গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি গত সপ্তাহে হিজাবের নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগে তেহরানে নৈতিক পুলিশের হাতে আটক হবার পর কোমায় ছিলেন, এবং পরবর্তী সময়ে মারা যান
- ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ ওয়াহিদি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন
- সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করছেন নারীরা, নিজেদের চুল কেটে এবং মাথার কাপড় পুড়িয়ে ঘটনার প্রতিবাদে নেমেছেন তারা
ইরান সরকার মাহসা আমিনি নামের ওই তরুণীকে মারধর করা হয়েছে এমন খবর অস্বীকার করেছে।
২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি গত সপ্তাহে হিজাবের নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগে তেহরানে নৈতিক পুলিশের হাতে আটক হবার পর কোমায় ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন যে ওই তরুণীকে পুলিশ মারধর করেছে কিন্তু ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ ওয়াহিদি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলছেন,"তাকে মারধর করা হয়েছে কী হয়নি, আমরা এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছি... মূলত, নৈতিক পুলিশের মারধর করার উপায় নেই। তাদের লাঠিসোটা ব্যবহার বা আঘাত করার উপায় নেই।"
এর পরিবর্তে, তিনি বলছেন যে ওই কুর্দি তরুণীর মৃত্যু আগে থেকে থাকা কোন রোগের কারণে হতে পারে।
তিনি বলছেন, "আমাদেরকে তার মৃত্যুর কারণ বোঝার জন্য তার মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কারণ দৃশ্যত তার আগে একাধিক চিকিৎসা সমস্যা ছিল। তার শারীরিক সমস্যা ছিল।"
এদিকে তার পরিবার বলছে ২২ বছর বয়সী মাহসাকে গ্রেপ্তারের আগে সে যথেষ্ট সুস্থ ছিল।
এই ঘটনায় জনগণ বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে এসেছে।
একজন নারী বলছেন,"এই খবরটা শুনে আমার কণ্ঠ কেঁপে উঠেছে কারণ আমার সাথে এমনটা একবার বা দুবার হয়েছে। আমি ভাবছিলাম যে আমার সাথে যদি এমনটা হয় তাহলে আমার বাবা-মায়ের কেমন লাগবে?"
একজন পুরুষ বলছেন,"আমি এর তীব্র বিরোধী কারণ আমরা একটি সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে কথা বলছি। জোর করে কারো উপর সাংস্কৃতিক বিষয় চাপিয়ে দেয়া যায় না।"
বিক্ষোভকারীদের পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর পর অনেক লোক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করছেন নারীরাও।
তাদের অনেকেই প্রতিবাদে নিজেরাই নিজেদের চুল কেটে ফেলছে এবং তাদের মাথার কাপড় পুড়িয়ে দিচ্ছে।
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানের সকল নারীরা জনসমক্ষে হিজাব পরতে বাধ্য। ইরানের শরিয়া আইনের ব্যাখ্যায় নারীদের চুল ঢেকে রাখতে হয় এবং লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে।
কিন্তু সেখানে এটি না মানার প্রবণতা বাড়ছে, এবং কঠোর ইসলামিক নিয়মগুলিকে সংশোধন করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
একজন নারী বলছেন,"আমার মতে সরকারের উচিত হিজাব পুরোপুরি উঠিয়ে দেয়া। যারা এটি পছন্দ করবে তারা পরবে এবং যারা চাইবে না তারা পরবে না।"
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলেও নিন্দা বাড়ছে।
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে এই মৃত্যুকে "গভীরভাবে মর্মান্তিক" বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেছেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জবাবদিহিতা দাবি করছে।
তিনি বলেন,"মাহসা আমিনীর মৃত্যু... মানবাধিকারের জন্য একটি ভয়ঙ্কর এবং গুরুতর অবমাননা।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে: "সহিংসতা বা হয়রানি থেকে মুক্ত হয়ে ইরানের নারীরা যা চান তা পরার অধিকার তাদের থাকা উচিত।"
কিন্তু সোমবার ইরানি পুলিশ দৃঢ় অবস্থান নিয়ে এই অভিযোগগুলোকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে অভিহিত করে এবং মাহসা আমিনির মৃত্যুকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ বলে অভিহিত করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন যে ইরান 'ইরান তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের যেকোনো হস্তক্ষেপকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে'।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: