পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিকে সংশোধন নয়, প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন-অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সংস্কৃতি-ভাষাগত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠীগুলো 'কোয়েরসিভ কন্ট্রোল' ব্যাপারটিকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এ ধরণের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের কথাগুলো বলতে পারছে।
গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিকে সংশোধন নয়, প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
- "সাংস্কৃতিক-সামাজিক প্রত্যাশা হচ্ছে নারীদের হুকুমের অধীনে থাকতে হবে, তাই তাদেরকে বিচ্ছিন্ন রাখা বা তাদের ওপর আধিপত্য বজায় রাখার বিষয়গুলো তারা বুঝতে পারে না, তাই এই বিষয়গুলো চিহ্নিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।"
- 'জবরদস্তিমূলক আচরণকে' অপরাধ হিসেবে গণ্য করা সমন্বিত কৌশলের অংশ হওয়া উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী আন্না (ছদ্মনাম) জানান, তিনি কীভাবে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, এই নির্যাতনের ফলে নিজের প্রতি আমি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, জীবনে কিছু করতে কোন উৎসাহ পেতাম না।
৩৬ বছর বয়সী আন্না পড়াশুনার জন্য ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন এবং এখানেই তিনি সেই ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করেন যাকে তিনি তাঁর জীবনের ভালবাসার মানুষ ভেবেছিলেন।
তিনি বলেন যে বিয়ের পরে তার স্বামীর আচরণের পরিবর্তন ঘটে .. এবং তিনি স্মৃতি খুঁড়ে বলেন যে, তার সাথে 'জবরদস্তি আচরণের' সব কিছুই সে করেছে, যেমন ভয় দেখানো ও বিচ্ছিন্ন করে রাখা।
তিনি বলেন, "প্রথম দিন থেকে জিনিসগুলি ঠিক ছিল না, তবে আমি বুঝতে পারিনি। এটা কি নির্যাতন, নাকি পারিবারিক সহিংসতা, ঠিক কী তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি ধরে নিয়েছিলাম, এটা হয়তো বিবাহিত জীবনের একটি অংশ।"
বহুভাষা-সংস্কৃতি থেকে আসা নারীদের প্রতিনিধিত্বকারী বেশ কয়েকটি গ্রুপ নিউ সাউথ ওয়েলস তদন্ত কমিটিকে এই ধরণের নির্যাতন সম্পর্কে নির্যাতিতদের বোঝার অভাব এবং তাদের প্রতি পরামর্শ এবং শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করেছে।
ড: মঞ্জুলা ও'কনর হলেন অস্ট্রেলাসিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হেলথের নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, "সাংস্কৃতিক-সামাজিক প্রত্যাশা হচ্ছে নারীদের হুকুমের অধীনে থাকতে হবে, তাই তাদেরকে বিচ্ছিন্ন রেখে বা তাদের ওপর আধিপত্য বজায় রাখার বিষয়গুলো তারা বুঝতে পারে না, তাই এই বিষয়গুলো চিহ্নিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।"
কিছু অস্ট্রেলিয়ান রাজ্য এবং অঞ্চলগুলি তাদের সিভিল আইনের অধীনে 'কোয়েরসিভ কন্ট্রোল' বিষয়ে অবগত, কিন্তু টাসমানিয়া হল একমাত্র অস্ট্রেলিয়ান রাজ্য যারা নির্দিষ্টভাবে এর বৈশিষ্ট বিবেচনায় এটিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।
কুইন্সল্যান্ড গত সপ্তাহে ঘোষণা করে যে তারা 'কোয়েরসিভ কন্ট্রোল' আইন তদন্তের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
নেমাত খারবাউতলি, যিনি পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে সেবাদানকারী সংগঠন মুসলিম উইমেন অস্ট্রেলিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনি বলেন যে 'জবরদস্তিমূলক আচরণকে' অপরাধ হিসেবে গণ্য করা সমন্বিত কৌশলের অংশ হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, "মুসলিম মহিলারা পুলিশ এবং সরকারী সংস্থার মধ্যে বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের মত বিষয়ে প্রায়শই তাদের সংগঠনকে রিপোর্ট করে। আমাদের এই সমস্যাটিতে কমিউনিটির দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন নির্যাতিত নারীকে সংশোধন করা নয়। তা না হলে বিগত কয়েক দশক ধরে যে অগ্রগতি হয়েছে তা থেকে আবারও আমরা পিছিয়ে যাবো।
পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে কাজ করে এমন প্রধান প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রয়েল অস্ট্রেলিয়ান এবং নিউজিল্যান্ড কলেজ অফ সাইকিয়াট্রিস্ট নিউ সাউথ ওয়েলসে 'কোয়েরসিভ কন্ট্রোল' আইন প্রবর্তনের জন্য সক্রিয় সমর্থন জানিয়েছে।
সংসদীয় কমিটি জুনে তাদের প্রতিবেদন দেবে।
পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন
পারিবারিক বা যৌন সহিংসতার বিষয়ে আরো জানতে বা সাহায্যের জন্য ভিজিট করুন: হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়া
এবং পারিবারিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হলে সাহায্যের জন্য ফোন করুন 1800RESPECT বা 1800 737 732 এই নাম্বারে
ট্রান্সল্যাটিং এন্ড ইন্টারপ্রেটিং সার্ভিসের জন্য কল করুন 131 450 এই নাম্বারে (২৪ ঘন্টা) এবং আপনি যে প্রতিষ্ঠানের সার্ভিসটি চান তা উল্লেখ করুন
আরো দেখুনঃ