অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হওয়াটা বহু অভিবাসীর কাছে খুবই কাঙ্খিত বিষয় হলেও পরিসংখ্যানে দেখা যায়, লোকজনের কাছে এর আকর্ষণ কমে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের সংখ্যা যেখানে বাড়ছে সেখানে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের আবেদন-সংখ্যা ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে কম হয়েছে।
২০১৮-১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন ১৩৮,০০০ অস্ট্রেলিয়ান রেসিডেন্ট। এই সংখ্যা এর আগের বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ কম।
সিনেট এস্টিমেটস-কে হোম অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট যে তথ্য প্রদান করেছে তাতে দেখা যায়, তখন থেকে এই চাহিদা বাড়ে নি। অক্টোবরের শেষ নাগাদ চার মাসে মোট ৪৮,২৫৫ টি আবেদনপত্র জমা পড়ে।
মাইগ্রেশন কাউন্সিল অফ অস্ট্রেলিয়ার সিইও কার্লা উইলশিয়ার এই চাহিদা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, এর পেছনে বহু কারণ রয়েছে। যেমন, আবেদন করার পর সিদ্ধান্তের জন্য অনেক সময় দু’বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
২০১৭ সালে সরকার নতুন আইনের প্রস্তাব করে। নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে নাগরিকত্ব লাভ করাটা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। সেজন্য তখন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার হিড়িক পড়ে যায়।
২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরে ৪৪০,০০০ এরও বেশি আবেদন জমা পড়ে। স্থায়ী অভিবাসীরা ভয় পাচ্ছিলেন যে, প্রস্তাবিত নতুন আইন পাশ হলে তাদেরকে “values test” দিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ইংরেজি জ্ঞান থাকতে হবে।
তবে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো সিনেটে পাশ হয় নি এবং রাজনৈতিক এজেন্ডা থেকেও বাদ পড়ে যায়।
তখন আবেদনের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এদিকে, সেই সময়েই অতিরিক্ত সিকিউরিটি চেক করা শুরু হয়। ফলে আবেদন প্রক্রিয়াকরণে অনেক সময় লাগতে থাকে এবং অপেক্ষার সময় বৃদ্ধি পায়।
ডিপার্টমেন্ট বলছে, আবেদনপত্রগুলো প্রক্রিয়াকরণের জন্য অতিরিক্ত ১১৫ জন পূর্ণকালীন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ হাতে জমে থাকা আবেদনের সংখ্যা কমে গিয়ে ১৪৭,০০০ এ দাঁড়িয়েছে।
চার ভাগের তিনভাগ আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে সময় লেগেছে ১৬ মাস আর শতকরা ৯০ ভাগ আবেদন প্রক্রিয়াকরণে সময় লেগেছে ২১ মাস।
বাস্তব বিষয়গুলো বাদ দিলে বলা যায়, কারও কারও জন্য নতুন একটি দেশের নাগরিক হবে কি হবে না সে বিষয়টি নির্ভর করে জাতীয়তা নিয়ে গর্ব, পরিচয় এবং বিভিন্ন আবেগী বিষয়ের উপর।
ইন্দোনেশিয়ান নারী টুটি গুনাওয়ান অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন গত ৫০ বছর ধরে। তিনি বলেন, এদেশের নাগরিক হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই।
তিনি বলেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার সম্মানহানি করার চেষ্টা করছেন না। তার কথায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে।
ইন্দোনেশিয়া দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি দেয় না। ১৯৪০ এর দশকে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন টুটি গুনাওয়ানের বাবা-মা। তার বড় ভাই ডাচদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল।
ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে তুলনা করে অস্ট্রেলিয়ার সমালোচনা করেন মিজ গুনাওয়ান।
অ-নাগরিকেরা অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দিতে পারেন না এবং কোনো কোনো সরকারি চাকরির জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হন না। যেমন, পুলিশ অফিসার।
এসব কারণে বিজনেস কনসালটেন্ট রাহমা সুলেমান ইন্দোনেশিয়ান পাসপোর্ট ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট গ্রহণ করতে চান না।
৪৭ বছর বয়সী রাহমা সুলেমান ২০১৩ সালে ব্রিসবেনে যান। তিনি তার স্বদেশ ইন্দোনেশিয়ায় বিদেশী হিসেবে বিবেচিত হতে চান নি। তিনি প্রায়ই সেখানে যান তার ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে।
তিনি আশা করেন যে, দ্বৈত-নাগরিকত্ব এর একটি সমাধান হতে পারে।
নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সংখ্যা আরও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, এর জন্য উপযুক্ত লোকের সংখ্যাও কমে গেছে, ফেডারাল সরকার পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসার সংখ্যা হ্রাস করেছে।
জুলাই-এ পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসার জন্য বার্ষিক কোটা ১৯০,০০০ থেকে কমিয়ে ১৬০,০০০ এ নামিয়ে আনা হয়েছে।
এই কোটার আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়নের আগেও, ২০১৮-১৯ সালে ১৬০,০০০ এর সামান্য কিছু বেশি সংখ্যক ভিসা ইস্যু করা হয়।
পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসার সংখ্যা কমানো হলেও টেম্পোরারি ভিসাধারীদের সংখ্যা বাড়ছে। যেমন, টেম্পোরারি স্কিলড ওয়ার্কার্স, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এবং ওয়ার্কিং হলিডে-মেকার্স ভিসা।
মিজ উইলশিয়ার বলেন, বহু-সাংস্কৃতিক অস্ট্রেলিয়ার উপর ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে।
হোম অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেন যে, অভিবাসন নীতিমালায় পরিবর্তনের ফলে নাগরিকত্বের আবেদনের সংখ্যা কমছে।
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।