কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী শুরু হওয়ার পর প্রায় তিন বছর হতে চলল। শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কী রকম প্রভাব পড়ছে তা বোঝার চেষ্টা করছেন গবেষকরা।
রোড আইল্যান্ডের হ্যাসব্রো হসপিটালে নিউরোডেভেলপমেন্টাল পেডিআট্রিসিয়ান হিসেবে কাজ করেন বীরেন ডি’সা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে-সব এলাকায় করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রাদূর্ভাব দেখা গেছে, এটি সেসব এলাকার মাঝে অন্যতম।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে এক বছর বয়সী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী ২৯০ জন শিশুর ওপরে বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা করছেন প্রফেসর ডি’সা। কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার আগে থেকেই তার এই গবেষণা চলছে।
তিনি শিশুদের ভার্বাল বা বাচনিক, মোটর এবং সামগ্রিকভাবে পারফর্মেন্সের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখতে পান। সামাজিক-অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নিম্ন-স্তরের পরিবারগুলো থেকে আসা, এবং ছেলে শিশুদের মাঝে তিনি এ প্রবণতা বেশি দেখতে পান।
জাতিসংঘের শিশু-বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব “দরিদ্র দেশগুলোতে শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হবে এবং দরিদ্র প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে এবং যারা অসহায় ও অনগ্রসর, তাদের ওপরে সবচেয়ে বেশি পড়বে”।
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডি’সা বলেন, ছোট ছোট বহু শিশু দেখতে পায় যে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের কেয়ারার ও রুটিনে পরিবর্তন এসেছে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি চিলড্রেন হসপিটালের ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট অ্যাডাম গুস্টেলাও দীর্ঘমেয়াদী সোশাল আইসোলেশন থেকে উদ্ভূত হওয়া সেই একই রকম প্রবণতা লক্ষ করেন।
২০২০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত এর আগের এক বছরের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, নিউ সাউথ ওয়েলসের ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টে ১৮ বছরের কম-বয়সীদের মাঝে আত্মঘাতী হওয়া ও নিজের ক্ষতিসাধনের প্রবণতা ২০১৯ সালের সেই একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রফেসর গুস্টেলা বলেন, ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টে সেবা নিতে আসা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য-সমস্যা বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক।
মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবিদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। প্রফেসর গুস্টেলা বলেন, সেজন্য মানুষ ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টগুলোতে যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুলে না গিয়ে ঘরে বসে পড়াশোনা করাটা শিশুদের জন্য অনেক কঠিন।
রয়্যাল চিলড্রেন’স হসপিটাল মেলবোর্নের পেডিআট্রিসিয়ান ড. অ্যানথিয়া রোডস হাসপাতালটির ন্যাশনাল চাইল্ড হেলথ পোল-এরও ডাইরেক্টর।
যাদের ঘরে শিশু সন্তান আছে এ রকম ২০০০ অস্ট্রেলিয়ান পরিবারের ওপরে পরিচালিত একটি ত্রৈমাসিক জরিপে দূর-শিক্ষণ লাভে তাদের অভিজ্ঞতা এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়।
ড. রোডস বলেন, তুলনামূলকভাবে দরিদ্র ও অসহায় পরিবারগুলোর শিশুরা এক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে আছে।
অ্যাডাম গুস্টেলা ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির ব্রেইন অ্যান্ড মাইন্ড সেন্টারেও প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, চলমান কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি কমাতে এমনভাবে কাজ করতে হবে, যেন শিশুরা স্কুলে যেতে পারে।
শিশুরা, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা যেন মনস্তাত্ত্বিকদের কাছে সহজে যাওয়ার সুযোগ পায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে যেন পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী নিশ্চিত করা হয়; বিশেষত, শিশুরা যেন শ্রেণি-কক্ষে পূর্ণকালীন শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়, সেজন্য স্টেট ও ফেডারাল পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের প্রতি একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
ড. রোডস বলেন, বিভিন্ন স্টেটে বিগত ছয় মাসে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য খাতে মনোযোগ প্রদান ও অর্থায়ন বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও, এখনও উন্নতির সুযোগ রয়েছে।
শ্রোতাবন্ধুরা, দরকার হলে আপনি লাইফলাইন ক্রাইসিস সাপোর্টে কল করতে পারেন 13 11 14 নম্বরে, সুইসাইড কল ব্যাক সার্ভিসে 1300 659 467 নম্বরে কিংবা কিডস হেল্পলাইনে 1800 55 1800 নম্বরে।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: