অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের সঙ্গে বুশফায়ারের বিষয়টিকে কোনোভাবে অস্বীকার করা যায় না। বুশফায়ার নেভাতে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী ফায়ারফাইটাররা।
ভলান্টিয়ার ফায়ারফাইটার হিসেবে কাজ করতে হলে কী করতে হবে। ৪০ বছর বয়সী অভিজ্ঞ ফায়ারফাইটার, কুইন্সল্যান্ড ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস এর সুপানিন্ডেন্ট ওয়েন ওয়াল্টিসবুল বলেন, আপনার স্থানীয় ব্রিগেডের সঙ্গে কাজ করাটা খুব কঠিন কোনো বিষয় নয়। তিনি ব্রিসবেন রিজিওনাল রুরাল ফায়ার সার্ভিস-এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার আগে ব্যাকগ্রাউন্ড চেকিং করা হয় এবং আবেদনকারী এ কাজের জন্য উপযুক্ত কিনা তা দেখা হয়। অনুমোদন হয়ে গেলে সেই ব্যক্তিকে কয়েক মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর পর তিনি কাজ শুরু করতে পারেন।
এ কাজে নামার আগে লোকজনকে চিন্তা করে দেখার পরামর্শ দেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট ওয়াল্টিসবুল। তিনি স্বীকার করেন যে, নবাগত ভলান্টিয়ারদের সকলেই দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করতে পারেন না।
৩১টি এজেন্সির প্রতিনিধিত্ব করে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস AFAC. এর চিফ একজিকিউটিভ অফিসার স্টুয়ার্ট এলিস বলেন, দৈনন্দিন কাজে সুবিধার জন্য ব্রিগেডগুলোর বিভিন্ন রকম দক্ষতা-সম্পন্ন স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন।
সর্বশেষ আদমশুমারিতে দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ানের জন্ম হয় বিদেশে হয়েছে কিংবা তাদের বাবা-মায়ের অন্তত একজনের জন্ম বিদেশে হয়েছে। জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও বেশি লোক ঘরে ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় কথা বলেন।
মেল চ্যাম্পিওনস অফ চেঞ্জ ২০১৮ ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি গ্রুপ রিপোর্ট অনুসারে, বহু-সাংস্কৃতিক অস্ট্রেলিয়ার প্রতিফলন ঘটাতে ব্রিগেডগুলোতে বিভিন্ন সংস্কৃতির ও লিঙ্গের লোকদের প্রয়োজন রয়েছে।
জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। তবে পেইড ও ভলান্টিয়ার ফায়ারফাইটিং ওয়ার্কফোর্সে কর্মরত নারীর সংখ্যা মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ।
বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির লোকদেরকে স্বেচ্ছাসেবী ফায়ারওয়ার্কার হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন এলিস।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ওয়াল্টিসবুল একমত হন যে, অভিবাসী কমিউনিটিগুলোর সঙ্গে কাজ করার সময়ে বহু-ভাষিক ফায়ারফাইটার সঙ্গে থাকলে অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়।
ফ্রান্সে জন্ম-নেওয়া ফিফো কর্মী ভার্জিনিয়া ইস্টউড গত ১১ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। কুইন্সল্যান্ডের মাউন্ট কিলকোয়-স্যান্ডি ক্রিক রুরাল ফায়ার ব্রিগেডে তার স্বামী যোগদান করেন। এর পর তিনি রুরাল ফায়ারফাইটার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ইস্টউড স্বীকার করেন, ফায়ারফাইটার হিসেবে ভলান্টিয়ারিং করা এবং একজন কর্মজীবি মা হিসেবে, দু’বাচ্চার মা হিসেবে কাজ করাটা অনেক কঠিন। কাজ থেকে ডাক আসলে তাকে যেতে হয়। সে সময়ে তার পরিবার ও কমিউনিটি তাকে সাহায্য করে।
তিন বছর হলো ইস্টউড ব্রিসবেন ছেড়ে রুরাল কুইন্সল্যান্ডে গিয়েছেন। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি স্থানীয় ব্রিগেডে ভলান্টিয়ারিং করছেন।
স্টুয়ার্ট এলিস বলেন বুশফায়ার সিজন এখনও শেষ হয় নি। ভিক্টোরিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় এখনও আগুন জ্বলছে। বিভিন্ন শহরের ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসগুলোতে ভলান্টিয়ার হওয়ার জন্য উৎসাহী ব্যক্তিরা যোগাযোগ করছেন।
এদিকে, শহরাঞ্চলেরর বাইরে যে-সব স্থানের জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম, সে-সব অঞ্চলের ব্রিগেডগুলোতে কম দরখাস্ত জমা পড়ছে।
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।