কোভিড ভ্যাকসিনের চেয়ে কোভিডে আক্রান্ত হলে প্রজনন সক্ষমতার ঝুঁকি বেশি, বলছে বিজ্ঞান

African American female doctor preparing a pregnant woman for vaccination

A pregnant woman gets vaccinated Source: Getty Images

কোভিড ভ্যাকসিনগুলি সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন ভুল তথ্য দূর করতে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কাজ করছে, কারণ তরুণ বয়সী মহিলাদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেয়ার দ্বিধা জাতীয় গড়ের উপরে চলে এসেছে।


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো 

  • এখন গবেষণা আরও উন্নত এবং বার বার বলা হচ্ছে যে এই টিকা সন্তান জন্মদান ক্ষমতার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না
  • অস্ট্রেলিয়ার ভ্যাকসিন উপদেষ্টা গ্রুপ, ATAGI, গর্ভাবস্থার যেকোনো পর্যায়ে টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেয়
  •  ভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা প্রভাবিত হয়েছে এমন প্রমাণ রয়েছে

নিউ সাউথ ওয়েলসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত সপ্তাহে সতর্ক করেছিলেন যে কোভিডের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবগুলির ফলে প্রজনন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক 

মেলবোর্নের পূর্বে একটি ক্লিনিকে কর্মরত ডা: স্টেসি হ্যারিস বলেন যে ৪০ বছরের কম বয়সী রোগীরা সবসময়ই ভ্যাকসিন নিয়ে একটি প্রশ্ন করেন তা হলো “এটা কি তাদের পিরিয়ডকে প্রভাবিত করতে পারে? এটি কি সন্তান ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে? প্রচুর প্রশ্নের মধ্যে কিন্তু সেগুলোই সেই বয়সীদের প্রধান প্রশ্ন। ” 

তার উত্তর সবসময় একই। 

"আমরা এখানে সরাসরি বিজ্ঞানের দিকে তাকিয়ে আছি: রাজনীতিবিদরা কী বলছেন তা আমরা দেখছি না, মিডিয়া যা বলছে তা আমরা দেখছি না, আমরা বিজ্ঞানের দিকে তাকিয়ে আছি এবং এখন গবেষণা আরও উন্নত এবং বার বার বলা হচ্ছে যে এই টিকা সন্তান জন্মদান ক্ষমতার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। " 

মেলবোর্ন ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মহিলারা টিকা নিতে বেশি অনিচ্ছুক।  

ইনস্টিটিউটের স্বাস্থ্য-অর্থনীতির অধ্যাপক অ্যান্থনি স্কট বলেছেন যে সর্বশেষ প্রবণতা থেকে দেখা যায় যে ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা কমেছে। 

তিনি বলেন, "জুলাই মাসে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত ছিল কিন্তু এখন তা কমে ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে, তাই মহিলাদের মধ্যে যারা বাচ্চা নিতে চায় তাদের মধ্যে দ্বিধা অনেকটা কমে এসেছে।" 
গত বছরের প্রথম দিকে ভ্যাকসিনের ডোজ গ্রহণের পর অল্প সংখ্যক মহিলা তাদের মাসিক চক্রের পরিবর্তনের খবর দিয়েছিলো, এরপর ভ্যাকসিন প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে এমন উদ্বেগ বাড়তে থাকে।  

এতে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে এমন দাবী পরবর্তীতে অনলাইনে উঠে আসে কিন্তু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা তা দ্রুত বাতিল করে দেন।  

ফেডারেল সরকারের প্রধান নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অফিসার, অ্যালিসন ম্যাকমিলান বলেছেন, ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝির ভিত্তিতে এই দাবি করা হয়েছিল।    

৩৫,০০০ গর্ভবতী মহিলাদের নিয়ে সাম্প্রতিক মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে যে এম-আর-এন-এ ভ্যাকসিন পিতামাতা এবং শিশু উভয়ের জন্যই নিরাপদ, এতে গর্ভপাত বা প্লাসেন্টাল অস্বাভাবিকতার ঝুঁকি বাড়েনি।  

গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে অস্ট্রেলিয়ার ভ্যাকসিন উপদেষ্টা গ্রুপ, ATAGI, গর্ভাবস্থার যেকোনো পর্যায়ে টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেয়।  

অ্যালিসন ম্যাকমিলান বলেছেন যে গর্ভবতী মহিলাদের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করা হয় যাদের ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রয়োজন।  

তিনি বলেন, "এর কারণ হল যে আমরা এখন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন তথ্য থেকে জানি যে যারা গর্ভবতী তারা এই ভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে।"  

এই বার্তা প্রজনন বিশেষজ্ঞরাও পুনরায় বলছেন।  

আই-ভি-এফ অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল ডিরেক্টর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পিটার ইলিংওয়ার্থ বলেছেন যে তিনি তার সমস্ত প্রজনন চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন বা নেবেন এমন রোগীদের টিকা নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন।  

তিনি বলেন, "আমি প্রত্যেক রোগীকে বলি আপনি যদি গর্ভাবস্থার চূড়ান্ত পর্যায়ে কোভিডের ঝুঁকি এড়িয়ে ভেন্টিলেটরে থাকতে না চান তবে আপনি এখন টিকা দিয়ে এটি প্রতিরোধ করতে পারেন।" 

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থায় কোভিড সংক্রমণ অকালে বাচ্চা প্রসব এবং এমনকি পেটেও মারা যেতে পারে।  

এবং তিনি বলেছেন যে ভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা প্রভাবিত হয়েছে এমন প্রমাণ রয়েছে।  

তিনি বলেন, "কোভিড সংক্রমণ আছে এমন পুরুষদের জন্য এটা পরিষ্কার, ভাইরাসের শুক্রাণুর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যেতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে প্রজনন ক্ষমতা প্রভাবিত করে কিনা তা জানা খুব কঠিন।” 
যদিও দেশজুড়ে ভ্যাকসিনের নেয়ার হার বাড়ছে, তারপরেও ২০ শতাংশ জনসংখ্যা এখনও দ্বিধাগ্রস্ত।  

মেলবোর্ন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অ্যান্থনি স্কট বলেন, এই সংখ্যার মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ নিউ সাউথ ওয়েলসের 'গোড়া ভ্যাকসিন বিরোধী', যা উদ্বেগের বিষয়।   

তিনি বলেন, "এটি গত দুসপ্তাহের মধ্যে কিছুটা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে, এবং তাই এটি একটি বিশেষ সমস্যা যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন: নিউ সাউথ ওয়েলসে যা বার্তাই দেয়া হোক না কেন তা প্রকৃতপক্ষে জনগণকে স্পর্শ করছে না।" 

নিউ সাউথ ওয়েলসে সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও, মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট বলছে রাজ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ভ্যাকসিন বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।  

আপনার ভাষায় কোভিড -১৯ মহামারীর বিষয়ে বর্তমানে যে স্বাস্থ্য এবং সহায়তা ব্যবস্থা রয়েছে, তার জন্য দেখুন sbs.com.au/coronavirus।   

কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে কিনা এ বিষয়ে পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন। 

Follow SBS Bangla on .

আরও দেখুন: 

Share