এস্ট্রো-ফটোগ্রাফির মত ব্যতিক্রমী বিষয়ের প্রতি কীভাবে আগ্রহ হলো, এ প্রসঙ্গে সৈয়দ উদ্দিন তার মায়ের উৎসাহের কথা স্মরণ করে বলেন, 'আমার মায়ের এস্ট্রোনমি নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন তাঁরই কাছ থেকে জেনে আগারগাও বিজ্ঞান যাদুঘরে টেলিস্কোপ দিয়ে প্রথম শনি গ্রহ দেখেছিলাম। সেদিন থেকে মনে মনে ঠিক করেছিলাম কোনও একদিন আমার নিজের একটা টেলিস্কোপ হবে।'
'এই স্বপ্নটা অনেক বছর বুকে লালন করে আসছিলাম। এর মধ্যে আমার শখ বিভিন্ন দিকে ঘুরে ফিরেছে- আমি কিছুদিন বাংলায় গান লিখেছি- নিজের জন্য এবং অন্য শিল্পীদের জন্য, ল্যান্ডস্কেপ এবং পাখী ফটোগ্রাফি করেছি, ডাটা সাইন্স নিয়ে ঘাটা ঘাটি করেছি -ইত্যাদি।'
'কিন্তু মনের ভিতরের এস্ট্রো-ফটোগ্রাফির সেই স্বপ্নটা কিন্তু সব সময়েই সুপ্ত ছিল,' বলেন মি. সৈয়দ উদ্দিন।এস্ট্রো-ফটোগ্রাফি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এটি মূলতঃ দুই ধরনের হয়; একটি হচ্ছে গ্রহের ছবি তোলা- যেমন শনি, মঙ্গল, ব্রিহস্পতি , চাঁদ সূর্য ইত্যাদির ছবি।'
Cats Paw Nebula Source: Syed Uddin
'অপরটি হচ্ছে ডীপ স্কাই ইমেজিং- যেখানে আমরা গ্যালাক্সি এবং বিভিন্ন ধরনের নেবুলার ছবি তুলে থাকি।'
'এছাড়া আমরা আরেকটা জিনিসের ছবি তুলতে পারি- সেটা হোল -সুপার নোভা রেমন্যান্ট- একটি নক্ষত্র যখন তার জীবন সায়াহ্নে আসে, তখন সে সুপার নোভাতে রুপান্তরিত হয়ে আলোক রশ্মি ছড়ায়।'
সৈয়দ উদ্দিন বলেন, আমি সাড়ে বার হাজার বছর আগে ঘটে যাওয়া এমন একটি সুপার নোভা রেমন্যান্ট-এর ছবি তুলেছি এ বছর।
এস্ট্রো-ফটোগ্রাফির সাথে সাধারন ফটোগ্রাফির পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, দুটি অনেক আলাদা বিষয়। তবে এস্ট্রো-ফটোগ্রাফি কঠিন হলেও এটি নিয়ে কাজ করা অনেক বেশী আনন্দের।
জানতে চেয়েছিলাম এই ছবিগুলো তুলতে কী কী বিশেষ ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন হয় কিংবা প্রক্রিয়াটাই বা কী?সৈয়দ উদ্দিন বলেন, 'আমরা গ্যালক্সি বা নেবুলার যে ছবি তুলি, সেগুলো খালি চোখে দৃশ্যমান হয় না। টেলিস্কোপ ছাড়াও এই জন্য বিশেষ ধরনের ফিল্টার ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন ওয়েভ লেংথ এর ফিল্টার দিয়ে প্রথমে আলাদা করে সাদা কালো (মনক্রম) ছবি তোলা হয়।'
Amateur Astrophotographer Mr. Syed Uddin is an accountant by profession. Source: Syed Uddin
'এক একটি ছবি তুলতে কমপক্ষে ৮ দিন লেগে যায়—প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ ঘন্টা করে ছবি তুলি। তারপর সেগুলোকে লাল, সবুজ, নীল পেলেটে কনভার্ট করে ফাইনাল ইমেজ তৈরী করা হয়। -এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে ন্যারো ব্যান্ড ইমেজিং (Narrow band Imaging) বলা হয়ে থাকে।'তবে মি. সৈয়দ উদ্দিন একজন সৌখিন এস্ট্রো-ফটোগ্রাফার হলেও এতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও আছে বলে জানান ।
Telescope Source: Syed Uddin
তিনি বলেন, প্রথমত শখ হিসেবে এটি যথেষ্ট ব্যয় বহুল, বিশেষ করে টেলিস্কোপসহ অন্যান্য এক্সেসরিজগুলো বেশ মূল্যবান। যন্ত্রপাতির খরচ ছাড়াও আরো অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায় এ সম্পর্কে পড়াশোনা করতে।
যেহেতু এস্ট্রো-ফটোগ্রাফি করতে হয় একা একা এবং রাত্রিকালীন সময়ে তাই ব্যক্তিগত এবং সাধারন সামাজিক জীবনেও এর প্রভাব পড়ে।
পেশায় একজন একাউন্ট্যান্ট মি.সৈয়দ উদ্দিন অস্ট্রেলিয়া থেকে সিপিএ এবং যুক্তরাজ্য থেকে সিআইএমএ সম্পন্ন করেছেন।ভিন্ন পেশা হওয়াতে কাজে কোন প্রভাব পড়ে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে বরং এস্ট্রো-ফটোগ্রাফির শখটা শুরু করা অনেকটা সহজ হয়েছে। ভবিষ্যতে এস্ট্রো-ফটোগ্রাফি নিয়ে একটি তথ্যমূলক বই প্রকাশেরও ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
Sun Source: Syed Uddin
সৈয়দ উদ্দিন ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন এবং মেলবোর্নে পড়াশোনা শেষ করে ২০০৮ সালে ব্রিসবেনে থিতু হন।
পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:
আরও দেখুন: