"ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরিবারে আর্থিক নিরাপত্তা দেয়"

Personal finance

Official data shows that personal finance loans have fallen 1.8 per cent. (AAP) Source: AAP

ব্যক্তিগত জীবনে আর্থিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ি-গাড়ি কিংবা সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়, বিনিয়োগ, বাজেটিং, ব্যাঙ্কিং ইত্যাদি বিষয়গুলো আধুনিক জীবন যাত্রার দৈনন্দিন অনুষঙ্গ। কিন্তু আমরা অনেকেই এই আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে খুব বেশি সচেতন নই। অথচ একটু সচেতন হলেই এবং সঠিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা জানা থাকলে যে কেউ এর থেকে উপকৃত হতে পারেন। সঠিক সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া, পরিবারের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া কিংবা কঠিন সময়ে সঞ্চয়কৃত অর্থ কাজে লাগানো সম্ভব। সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটির একাউন্টিং এন্ড ফাইন্যান্স বিভাগের প্রভাষক ডঃ সরোদ খন্দকার পার্সোনাল ফাইন্যান্স নিয়ে এসবিএস বাংলার কাছে কিছু গুরুত্তপুর্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।


ড: সরোদ খন্দকার মনে করেন, মানুষ অনেক সময় কিছু না ভেবেই বা সঠিক গবেষণা না করেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে দেখা যায় যে তারা আর্থিকভাবে তেমন লাভবান হচ্ছে না।

হোম লোন নেয়ার সময় তিনি কিছু পরামর্শ দেন। প্রথমত দেখতে হবে যে প্রতিষ্ঠানটি লোন দিচ্ছে তারা প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিনা।দ্বিতীয়তঃ লোনটির সুদের হার কি নির্দিষ্ট (ফিক্সড) নাকি পরিবর্তনযোগ্য (ভ্যারিয়েবল) ; এ ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ক্যাশ রেট কমিয়ে দিচ্ছে বা আরো কমাতে পারে এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভ্যারিয়েবল রেটে লোন নেয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে ঋণ গ্রহীতার জন্য। এতে রিজার্ভ ব্যাংকের সুদের হার কমিয়ে দেয়ার সুফল তারা পাবেন। 

তৃতীয়তঃ ব্যাঙ্ক লোন নিতে গিয়ে স্ট্যান্ডার্ড রেটে নেয়ার চেষ্টা করা উচিত; তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক কাগজপত্র চাইবে।
Dr Sarod Khandaker
Dr Sarod Khandaker Source: Dr Sarod Khandaker/Facebook
রিফাইন্যান্স বা পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন ডঃ সরোদ, কারণ যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা লোন নিয়েছে অনেক ক্ষেত্রে তাদের সাথে দর কষাকষির সুযোগ থাকে, তাছাড়া দীর্ঘদিন ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে থাকার ফলে বেশ কিছু মূল ঋণও পরিশোধ হয়ে যায়, তাই অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হওয়ার আগে ঋণ গ্রহীতাকে এটা বিবেচনা করা প্রয়োজন যে তিনি আরো কত বছরের জন্য লোনটি নিচ্ছেন। সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তথাকথিত 'হানিমুন' লোনের দ্বারা প্রলুব্ধ না হয়ে কিংবা সুদের হারের চেয়ে বরং ওই প্রতিষ্ঠানের কমপেয়ারিজন রেটটি কি সেটা দেখাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ডঃ সরোদ খন্দকার। কমপেয়ারিজন রেট নির্ধারণে ব্যাঙ্ক তাদের সুদের হারের ওপরও অন্যান্য খাতে চার্জ নিয়ে থাকে এবং সব মিলিয়ে যে চূড়ান্ত রেট ধরা হয় সেটাই ঋণ গ্রহীতার ওপর ধার্য্য করা হয়।

"কোন ব্যাঙ্ক আপনাকে হয়তো সুদের হার কম দেখাবে কিন্তু কমপেয়ারিজন রেট দেখা যাবে তাদের বেশি।" তাই ওই ব্যাংকগুলোর কমপেয়ারিজন রেট বুঝতে পারাটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ।

কেউ প্রোপার্টিতে পূনরায় বিনিয়োগ করতে গেলে ইকুইটি বুঝতে পারাটা খুব গুরত্বপূর্ন বলে মনে করেন তিনি , "আপনার যদি কোন প্রপার্টি থেকে থাকে তবে পাঁচ বা দশ বছরে তার দাম বেড়ে যাবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। সেই দাম থেকে ব্যাংকের পাওনা বাদ দিলে যা থাকবে সেটাই হবে ইকুইটি যা নতুন করে বিনিয়োগের জন্য কাউকে সুবিধাজনক অবস্থায় রাখবে।"

পার্সোনাল ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে বাজেটিংয়ে স্মার্ট হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। বিনিয়োগ বা খরচের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাজেটিং একজনকে আর্থিক লেনদেনের একটা স্বচ্ছ চিত্র তৈরী করে দেবে।

"কারণ আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলো ঋণ দিতে গেলে গ্রহীতার আর্থিক লেন দেনের বা জমা খরচের বিষয় গুলো ( ক্যাশ ইন ফ্লো - আউট ফ্লো ) বিবেচনা করবে"। তাই বাজেটিং বিবেচনায় সবাইকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ সঞ্চয়ের পরামর্শ দেন তিনি।

ঋণের ক্ষেত্রে ভালো ঋণ এবং মন্দ ঋণের বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার কথা বলেন ড: সরোদ। যে সব ঋণ থেকে বিনিয়োগ হবে না বা অর্থ আসবে না (ক্যাশ আউট ফ্লো ) সেগুলো হচ্ছে মন্দ ঋণ, যেমন ক্রেডিট কার্ড, হলিডে লোন ইত্যাদি। আর যে সব ক্ষেত্রে ঋণ নিলেও বিনিয়োগ হবে এবং অর্থ ফেরত আসবে (ক্যাশ ইন ফ্লো ) সেগুলো হচ্ছে ভালো ঋণ; যেমন ইনভেস্টমেন্ট হোম লোন, ব্যবসায় লোন ইত্যাদি। তাই লোন নেয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

যে কোন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ড: সরোদ খন্দকার বাজেটিং, ক্যাশ ইনফ্লো -আউটফ্লো, সুদের হার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শর্ত সমূহ ভালো করে অনুধাবনের পরামর্শ দেন।

পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে ওপরের প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন 

Share