করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর প্রাদূর্ভাবের পর বিশ্বজুড়ে অগণিত ব্যক্তি অফিস বা কর্মস্থল ছেড়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা ঘরে থেকে কাজ করা শুরু করেছে।
এ রকম একজন, অ্যাডেকো গ্রুপের ব্যাংকক-ভিত্তিক বিজনেস ডাইরেক্টর মিস্টার অ্যাশলি অ্যালকক বলেন, ঘরে থেকে কাজ করার কারণে সন্তানদেরকে তিনি বেশি সময় দিতে পেরেছেন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
তিনি লক্ষ করেন যে, ২০১৮ কিংবা ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে উৎপাদনশীলতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়টি তার মাঝে চিন্তার উদ্রেক করে।
তিনি বলেন, এ বছর ডেল্টার মতো কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে লকডাউন জারি করা হয়। এটি তার জন্য গবেষণার সুযোগ নিয়ে আসে। এ সময়ে ম্যাকোয়েরি ইউনিভার্সিটির মাস্টার অফ বিজনেস স্টাডিজ-এর অংশ হিসেবে তিনি খতিয়ে দেখেন যে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম এবং অফিসের ক্ষেত্রে কোনটি বেশি উৎপাদনশীল।
ম্যাকোয়েরি বিজনেস স্কুলের অর্থনীতির অধ্যাপক মারোশ সারভাটকা ছিলেন মিস্টার অ্যালককের সুপারভাইজর।
তিনি বলেন, একটি ব্লাইন্ড ফিল্ড এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে বিপণন কর্মীদেরকে তাদের ‘নিজের পছন্দে’ ঘরে থেকে কিংবা অফিসে গিয়ে কাজ করা কিংবা বাধ্য হয়ে ঘরে থেকে কিংবা অফিসে গিয়ে কাজ করার ভিত্তিতে মোট ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়।
অ্যাশলি অ্যালকক বলেন, তার গবেষণায় দেখা যায়, কর্মীরা যখন অফিসে গিয়ে কাজ করে, তখন সামগ্রিকভাবে তারা অত্যন্ত উৎপাদনশীল। আর, যারা অফিসে গিয়ে কাজ করাটা বেছে নিয়েছিল, তারা সম্মিলিতভাবে অন্যান্য দলগুলোর চেয়েও বেশি উৎপাদনশীল ছিল।
এদিকে, যে দলটি ঘরে থেকে কাজ করার বিষয়টি বেছে নিয়েছিল, তারা তাদের চেয়ে বেশি উৎপাদনশীল ছিল, যাদের কর্মস্থল বাছাই করার কোনো সুযোগ ছিল না।
আর, এসবের বাইরে, কর্মজীবি বাবা-মায়েরা, বিশেষত, মায়েরা সবচেয়ে ভাল করেছে।
এর বিপরীতে, নতুন গ্রাজুয়েটরা, যারা ঘরে থেকে তাদের চাকরির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাদের উৎপাদনশীলতা ছিল বাকি সব গ্রুপের চেয়ে কম।
মিস্টার অ্যালকক বলেন, উভয় গ্রুপই, যাদেরকে অফিসে এবং ঘরে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং যারা হুবহু একই অনলাইন মডিউল সম্পন্ন করেছে, সেক্ষেত্রে অফিসে কাজ করা কর্মীরা ঘরে থেকে কাজ করাদের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি উৎপাদনশীল ছিল।
এর কারণ জানার জন্য এখনও বিশ্লেষণ করছেন তিনি। তার মতে, অফিসে যারা কাজ করেছেন তারা হয়তোবা সিনিয়র সহকর্মীদের আশেপাশে ছিলেন এবং তারা কীভাবে কাজ করেন সেগুলো লক্ষ করেছেন।
প্রফেসর সারভাটকা বলেন, বিপণন কর্মীদের ওপর এই গবেষণাটি পরিচালিত হলেও এর ফলাফল সাধারণভাবে যে-কোনো ব্যবসা বা যে-কোনো দেশেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গত সেপ্টেম্বরে একটি প্রডাক্টিভিটি কমিশন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর আগে, প্রায় ৮ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও ঘরে থেকে কাজ করতেন।
অস্ট্রেলিয়ার বহু অঙ্গ-রাজ্যে স্টে-অ্যাট-হোম নির্দেশনার পর এটি বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়। নিষেধাজ্ঞাগুলো ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হলেও এই হার বজায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রফেসর সারভাটকা বলেন, অদূর ভবিষ্যতে বহু কোম্পানি তাদের কর্ম-পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনবেন বলে তিনি ধারণা করছেন। তিনি আশা করছেন যে, কাজের নতুন মডেলে কর্মীদেরকে আরও বেশি ফ্লেক্সিবিলিটি দেওয়া হবে, যেন তারা কর্মস্থল পছন্দ করার সুযোগ পান।
তবে, অ্যাশলি অ্যালকক সতর্ক করেন যে, ব্যবসাগুলোর পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিবর্তন আনার আগে তাদের উচিত এটা খতিয়ে দেখা যে, এটি শেষ পর্যন্ত কার্যকর হবে কিনা।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।