এলজিবিটিআই কমুউনিটির পক্ষে আরো বৃহত্তর পরিসরে অধিকারের দাবি

LGBTIQ Rights

LGBTI activists continue to advocate for wider rights despite the legalisation of same-sex marriage in December 2017. Source: Getty Images/LumiNola

অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে সহিষ্ণু দেশগুলোর অন্যতম এবং এখানে প্রতি দশজনে অন্তত আটজন সমাজে সমকামিতা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। ২০১৩ সালের পিউ রিসার্চ পোলে এই চিত্র উঠে এসেছে। তবে এলজিবিটিআই এক্টিভিস্টরা তাদের আরো বৃহত্তর পরিসরে অধিকারের পক্ষে দাবি জানাচ্ছেন, এমনকি ডিসেম্বরে ২০১৭ সালের সমকামী বিবাহের পক্ষে আইন পাশের পরেও।


এলজিবিটিআই বলতে লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সচুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার বা ইন্টারসেক্স ব্যক্তিদের বোঝায়।  কোন কোন সংস্কৃতিতে এ প্রকারের ভিন্ন যৌনগামীদের পরিচিতি দিতে নির্দিষ্ট কোন শব্দ নেই।

সমকামিতা ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী একসময় ফৌজদারি অপরাধ ছিল। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত  নিউ সাউথ ওয়েলসের এই আইন ছিল যে, যদি  কোন পুরুষরা সমকামিতায় লিপ্ত হতো তবে তাদের যাবজ্জীবন জেল খাটতে হতো। আর ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ভিক্টোরিয়ায় আইনে সমকামিতার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড।

যখন ১৯৭৫ সালে সাউথ অস্ট্রেলিয়া আইন পরিবর্তন করে সমকামিতাকে নিরপরাধ কাজ হিসেবে গণ্য করে, তখন সেই ধারায় বিভিন্ন রাজ্যগুলো বিভিন্ন সময়ে তা অনুসরণ করে, এ সত্ত্বেও সর্বশেষে রাজ্য হিসেবে তাসমানিয়ায় ১৯৯৭ সালে সমকামিতাকে বৈধতা দেয়া হয়। 

২০১৮ সালে হিউমান রাইটস ল সেন্টার, লা ট্রোব ইউনিভার্সিটি এবং গে এন্ড লেসবিয়ান হেলথ ভিক্টোরিয়ার যৌথ গবেষণায় দেখা যায় যে লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সচুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, ইন্টারসেক্স বা কুইয়ার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত দশভাগ কনভার্সন থেরাপির অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন যা ছিল খুবই বেদনাদায়ক। এমনি একজন সাবেক প্যাস্টর আন্দ্রে আফামস্যাগা যিনি বহু বছর ধরে তার সেক্সচুয়ালিটি পরিবর্তন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। 

খ্রীষ্টান সামোয়ান পরিবারে আদর ভালোবাসার মধ্যে বড়ো হলেও আফামস্যাগা সারা জীবনই লজ্জা আর অপরাধবোধে ভুগতেন।

ন্যাশনাল এলজিবিটিআই হেলথ এলায়েন্স-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এলজিবিটিআই তরুনদের মধ্যে যাদের বয়স ১৬ থেকে ২৭ তারা সাধারণ যৌনগামীদের  তুলনায় পাচঁগুন বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়।

আফামস্যাগা ভীষণভাবে ধার্মিক এবং প্রাক্তন প্যাস্টর হওয়ার পরেও তিনি তার ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সমকামিতার বৈপরীত্যকে মেলাতে পারেননি যা তাকে এক সময় আত্মহত্যার কথা ভাবতে করতে বাধ্য করে। 

এইসব অনুভুতিই কার্যত তাকে তার অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের পরিচয় প্রকাশ করতে বাধ্য করে। 

২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান হিউমান রাইটস কমিশনের ফেইস দা ফ্যাক্ট পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে দশজনের মধ্যে ছয়জন লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সচুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, ইন্টারসেক্স বা কুইয়ার ব্যক্তিদের মৌখিকভাবে সমকাম-বিরোধী গালাগাল শোনার অভিজ্ঞতা আছে, অন্যদিকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে দশজনের মধ্যে দুই জনের। এই হার ট্রান্সজেন্ডার পুরুষদের ক্ষেত্রে খুবই বেশি, তারপরে আছে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের। 

তাই ১১ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান যারা নিজেদের  এলজিবিটিআই হিসেবে চিহ্নিত করছে তাদের সামাজিক এবং স্বাস্থ্য সুবিধা প্রাপ্তি যাতে যথেষ্ট হয়, এজন্য ইকুয়ালিটি অস্ট্রেলিয়া যৌনগামীতা, লিঙ্গ পরিচয় এবং লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে সেনসাসে কিছু প্রশ্নমালা রাখতে আহবান জানাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ান এলজিবিটিআই মাল্টিকালচারাল কাউন্সিল, এ জি এম সি'র প্রেসিডেন্ট নিউরো সাইকোলজিস্ট ডঃ জুডি ট্যাং বলেন, কুইয়ার ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক কুসংস্কারের মানে হচ্ছে বিভিন্ন বর্ণের মানুষদের প্রতি যে বর্ণবাদী আচরণ করা হয় তা আরো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

২০০৮ সালে রাড সরকার  সমকামী যুগলদের জন্য বৈষম্য দূর করতে সুপার এনুয়েশন স্কিম, সোশ্যাল সিকিউরিটি, ওয়ার্কার্স কম্পেন্সেশন, টেক্সেশন, ইমিগ্রেশন, সিটিজেনশিপ, এজেড কেয়ার এবং স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে  ফেডারেল আইনে পরিবর্তন আনেন। 

 ইকুয়ালিটি অস্ট্রেলিয়ার লিগাল ডিরেক্টর গাসান কাসিসেই  বলেন, আশির দশক থেকে যে সংস্কার শুরু হয়েছিল তার ধারাবাহিকতায় আজকে অস্ট্রেলিয়ায় সমকামী সম্পর্ক স্বীকৃতি পেয়েছে। 

২০১৭ সালে একটি জাতীয় ভিত্তিতে করা পোস্টাল সার্ভে থেকে দেখা যায় যে ৬১.৬% জনগণ ম্যারেজ ইকুয়ালিটি এবং সমকামী বিবাহ আইনগতভাবে সমর্থন করছে। 

২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে সমকামী যুগলরা অস্ট্রেলিয়ার সকল রাজ্য এবং টেরিটোরিতে বাচ্চাদের পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারছেন। 

অস্ট্রেলিয়ান মাল্টিকালচারাল কুইয়ারদের মুখপত্র লিভিং এন্ড লাভিং ইন ডাইভার্সিটির চিফ এডিটর মারিয়া পালোটা - চিয়ারলি বলেন, কোন কোন মাইগ্রান্ট পরিবারের জন্য সমকামী যুগলদের দ্বারা বাচ্চাদের পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করা একটি বিরাট ঘটনা।

গাসান কাসিসেই বলেন, প্রতিটি অস্ট্রেলিয়ান যাতে একই অধিকার ভোগ করতে পারে তাই এখনো বৃহত্তর সামাজিক সংস্কার প্রয়োজন। 

১৯৭৩ সালের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশন সমকামিতাকে তাদের অসুস্থতা এবং মানসিক রোগের তালিকা থেকে বাদ দেয়।  কাসিসেই মনে করেন অনেক অভিবাসী কমিউনিটি এখনো সেক্সচুয়ালিটি এবং জেন্ডার নিয়ে পুরোনো ধ্যান ধারণা লালন করছে।  তিনি এইসব ধারণাকে বৈশ্বিক সমতার ক্ষেত্রে বাধা বলে মনে করেন। 

অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচারাল এলজিবিটিআই কমুনিটির ওপর ব্যাপক গবেষণা করার অভিজ্ঞতা থেকে ডিকিন ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ হেলথ এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মারিয়া পালোটা - চিয়ারলি বলেন, সত্যিকারের সামাজিক পরিবর্তন শুরু হয় পরিবার থেকে।

আপনার কোন বিষয়ে যদি সমস্যা এবং কারো সাথে কথা বলতে চান, তাহলে কল করুন লাইফলাইন ক্রাইসিস সাপোর্ট নাম্বার 131114-এ, সুইসাইড কল ব্যাক সার্ভিস 1300 659 467-এ, 1800Respect, অথবা 1800 737 732 -তে এবং কিডস হেল্পলাইন 1800 55 1800-এ। আরো তথ্যের জন্য ভিসিট করুন BeyondBlue.org.au এবং lifeline.org.au.

এসবিএসের জন্য ফিচারটি তৈরী করেছেন এমি চিয়েন-ইউ ওয়াং এবং বাংলায় অনুবাদ এবং উপস্থাপনা করলাম আমি শাহান আলম। 

পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন
আরো পড়ুন:

Share