ্টো-অ্যাসেটে বিনিয়োগ করেছে এবং এটা তারা তাদের ট্যাক্স রিটার্নেও অন্তর্ভুক্ত করে।

তাদের মধ্য থেকে এক লাখ ব্যক্তিকে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স-এর ক্ষেত্রে তাদের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে লিখিতভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এসবিএস অন দ্য মানি-কে টিম লোহ বলেন, এটি ঘোষণা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ক্রিপ্টো অ্যাসেটের বিনিময় হার উঠা-নামা করে থাকে। তখন বিষয়টি জটিলাকার ধারণ করে। এক্ষেত্রে ATO অবশ্য সহায়তা করার জন্য আছে।

করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে অধিক সংখ্যক ব্যক্তি নানা রকম অতিরিক্ত কাজ গ্রহণ করছেন এবং মূল কাজ ছাড়াও অন্যান্য নানা রকম কাজ থেকে উপার্জন করছেন।

কেন ডিভোস বলেন, আপনার ট্যাক্স রিটার্নে সেই কাজগুলো থেকে উপার্জিত অর্থের কথাও উল্লেখ করতে হবে।

আর, যারা সাম্প্রতিক লকডাউনে কোভিড-১৯ ডিজাস্টার পেমেন্ট গ্রহণ করেছেন, তাদেরকে সেটাও ঘোষণা করতে হবে।

এ বছর ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলোতে কোনো পরিবর্তন আসে নি। বরাবরের মতোই, ব্যক্তিগত ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হলো ৩১ অক্টোবর। আর, আপনি যদি কোনো নিবন্ধিত ট্যাক্স এজেন্টের মাধ্যমে আপনার ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন, সেক্ষেত্রে আরও বেশি সময় পাবেন। তবে, অক্টোবরের শেষ নাগাদ আপনাকে অবশ্যই কোনো ট্যাক্স এজেন্টের ক্লায়েন্ট হতে হবে।
মাইগভ-এর মাধ্যমে আপনি জুলাই মাসেই আপনার ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে পারেন। তবে, আগস্টের আগে এটি জমা দিলে এটা নিয়ে কাজ করতে ATO এর বেশি সময় লাগবে।

টিম লোহ্ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, জুলাই-এর শেষ নাগাদ নিয়োগকারী, ব্যাংক, হেলথ ফান্ড, সরকারি এজেন্সি ইত্যাদি থেকে তথ্যাবলী স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ট্যাক্স রিটার্নে যুক্ত হয়ে যায়। এর আগে আপনি ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিলে, সে-সব তথ্য আপনাকে ম্যানুয়ালি যুক্ত করতে হবে।

ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য অ্যাকাউন্টেন্টের সহায়তা গ্রহণ করবেন কিনা সে সম্পর্কে কেন ডিভোস বলেন, এটি মূলত নির্ভর করবে আপনার রিটার্নটি কতোটা সহজ কিংবা জটিল তার উপরে।

ট্যাক্স এজেন্ট নিয়োজিত করার খরচ সর্বদাই পরবর্তী বছরের রিটার্ন দাখিলের সময়ে দাবি করা যায়।

আর, স্বল্প-উপার্জনকারীরা ATO এর ট্যাক্স হেল্প প্রোগ্রাম থেকে বিনামূল্যে সহায়তা পেতে পারেন।

অবসরপ্রাপ্ত অ্যাকাউন্টেন্ট করুণা চিন্নাহ্ ATO এর ট্যাক্স হেল্পার হিসেবে মাল্টিকালচারাল কাউন্সিল অফ ওয়াগা ওয়াগাতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন।

তিনি বলেন, যারা নন-ইংলিশ-স্পিকিং পটভূমি থেকে এসেছেন, তাদের জন্য ট্যাক্স হেল্প স্বেচ্ছাসেবীরা এবং ATO সহায়তা প্রদান করে থাকে।

ATO এর ওয়েবসাইটে ২০টিরও বেশি ভাষায় ট্যাক্স টাইম রিসোর্স পাওয়া যাবে।

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .

Share