গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় আরো দক্ষতা দেখাতে হবে
- সরকারের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে নেট মাইগ্রেশন কমিয়ে ২৫০,০০০-এ নামিয়ে আনা
- অভিবাসন পরিকল্পনার আরেকটি লক্ষ্য হল অস্থায়ী কাজের ভিসার সংখ্যা হ্রাস করে উচ্চ বেতনের এবং উচ্চ দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করা
প্রাক্তন পাবলিক সার্ভিস প্রধান মার্টিন পারকিনসন তাঁর ২০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে মাইগ্রেশন সিস্টেমে একটি 'বড় সংস্কার' আনতে রূপরেখা দিয়েছেন। এতে অস্ট্রেলিয়াকে 'স্থায়ীভাবে অস্থায়ী' বাসিন্দাদের একটি জাতিতে পরিণত হওয়া ঠেকাতে এবং কর্মীদের কম বেতন এবং শোষণ বন্ধ করতে সুপারিশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম
দুই বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় নেট মাইগ্রেশন অর্ধেক করার লক্ষ্যে অভিবাসন ঢেলে সাজাতে সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে।
দশ বছর মেয়াদি এই কৌশলটির লক্ষ্য হচ্ছে দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও'নিল অভিবাসন সংখ্যাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন এবং আরও নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত ব্যবস্থার জন্য রূপরেখা দিয়েছেন।
সরকারের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে নেট মাইগ্রেশন কমিয়ে ২৫০,০০০-এ নামিয়ে আনা।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় আরো দক্ষতা দেখাতে হবে
পরিবর্তনগুলির মধ্যে রয়েছে সমস্ত ভিসা আবেদনের জন্য একটি 'জেনুইন স্টুডেন্ট টেস্ট প্রবর্তন' এবং শিক্ষার্থী ও অস্থায়ী স্নাতক ভিসার জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার স্তর বৃদ্ধি করা।
গ্র্যাজুয়েট ভিসার আবেদনকারীদের আইইএলটিএস স্কোর ৬.৫ করতে হবে যা আগে ছিল ৬, এবং স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদনকারীকে ৬ স্কোর করতে হবে যা আগে ছিল ৫.৫।
পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে যে অস্থায়ী দক্ষ অভিবাসন কর্মী শূন্যতা পূরণ করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এটি অস্ট্রেলিয়ার "বর্তমান বা ভবিষ্যতের প্রয়োজনের জন্য কার্যকর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারেনি"।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে জমে থাকা অভিবাসন আবেদন বা ব্যাকলগ এবং হোম অ্যাফেয়ার্সের পুরোনো প্রযুক্তির সিস্টেম সমস্যাকে তীব্র করেছে।
মাইগ্রেশন সিস্টেমে সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থোনি আলবানিজি বলেছেন যে, "আমাদের এমন একটি মাইগ্রেশন সিস্টেম থাকা দরকার যাতে অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মী পেতে পারি, এবং যা নিশ্চিত করবে যে সিস্টেমটি সমস্ত অস্ট্রেলিয়ানদের স্বার্থে কাজ করছে।"
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় অস্ট্রেলিয়ার বন্ধ সীমানা উন্মুক্ত করার ১৩ মাস পর, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত নেট অভিবাসন সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ৮১ শতাংশ।
এতে দেশের জনসংখ্যা ৪ লক্ষ ৫৪ হাজারেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যার মধ্যে আছে বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর আগমন।
তবে সেই প্রভাবটি অস্থায়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে কারণ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রস্থানের সংখ্যা আগের স্তরে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
বাজেটের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে যে, এই আর্থিক বছরের শেষ নাগাদ নেট মাইগ্রেশন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, তবে এখনও প্রাক-মহামারী গড় থেকে অনেক বেশি।
আরও শুনুন
আগামী দুই বছরে মোট অভিবাসন অর্ধেকে কমিয়ে আনার ঘোষণা অস্ট্রেলিয়া সরকারের
SBS Bangla
17/12/202311:18
মাইগ্রেশন সংখ্যা নিয়ে মি. আলবানিজি বলেছেন, ফেডারেল সরকার এটি টেকসই স্তরে নিয়ে যেতে চায়।
তিনি বলেছেন যে পারকিনসন রিভিউতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দ্বারা অভিবাসন ব্যবস্থার অনিয়মগুলি উঠে এসেছে - এবং সরকার এটি বন্ধ করতে চায়।
প্রায় ২৫০,০০০ প্রাক্তন শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী পোস্ট-স্টাডি এবং মহামারী ভিসায় অবস্থান করছে। সেপ্টেম্বর থেকে, ৪০৮ কোভিড ভিসা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা শুরু হয়েছিল যে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে।
অভিবাসন ব্যবস্থায় সংস্কার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
অভিবাসন বিষয়ক ফেডারেল বিরোধী দলের মুখপাত্র ড্যান টেহান বলেন, মহামারী পরবর্তী সময়ে সরকার অভিবাসন নীতিটি ভালভাবে পরিচালনা করেনি।
তিনি বলছেন, কোভিড ভিসা আরো ছয় মাস আগে বন্ধ করা উচিত ছিল। তাদের উচিত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমানো।
তিনি বলেন, গত ১২ মাসে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি লোক এসেছে, যার ফলে মানুষ বাড়ি ভাড়ার সংকটে পড়েছে।
ডেলয়েটের অভিবাসন বিষয়ক বিশ্লেষক, ফিওনা ওয়েব বলেছেন যে অভিবাসন স্তর এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের চাপের মধ্যে যোগসূত্র পরিষ্কার নয়।
তিনি বলছেন, স্টুডেন্ট ভিসাধারীদের অস্ট্রেলিয়ায় শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকার চাপ, বিশেষ করে আবাসন সংক্রান্ত, অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। আবার এটাও ঠিক যে, অভিবাসীরা ব্যয় করে এবং কর দিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই, জীবনযাত্রার ব্যয়ের চাপ এবং মন্দার ঝুঁকি বোঝার ক্ষেত্রে এটি একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে।
মিজ ও'নিল তার ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত অভিজ্ঞতার মান উন্নত করা এবং কর্মক্ষেত্রে শোষণের সম্ভাবনা হ্রাস করার লক্ষ্য তুলে ধরেন।
এই ঘোষণায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হরি ধুকরল এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে বলেন, ইংরেজিভাষী দেশে বসবাস করার সময় ইংরেজিতে দক্ষতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া উচিত।
তবে চীনা স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী কাইলি যুক্তি দেন যে কথ্য ইংরেজিতে দক্ষতা গবেষণা-ভিত্তিক পড়াশোনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।
অভিবাসন পরিকল্পনার আরেকটি লক্ষ্য হল অস্থায়ী কাজের ভিসার সংখ্যা হ্রাস করা। এছাড়া ভিসার প্রক্রিয়া উন্নত করে লাল ফিতার দৌরাত্ম কমিয়ে উচ্চ বেতনের এবং উচ্চ দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করা।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ তে।