গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন অস্ট্রেলিয়ার বুশফায়ার পরিস্থিতি মোকাবেলা করা নিয়ে বেশ চাপে পড়েছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বুশফায়ার নিয়ে একটি রয়েল কমিশন গঠন করতে ক্যাবিনেটে প্রস্তাব দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
এই রয়েল কমিশন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো, রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে এর অপারেশনাল প্রতিক্রিয়া এবং ফেডারেল সরকারের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করবে।
মিঃ মরিসন স্বীকার করেছেন যে, এ বিষয়ে ফেডারেল সরকারের জোরালো এবং দ্রুত ভূমিকার জন্য জনগনের দাবি বেড়ে চলেছে।
মিঃ মরিসন সরকারের জলবায়ু নীতির সম্ভাব্য পরিবর্তনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, সরকারের কার্বন নিঃসরণ লক্ষমাত্রা 'বাড়াতে' হবে।
প্যারিস এগ্রিমেন্ট অনুসারে অস্ট্রেলিয়া অঙ্গীকার করেছে যে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তারা ২৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনবে যা ২০০৫ সালের সমান।
মিঃ মরিসন বলেন, সরকার কার্বন ট্যাক্স প্রয়োগ ছাড়া, বিদ্যুতের দাম না বাড়ানো অথবা ঐতিহ্যবাহী শিল্প বন্ধ না করেই কার্বন নিঃসরণের নীতিকে আরো এগিয়ে নেবে।
সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিনামকে মনে রেখেই নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমরা যে ইস্যুটি মোকাবেলা করছি তা হলো আরো উষ্ণ, শুস্ক এবং দীর্ঘ দাবানল মৌসুম, এটি এখন প্রতিষ্ঠিত। এ বিষয়ে কি করতে হবে এটা নিয়ে শুধু কালক্ষেপন করা যাবে না। আমাদের এই বিষয়ে আরো এগিয়ে যেতে হবে এবং আমাদের পরিবেশ রক্ষার নীতি ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে করতে হবে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
বিরোধী নেতা এন্থনি আলবানিজি বলেন, লেবার রয়েল কমিশনকে সমর্থন করবে, তবে তিনি এর মাধ্যমে স্কট মরিসন উত্তর দেয়া এড়িয়ে যাবেন তা দেখতে চান না।
তিনি বলেন, "তিনি তার কথায় 'বাবল' 'গালগল্প ' এগুলি বলে চলেছেন, এবং আমরা শুনতে চাই না যে তিনি আগামী দিনগুলোতে বলবেন যে 'আমি উত্তর দেব না, কারণ এটা রয়েল কমিশন দেখছে'। তাই আমরা সরকারের কার্যক্রমের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে চাই, এবং যা অপর্যাপ্ততা আছে তা দূর করার প্রচেষ্টা দেখতে চাই।"
মিঃ আলবানিজি বলেন, কার্বন নিঃসরণ হিসাব নিয়ে সরকারের চাতুরী বন্ধ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ার মত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হিসাব করতে ক্যারি ওভার ক্রেডিট ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যেটি পূর্বের আন্তর্জাতিক লক্ষমাত্রাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ নিয়ে পূর্বের কিয়োটো ক্লাইমেট চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার সাথে প্যারিস এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী বর্তমান নিঃসরণ লক্ষমাত্রাকেও হিসেবে নিতে হবে।
গত ডিসেম্বরের ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্সে অস্ট্রেলিয়া তাদের কার্বন নিঃসরণের ক্যারি ওভার ক্রেডিট ব্যবহার নিয়ে সমালোচনার মধ্যে পড়েছিল।
মিঃ মরিসন বলছেন তারা এখন ক্যারি ওভার ক্রেডিট ব্যবহার করবেন না।
তিনি বলেন, "ক্যারি ওভার ক্রেডিট ব্যবহারের সুযোগ আছে, এবং পূর্বে তা ব্যবহার করা হয়েছিল। এবং যদি তা দরকার হয় তবে সরকারের নীতি হচ্ছে ভবিষ্যতে তা ব্যবহার করা। কিন্তু আমাদের নীতি হচ্ছে নিঃসরণ কমানো এমনভাবে যাতে বেপরোয়া নীতি ও লক্ষ্য থেকে অস্ট্রেলিয়ানদের জীবিকা ও আয় রক্ষা করা যায়।"
গ্রীন এম পি এডাম ব্যান্ডট বলেন, ক্যারি ওভার ক্রেডিটের ওপর নির্ভর করা গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, "যদি স্কট মরিসন এসব ভূয়া একাউন্টিং ক্রেডিট ব্যবহার করতে না চান তবে তার উচিত এটা বাদ দেয়া। স্কট মরিসন দু'মাস আগে আন্তর্জাতিক ক্লাইমেট আলোচনা ভণ্ডুল করেছেন। কারণ, তিনি ঐসব ভূয়া হিসাব ব্যবহারের ওপর নির্ভর করতে চেয়েছিলেন। যদি তিনি তাদের ক্লাইমেট পলিসি পুনঃপরীক্ষা করতে চান তবে তার উচিত ঐসব ভূয়া হিসেবের চাতুরী বাদ দেয়া এবং যত দ্রুত সম্ভব অস্ট্রেলিয়াকে শূন্য নিঃসরণের দিকে নিয়ে যাওয়া।"
আরো পড়ুন: