গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- অস্ট্রেলিয়ার আইনে ‘নো ফল্ট ডিভোর্স’ সমর্থন করে। অর্থাৎ এখানে যে কোনো এক পক্ষ অন্য পক্ষের সম্মতি বা ব্যাখ্যা প্রদান ছাড়াই বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিচ্ছেদে ইচ্ছুক স্বামী-স্ত্রী আদালতে না গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারেন্টিং এবং আর্থিক বিষয়গুলি নিষ্পত্তি করতে পারেন।
- অস্ট্রেলিয়ার আইন তালাকপ্রাপ্ত দম্পতিদের মামলা-মোকদ্দমার আগে মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতায় অংশ নিতে উৎসাহিত করে।
সোজা কথায় বলতে গেলে, বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে একটি সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। কিন্তু এই বিচ্ছেদের ফলে সংশ্লিষ্টদের জীবন নানাভাবে প্রভাবিত হয়। সবার মানসিক ও আর্থিক পরিস্থিতিতে বদল আসা, সন্তান থাকলে তাদের অভিভাবকত্ব নিয়ে বিরোধ, এরকম অনেক ব্যাপারে বাহ্যিক সহায়তা ছাড়া একটি সন্তোষজনক নিষ্পত্তিতে পৌঁছানো খুবই কঠিন হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের অংশ হিসাবে স্বামী এবং স্ত্রীকে প্রমাণ করতে হয় যে এই সম্পর্ক আর ঠিক হওয়া সম্ভব নয়। এর অংশ হিসেবে তাদের অবশ্যই ১২ মাসেরও বেশি সময় ধরে আলাদা থাকার প্রমাণ দিতে হয় এবং সন্তানের অভিভাবকত্ব ও অন্যান্য আর্থিক ব্যবস্থায় সম্মত হতে হয়।
এলেনর লাও অস্ট্রেলিয়ান আইনী সংস্থা ল্যান্ডার অ্যান্ড রজার্স-এর একজন অংশীদার। তিনি ১৫ বছর ধরে পারিবারিক আইন অনুশীলন করছেন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিবাহবিচ্ছেদ নিষ্পত্তিতেও তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
মিজ লাও বলেন, দম্পতিরা ডিভোর্সের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তাদের অবশ্যই প্যারেন্টিং এবং আর্থিক বিষয়গুলি আনুষ্ঠানিকভাবে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করতে হবে।
“এমনকি আদালতও দেখতে চায় যে উভয়পক্ষ অন্তত নিজেরা একটি সেটলমেন্টে যাওয়ার চেষ্টা করেছে,” তিনি বলেন।
According to the Australian Bureau of Statistics, the median age for divorces in 2020 was 45.6 for males and 42.8 for females. The median duration of marriage to divorce was 12.2 years, and almost half of the divorces granted were of couples with children under 18. Credit: fabio formaggio / 500px/Getty Images
ভ্যালেরি নর্টন ১২ বছর ধরে একজন স্বীকৃত ফ্যামিলি ডিসপিউট রেজোলিউশন প্র্যাকটিশনার বা এফডিআরপি ছিলেন।
তিনি জানান, পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিচ্ছেদে ইচ্ছুক দম্পতির প্রায় ৯০ শতাংশ আদালতে না গিয়ে নিজেরাই বিরোধ নিষ্পত্তি করে ফেলতে পারেন।
মধ্যস্থতার মাধ্যমে প্রচেষ্টা করার আগে, মিজ নর্টন সাফল্যের সম্ভাবনা কতটুকু তা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি আগে প্রত্যেকের সাথে আলাদাভাবে দেখা করি। তারপরে বোঝার চেষ্টা করি আদালতে যাওয়ার আগেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের একমত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা।“
There are many considerations to balance when you are going through a divorce. Australian state, territory and federal governments fund several emotional, financial and legal support services to assist those going through a separation. Source: Moment RF / Kmatta/Getty Images
মধ্যস্থতার সময় মিজ নর্টন দুই পক্ষ এবং তাদের আইনজীবীদের একটি সেটলমেন্ট বা নিষ্পত্তিতে আসতে আলোচনা করায় সহায়তা করেন। তিনি মানসিক অস্থিরতাকে দূরে সরিয়ে তার পরিবর্তে বাস্তবসম্মত সমাধান পাওয়ার দিকে জোর দেন, যেন এর ফলে দুই পক্ষ এবং যদি তাদের কোনো সন্তান থেকে থাকে তারাও উপকৃত হয়।
মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিখুঁত সমাধান বের হয়ে আসবে তা কিন্তু নয়। তবে দুই পক্ষই যেন ভাবতে পারে যে এটি একটি ন্যায্য সমাধান।ভ্যালেরি নর্টন, ফ্যামিলি ডিসপিউট রেজোলিউশন প্র্যাকটিশনার ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
অস্ট্রেলিয়ার আইন ‘নো ফল্ট ডিভোর্স’কে সমর্থন করে। এর অর্থ হল যে কোনো এক পক্ষ অন্য পক্ষের সম্মতি ছাড়াই বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে পারে এবং কেন তারা বিবাহবিচ্ছেদ করতে চান তার কোনও কারণ দর্শানোর প্রয়োজন নেই।
প্রচলিত জনমত যদিও ভিন্ন কথা বলে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিচ্ছেদের পরে তাদের সম্পত্তি ও অন্যান্য সম্পদ সমান দুই ভাগে ভাগ করা হয় না। আইনজীবী এলেনর লাও বলেন, উভয় পক্ষকে অবশ্যই আইনী পরামর্শ নিতে হবে এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
The Australian legal system considers a number of variables to determine how property and assets are to be divided between separating parties. Source: Moment RF / boonchai wedmakawand/Getty Images
সম্পত্তির ক্ষেত্রে নিষ্পত্তির ব্যাপারে আরেকটি ব্যাপারও বিবেচনা করতে হয়, তা হচ্ছে ভবিষ্যতে উভয় পক্ষের চাহিদা কতটুকু থাকবে।
আর এটি নির্ণয়ের জন্যে অন্য অনেক কিছুর সাথে দুজনের বয়স, ভবিষ্যতে উপার্জনের সক্ষমতা এবং শারীরিক সুস্থতার বিষয়গুলো বিবেচনা করে সম্পত্তির কত অংশ কীভাবে ভাগ হবে তা ঠিক করা হয়।
পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি মধ্যস্থতার সময় উভয় পক্ষ একটি আর্থিক এবং প্যারেন্টিং চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে। আইনজীবীরা প্রায়শই এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ক্লায়েন্টদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এমনকি আলোচনায়ও অংশ নিয়ে থাকেন। একবার চুক্তিতে পৌঁছে গেলে সে সম্পর্কিত আদেশনামা আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দায়ের করা যেতে পারে।
Family Dispute Resolution Practitioners often work together with spouses and their lawyers during mediation to reach an agreement. Experts advise divorcing couples with children to consider their kids' wellbeing and needs during negotiations. Credit: Maskot/Getty Images
কোনো সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগে বা সম্পর্কের সময়কালীন একটি আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষর করা অনেক ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বিচ্ছেদের সময়কালীন চাপ এড়াতে সহায়ক হতে পারে। এ ধরণের আর্থিক চুক্তি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
যাদের সম্পদের পরিমাণ কম এবং যাদের ব্যক্তিগত আইনজীবী বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের সামর্থ্য নেই তারা লিগ্যাল এইড বা কমিউনিটির আইনী সহায়তা কেন্দ্রগুলো থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
Family Dispute Resolution Practitioners are registered and certified professionals, accredited by the Australian Attorney-General's Office. Source: Moment RF / d3sign/Getty Images
যদিও রিলেশনশিপস অস্ট্রেলিয়া আদালতে ক্লায়েন্টদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না, তবে তারা মামলা-মোকদ্দমার মধ্য দিয়ে যাওয়া পরিবারগুলিকে মানসিক সহায়তা এবং কাউন্সেলিং পরিষেবা সরবরাহ করতে পারে।
এ সংক্রান্ত পরামর্শের জন্যে স্থানীয় রিলেশনশিপস অস্ট্রেলিয়া অফিসে যোগাযোগ করে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা যেতে পারে। অথবা পারিবারিক সম্পর্ক বা ফ্যামিলি রিলেশনশিপস অ্যাডভাইস লাইনেও কল করা যায়।
আইনী ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আপনার কোনো সন্তান থেকে থাকে তাহলে বিবাহবিচ্ছেদের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার তা হল সেই সন্তানের ভবিষ্যতের চাহিদা এবং সুস্থতা।
আর এই প্রক্রিয়াজনিত চাপ থেকে বের হয়ে আসার প্রথম ধাপ হচ্ছে মানুষের সম্পর্ক যে বদলাতে পারে তা মেনে নেয়া।
সংবেদনশীল অবস্থায় মানসিক সহায়তার জন্য 13 11 14 এ লাইফলাইন বা 1300 22 4636 এ বিয়ন্ড ব্লু-র সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ক পরামর্শ জন্যে ফোন নম্বর হচ্ছে 1800 050 321।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে ক্লিক করুন উপরের অডিও প্লেয়ার বাটনে।
Resources
- Learn more about
- The