ঘর থেকে কাজ করার সুযোগ অনেকরই নেই, কিন্তু যাদের সুযোগ আছে তারা বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
ব্যাংকিং পেশায় কর্মরত মিঃ খাইরুল আলম মনে করেন বাড়ী থেকে কাজ করার বেশ কিছু সুবিধা আছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সুবিধা ট্রাভেল টাইম বেঁচে যাচ্ছে। তাছাড়া সময়মত অফিসে যাওয়া কিংবা ঘরে ফেরার বাধ্যবধকতা নেই।
"আরেকটি সুবিধা হচ্ছে নিজের সময়টা ম্যানেজ করা যাচ্ছে। এখানেও হয়তো নয়টা থেকে পাঁচটা কাজের সময়ের বিষয় আছে, তবে বাসা থেকে কাজ করলে এই ধরাবাঁধা নিয়ম থেকে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়। তাছাড়া অনেকেই যেহেতু বাসা থেকে কাজ করছে তাই তাদের সাথে এপয়েন্টমেন্ট বুক করা বা কন্ডাক্ট করা অনেকটাই এখন ফ্লেক্সিবল।"
তবে এতো সুবিধা থাকলেও বাড়ী থেকে কাজ করার কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে।
মিঃ আলম বলেন, "অনেক সময় প্রফেশনাল কিছু এপয়েন্টমেন্ট থাকে, সেসময় আপনাকে দেখতে হবে আপনার ছোট বাচ্চারা আপনার আশেপাশে কি করছে। এছাড়া অফিসের পরিবেশে সবসময় কাজের টুল হাতের কাছে পাওয়া যায়, যেটা আবার ঘরে থাকে না।”"তবে এই পরিস্থিতিতে 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম'-এই সুবিধা দিতে গিয়ে আমার অফিস এমন কিছু বিষয় ইমপ্লিমেন্ট করেছে যা করতে হয়তো আরো দু'তিন বছর সময় নিতো।"
Khairul Alam Source: Khairul Alam
ডিপার্টমেন্ট অফ এনভায়রনমেন্ট, ল্যান্ড, ওয়াটার এন্ড প্ল্যানিং-এ কাজ করছেন মিঃ সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনিও মনে করেন, অফিসে যাওয়া আসার বিপুল সময় বেঁচে যায় ঘরে কাজ করলে।
"আমাকে প্রতিদিন অফিসে যেতে এক ঘন্টা দশ মিনিট সময় লাগে, তার মানে আমার লাইফ থেকে প্রায় দুঘন্টা ত্রিশ মিনিট আস্তে যেতে চলে যায়, তো আমি এই সময়টা বাঁচাতে পারছি। এর সাথে ফিউল কস্ট, গাড়ির ব্যবহার, ট্রেনের টিকেট - সেই টাকাটাও আমার বেঁচে যাচ্ছে। তাছাড়া আরো গভীরে গেলে বলতে হয় আমি কার্বন এমিশন কমাতে সাহায্য করছি, এটা একটা পরিবেশগত সুবিধা দিচ্ছে সার্বজনীনভাবে।"
তিনি বলেন, ঘরে কাজ করার পাশাপাশি পরিবারের সাথে সময় দেয়া আগের চেয়ে বেশি সম্ভব হচ্ছে।
"আমি বাড়ির কাজে অংশ নিতে পারছি, রান্না, বাজার, গার্ডেনিং ইত্যাদি সময়মত করতে পারছি। আগে এই কাজগুলো আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। আমি পাঁচটাতে যদি কাজ শেষ করতাম , আমার বাসায় আসতে আসতে সাড়ে ছয়টা বেজে যেত। তাই আমি মনে করি পরিবারকে সময় দেয়ার মত যথেষ্ট সময় আমি পাচ্ছি। "
তবে পরিবার ছাড়াও অফিস সহকর্মীদের সাথে কাজের জন্য ভিডিও কনফারেরেন্স বেশ কিছুক্ষন কথা বলতে হয় এবং এতে তাদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট হয় বলে জানান মিঃ আহমেদ। তবে তিনি বলেন এই রেসপন্স অন্য সেক্টরে যারা কাজ করেন তাদের বেলায় ভিন্ন হতে পারে।
তবে মিঃ আহমেদ বলেন, "বাসায় কাজ করতে গিয়ে তার মবিলিটি কমে গেছে, তাকে আগে অনেক হাটতে হতো, এখন সেটা না করাতে এবং সারাক্ষন কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে এক ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরী হচ্ছে, প্রচুর স্ক্রিন টাইম ব্যয় করতে হচ্ছে। আমার মত যারা মাঝবয়সী বা সিনিয়র তারা এতে সাফার করবে।"
"তাছাড়া আপনি যখন কারো সাথে সরাসরি কথা বলছেন তখন তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং মুখোমুখি কমিউনিকেশন থেকে কোন বিষয় বুঝে নিতে চেষ্টা করেন, কিন্তু ভিডিও কলে তা অনেক সময় সম্ভব নয়, আপনি হয়তো ভিডিও বন্ধ রেখেছেন। এতে এক ধরণের কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরী হয়।"মিঃ আহমেদ ঘরে কাজ করার কারণে সোশ্যাল মিডিয়াতে তার নিজের সময় ব্যয় করার বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন। তিনি আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি সময় সামাজিক মাধ্যমে দেন বলে জানান, যা আগে করতেন না।
Salahuddin Ahmed Source: Salahuddin Ahmed
অনেক সময় এমপ্লয়ারদের কাছ থেকে কর্মীদের লক্ষ দিয়ে দেয়া হয়, এতে অনেকেই সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন বলে জানান।
মিঃ খাইরুল আলম এসবিএস বাংলাকে বলেন, ব্যাংকিং পেশায় সব সময়ই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ দিয়ে দেওয়া হয়, তবে এজন্য ঠিক তিনি চাপ অনুভব করেন না।
তিনি বলেন, "বাসা থেকে কাজ করেও আমরা অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পেনডেমিকের আগের সময়ের তুলনায় খুব একটা পিছিয়ে নেই।"
মিঃ সালাহউদ্দিন আহমেদ এসবিএস বাংলাকে তার কাজের ধরণ থেকে বলেন, তাকে তার কর্মস্থল থেকে একটি গোল সেট করে দেয়া হয়, এবং ঘরে থেকে কাজ করে সেই লক্ষ্য তিনি অর্জন করতে পারছেন বলে জানান।
যেহেতু তিনি সরকারি কাজে যুক্ত, তার উপযুক্ত কাজের পরিবেশ তৈরিতে সরকার সাহায্য করে থাকে।
তিনি বলেন, "আমাদের কিছু কাজ করতেই হয় আমরা যেই পরিস্থিতিতেই থাকি না কেন, আপনি যদি কাজ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হন সরকার আপনাকে কাজের সুবিধার জন্য ব্যবস্থা করে দেবে, সেই সহায়তাগুলোও থাকবে। তাই লক্ষ্য অর্জনে আমাকে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। "
তবে মিঃ আহমেদ বলেন, তার অফিসে অনেকের সাথে কাজের সম্পর্ক না থাকলেও বিভিন্ন স্থানে অনেকের সাথে দেখা হত, লিফটে, সোশ্যাল এরিয়ায় ইত্যাদি।
"তাদের সাথে হাই-হ্যালো বলার হয়তো সম্পর্ক ছিল, কিন্তু তারপরেও এক ধরণের যোগাযোগ তৈরী হতো, এই সুযোগটি এখন কমে গেছে।"
এখনপ্রশ্ন হচ্ছে, এই যে ঘরে থেকে কাজের অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাস সমস্যা শেষ হয়ে গেলে আগের মত অফিসে গিয়ে কাজ করতে কর্মীরা কি ধরনের সমস্যায় পড়বেন।
করোনা পরিস্থিতি শেষ হয়ে গেলে একধরণের 'ট্রান্সিশনাল' সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন মিঃ খাইরুল আলম।
তিনি বলেন, "বাসা থেকে কাজ করার যে সুবিধা আছে এবং কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনে পরিবারের সদস্যদের সাথে যেভাবে সময় ভাগ নেয়া সহজ হচ্ছে তখন বিষয়টা তেমন থাকবে না। তাই সেদিক বিবেচনা করলে পূর্বের অবস্থায় কাজে ফিরতে কিছুটা সমস্যা হবেই, তবে আবার এটাও মনে করি ব্যাপারটা সামলে নেওয়া সম্ভব হবে।"
তবে মিঃ আলম মনে করেন, "প্রাদুর্ভাবের কারণে যে পরিবর্তন এসেছে তা আমরা আগে যেভাবে ভাবতাম তা থেকে সরে এসেছি, আমরা বাসা থেকে কাজ করেও আমাদের দেয়া লক্ষ অর্জনে সক্ষম, ইন্ডাস্ট্রিগুলো হয়তো ভবিষ্যতে সেভাবে ভাববে।"
তবে মিঃ আলম এটাও মনে করেন, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর কাজের ধরণের ওপর নির্ভর করবে 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' ধারণাটি তাদের জন্য কতটুকু কার্য্যকর।
মিঃ সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘরে থেকে কাজ করে যে অভ্যাস তার হয়েছে তা পরিবর্তন হতে তাকে বেগ পোহাতে হবে।
"আমি বাসায় কাজ করে যেভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, আমার মনে হচ্ছে আবার অফিসে কাজ শুরু করতে আমি কিছুটা স্ট্রাগল করবো। আমাকে আবার হয়তো একটা রুটিন লাইফস্টাইলের মধ্যে চলে আসতে হবে।"
তাছাড়া পরিবারের সদস্যদের সাথে এতদিনের যে দৈনিক আন্তঃযোগাযোগ তৈরি হল তা কমে যাবে এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার মত বিষয়গুলোতেও তাকে বেগ পোহাতে হতে পারে বলে মনে করেন মিঃ আহমেদ।
তবে যেহেতু তিনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তার প্রত্যাশা তার প্রতিষ্ঠান থেকে 'ট্রানসিশন টু ওয়ার্ক' এমন প্ল্যান দেয়া হবে যা অনুসরণ করলে তাদের জন্য নতুন করে স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে সহজ হবে।
আরো দেখুনঃ