বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত তৈরিতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো অনেক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালিদের পাশাপাশি অনেক অস্ট্রেলিয়ানও ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ীসহ অনেক বুদ্ধিজীবীরাও ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে বেঁচে আছেন, আবার অনেকের সন্তানরাও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে তাদের পিতামাতাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানেন।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ানদের ভূমিকা নিয়ে ২০১২ সাল থেকে গবেষণা করছেন পেশায় ফটোগ্রাফার ইমরান আবুল কাশেম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ান বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কিভাবে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশকে স্বীকৃতিকে ত্বরান্বিত করেছে এ সম্পর্কে তিনি এসবিএস বাংলাকে জানান, ২০১২ সালের দিকে তিনি জানতে পারেন অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবী হারবার্ট ফিইথ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য 'বাংলাদেশের বিদেশী বন্ধু' হিসেবে সীকৃতি পান; তার কর্মকান্ড সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন তার ছেলে ডেভিড হারবার্টের এক সাক্ষাৎকার থেকে।"বিষয়টি আমাকে খুব উৎসাহিত করে। এক পর্যায়ে এই বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আরো কয়েক বন্ধু মিলে 'মেইট ১৯৭১' নাম একটি গ্রুপ তৈরী করি। তখন আমরা তথ্য সংগ্রহ করি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ানদের অবদান নিয়ে। আমরা দেখলাম এতো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে, এর গভীরতা চিন্তা করে, পুরো বিষয়টি বিবেচনা করে 'তাহারা ' নামের একটি তথ্য চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করি। এটির কাজ প্রায় শেষ এবং মুক্তির প্রতীক্ষায় আছে।"
অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাইজেল বোয়েন ১৯৭২ সালের ৩১শে জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন Source: SBS
অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতির খবর Source: Mate1971
"গবেষণাকালে আমরা দেখি যে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকাগুলোতে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে ব্যাপকভাবে লেখালেখি হয়েছে। তখন থেকেই পাকিস্তান আর্মির হামলা, বাংলাদেশের যুদ্ধ আন্দোলন নিয়ে পত্রিকাগুলোতে হেডলাইনে ছাপা হয়েছে। এতে বোঝা যায় অস্ট্রেলিয়ানদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি প্রথম থেকেই আগ্রহ ছিল।"
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাঙালি এবং অস্ট্রেলিয়ানদের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, "সে সময় মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে এখানকার শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এবং বুদ্ধিজীবীরা সরকারকে চাপ দিচ্ছিলো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। অস্ট্রেলিয়া বেশ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং পাকিস্তানের কমনওয়েলথ ছেড়ে যাওয়ার হুমকির ঝুঁকি উপেক্ষা করে অত্যন্ত সুক্ষভাবে এগিয়েছে এবং ১৯৭২ সালের ৩১শে জানুয়ারি তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাইজেল বোয়েন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেন।""অস্ট্রেলিয়ায় সেসময় প্রবাসী বাঙালিরা মূলত ছিলেন বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী, তারা অনেকটা পেছন থেকে কাজ করেছে, সক্রিয়ভাবে কাজ করতে গেলে তাদের সেসময় বৃত্তি বাতিল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। তবে তারা বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ, জনমত তৈরী, 'সোনার বাংলা ' নামে পত্রিকা বের করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আপডেট প্রচার করতেন এবং সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, এমপি এবং রাজনীতিবিদদের ওয়াকিবহাল করতেন।"
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ানদের ভূমিকা নিয়ে ২০১২ সাল থেকে গবেষণা করছেন পেশায় ফটোগ্রাফার ইমরান আবুল কাশেম Source: Supplied
মিঃ ইমরান জানান, 'তাহারা' নামের প্রামাণ্যচিত্রটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে মুক্তি দেয়ার প্রত্যাশা করছেন নির্মাতারা। প্রামাণ্যচিত্রটির কাজ শেষ হয়েছে, তবে কিছু কপিরাইট ইস্যু আছে, এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ হলে তারা এটি মুক্তি দিতে পারবেন।
ইমরান আবুল কাশেমের সাক্ষাৎকারটি শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন
আরো পড়ুন: