গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- অস্ট্রেলিয়ায় কপিরাইট নিবন্ধন করার কোন প্রয়োজন নেই-এটি ফ্রী এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নির্মাতা কপিরাইটের অধিকারী
- সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রিয়েটররা তাদের কন্টেন্টের কপিরাইটের মালিকানা পান, তবে তারা সেই প্ল্যাটফর্মে তাদের কাজ অন্যদের শেয়ার করতে সম্মত হন
- অস্ট্রেলিয়ান কপিরাইট আইনে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে যা আপনাকে অন্য কারো কনটেন্ট তাদের কপিরাইট লঙ্ঘন না করে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়
- আমরা আমাদের সামাজিক ভিডিও এবং ছবিতে সিঙ্ক করি এমন সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও কপিরাইট প্রযোজ্য
কপিরাইট হল এক ধরনের আইনি সুরক্ষা যা লেখা, ফটোগ্রাফি, সঙ্গীত এবং ভিডিওর মতো সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটি কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা নির্মাতা বা রচয়িতাকে নির্দিষ্ট উপায়ে তার কাজ ব্যবহার করার অধিকার দেয়, যেমন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা।
এটি আমাদের কারো অনুমতি ছাড়া তার কাজ ব্যবহার করা থেকেও বাধা দেয়।
সোশ্যাল মিডিয়া আইনজীবী টেগান বুরম্যান কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং ব্র্যান্ডগুলিকে আইনি পরামর্শ দেন। তিনি বলেন অস্ট্রেলিয়ায় কপিরাইট নিবন্ধন করার কোন প্রয়োজন নেই-এটি ফ্রী এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নির্মাতা কপিরাইটের অধিকারী।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কী কী বিষয়ে আপনার সম্মতি থাকে?
প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব নিয়ম ও শর্ত থাকে যা যোগদানের সময় অ্যাকাউন্ট ধারীরা ব্যবহারের জন্য সম্মত হন।
এর মধ্যে সাধারণত প্ল্যাটফর্মের শেয়ারিং নিয়মের সাথে সম্মত হওয়াও অন্তর্ভুক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রিয়েটররা তাদের কন্টেন্টের কপিরাইটের মালিকানা পান, তবে তারা সেই প্ল্যাটফর্মে তাদের কাজ অন্যদের শেয়ার করতে সম্মত হন।
ফেসবুক(Facebook) এবং ইনস্টাগ্রাম (Instagram) আপনাকে তা প্ল্যাটফর্ম জুড়ে কনটেন্ট শেয়ার করতে দেয় কারণ তারা উভয়ই মেটার মালিকানাধীন। আপনি যদি অন্য অ্যাকাউন্টধারীর কাজ শেয়ার করেন, প্ল্যাটফর্ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ক্রেডিট দেবে, অর্থ্যাৎ সেটা যে অ্যাকাউন্টধারীর কাজ তা বোঝা যাবে।
তবে সেটিংস সামঞ্জস্য করে কনটেন্ট শেয়ার করা থেকে বরাত রাখা যায়।
যাইহোক, আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে কারও কনটেন্ট আপলোড করা ঠিক নয়, মিজ বুরম্যান বলেন।
Content can be shared under fair dealing or Creative Commons licences. Source: iStockphoto / anyaberkut/Getty Images/iStockphoto
অন্যের কনটেন্ট ব্যবহার করলে ক্রেডিট দিন
পল মারে একজন শিল্পী এবং টারশিয়ারি স্তরের ভিজ্যুয়াল আর্ট শিক্ষক।
কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করে, তার শিল্পকর্ম কপি করা হয়েছিল এবং তার অনুমতি ছাড়াই ফেসবুকে আবার পাবলিশ করা হয়েছিল।
এক ব্যক্তি আমার একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল এবং আমার কাজের খুব খারাপ মানের ছবি তুলেছিল। তারপরে তারা সেগুলিকে ভুল শিরোনাম দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিল। তারা আমার নামের বানান ভুল করেছিল কিন্তু সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটি ছিল যে তারা পুরো প্রদর্শনীটি এবং আমার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছিল।পল মারে, শিল্পী এবং ভিজ্যুয়াল আর্ট শিক্ষক
পল মারে বলছেন, "এক ব্যক্তি আমার একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল এবং আমার কাজের খুব খারাপ মানের ছবি তুলেছিল। তারপরে তারা সেগুলিকে ভুল শিরোনাম দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিল। তারা আমার নামের বানান ভুল করেছিল কিন্তু সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটি ছিল যে তারা পুরো প্রদর্শনীটি এবং আমার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছিল। আমি তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে ফেসবুকের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং তারা প্রায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে পোস্টটি সরিয়ে নিয়েছিল৷"
আপনি যদি কারো কাজ শেয়ার করতে চান, তাহলে কনটেন্ট নির্মাতাকে কীভাবে স্বীকৃতি দেবেন তা খুঁজে বের করা ভাল। তাদের সাথে সাধারণত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে, অথবা যদি তারা একজন ইনফ্লুয়েন্সার হন, তবে তারা তাদের ম্যানেজমেন্টের নাম দিতে পারে।
অনুমতি ছাড়া কী কনটেন্ট ব্যবহার করা যায়?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্মাতা চাইবে আপনি তাদের নাম ট্যাগ করে তাদের অ্যাকাউন্টে আবার লিঙ্ক করতে।
অস্ট্রেলিয়ান কপিরাইট আইনে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে যা আপনাকে অন্য কারো কনটেন্ট তাদের কপিরাইট লঙ্ঘন না করে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়।
অ্যালেক্স সোলো স্প্রিন্টলো আইনি পরিষেবার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেছেন যে এই ব্যতিক্রমগুলির মধ্যে একটি হল 'ফেয়ার ডিলিং' আইন।
তিনি বলছেন, "উদাহরণস্বরূপ 'ফেয়ার ডিলিং' আইনে সংবাদ সংস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনুমতি না নিয়েই অন্য লোকেদের কপিরাইটযুক্ত কনটেন্ট ব্যবহার করা যায়, তবে এটি এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় যেগুলির সাথে কিছু জনস্বার্থ যুক্ত থাকে৷ প্যারোডির ক্ষেত্রেও আমাদের কিছু সাম্প্রতিক ব্যতিক্রম রয়েছে৷ এবং স্যাটায়ার যা কৌতুক অভিনেতাদের অনুমতি না নিয়েই সীমিত উপায়ে কনটেন্ট ব্যবহার করা যায়৷"
ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স নামে পরিচিত কারো সৃজনশীল কনটেন্ট শেয়ার করাও নিরাপদ হতে পারে। এটি অনলাইনে পাওয়া কপিরাইট-সুরক্ষিত কন্টেন্টগুলোর একটি সংগ্রহ।
কিন্তু মিঃ সোলো ব্যাখ্যা করেন, যদিও ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে কোন কনটেন্ট অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যায়, তারপরেও নির্মাতা এখনও তাদের কপিরাইটের মালিক, তাই আপনাকে তাদেরকে ক্রেডিট দিতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স আছে, তাই নিশ্চিত করুন যে কোন লাইসেন্স আপনার উদ্দেশ্যের সাথে মেলে।
মিস্টার সোলো ব্যাখ্যা করে বলেন "আমি আমার ফটোগ্রাফি অনলাইনে পোস্ট করতে পারি এবং কাউকে ব্যবহার করতে বলতে পারি। তবে আমি বলতে পারি, এটি একটি নির্দিষ্ট ধরণের ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে যা আপনি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কিন্তু অ-বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এবং আপনি যদি এটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করতে চান আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারের জন্য, তবে এজন্য অর্থ দিতে হবে৷"
কন্টেন্টের জন্য ক্রিয়েটিভ কমন্স ইমেজ ব্যবহার করতে, গুগল ইমেজ অনুসন্ধান করুন, 'টুলস' বিকল্পটি সন্ধান করুন এবং তারপরে 'ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স' নির্বাচন করুন।
ছবি বা ভিডিওতে মিউজিক সিঙ্ক করার যে নিয়ম
আমরা আমাদের সামাজিক ভিডিও এবং ছবিতে সিঙ্ক করি এমন সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও কপিরাইট প্রযোজ্য৷
মিঃ সোলো বলেন যে কিছুদিন আগেও, সঙ্গীত ব্যবহারে শিল্পীর অনুমতি চাওয়ার মতো কঠোর বিধিনিষেধ ছিল - যা সাধারণত সম্ভব হয় না।
Take progress shots of your work. Credit: LeoPatrizi/Getty Images
আপনি কী কনটেন্ট নির্মাতা? আপনি কীভাবে আপনার কপিরাইট লঙ্ঘন থেকে অন্যদের নিরুৎসাহিত করতে পারেন?
আপনি কপিরাইট চিহ্ন যোগ করে লোকেদের মনে করিয়ে দিতে পারেন যে এটি আপনার কাজ - একটি বৃত্তের মধ্যে অক্ষর C - বা আপনার সামাজিক পোস্টগুলিতে 'আমার অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না'-এর মতো একটি বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেন৷
পল মারে নির্মাতাদের শিল্পকর্ম রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন কৌশলের পরামর্শ দেন।
Copyright concept Credit: JLGutierrez/Getty Images
কপিরাইট লঙ্ঘন হলে কী করণীয়?
তবে এই সুরক্ষার নিয়ম থাকা সত্ত্বেও, কপিরাইট লঙ্ঘন সব সময় ঘটে।
আপনি যদি মনে করেন যে কেউ আপনার কপিরাইট গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে, এক্ষেত্রে টেগান বুরম্যান বলেন, এজন্য প্রথমে আইনি পরামর্শ নিন।
এছাড়া, প্ল্যাটফর্মগুলিও আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আপনি দেখতে পারেন আপনার ইমেজ বা ছবি কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, এবং ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার ব্লগ পোস্টের স্নিপেট সার্চ করে দেখতে পারেন কেউ সেগুলো কপি করেছে কিনা।অ্যালেক্স সোলো, স্প্রিন্টলো লিগ্যাল সার্ভিসেস
ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা না হোক কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের জন্য আরও কঠোর শাস্তি রয়েছে৷ কপিরাইট লঙ্ঘনের ফলে আইনি পদক্ষেপ এবং আর্থিক জরিমানা হতে পারে, বিশেষ করে যদি কেউ অন্য কারো কাজ থেকে লাভবান হয়।
অ্যালেক্স সোলো বলেন যে আমাদের কপিরাইটযুক্ত কাজের নিয়মিত ট্র্যাক বা খোঁজ রাখতে পারি।
তিনি বলছেন, গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আপনি দেখতে পারেন আপনার ইমেজ বা ছবি কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, এবং ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার ব্লগ পোস্টের স্নিপেট সার্চ করে দেখতে পারেন কেউ সেগুলো কপি করেছে কিনা।
অস্ট্রেলিয়ায় আপনার নতুন জীবনে স্থায়ী হওয়ার বিষয়ে আরও মূল্যবান তথ্য এবং টিপসের জন্য অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন পডকাস্ট অনুসরণ করুন।
-এ আমাদের একটি ইমেল পাঠান।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
পাওয়া যাচ্ছে?
এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন
আর, এসবিএস বাংলার এবং ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন চ্যানেল।
আরও দেখুন
এসবিএস বাংলা ফেসবুক নীতিমালা