কোভিড-১৯ স্ক্যাম: অনলাইন প্রতারণা শনাক্ত করা আর নিজেকে রক্ষার উপায়

Getty Images/Bill Hinton

Source: Getty Images/Bill Hinton

কোভিড-19 কে ঘিরে মানুষের উদ্বিগ্নতা ও অসেতনতার সুযোগ নিচ্ছে অনলাইন প্রতারকচক্র বা স্ক্যামাররা। তার মধ্যে প্রচলিত প্রতারণার পদ্ধতি হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা বা ফিশিং (Phishing), অনলাইনে কেনাকাটা এবং সুপারএন্যুয়েশন স্ক্যাম। কীভাবে স্ক্যাম চিনবেন এবং অনলাইন প্রতারণার ফাঁদ এড়াবেন তা নিয়ে একটি সেটলমেন্ট গাইড প্রতিবেদন।


অস্ট্রেলিয়ান কম্পিটিশন এন্ড কনজিউমার কমিশন (ACCC) পরিচালিত ওয়েবসাইটে স্ক্যাম শনাক্তের উপায় এবং কীভাবে তা এড়ানো যায় সে সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক তথ্য দেওয়া আছে। সাধারণ ভোক্তা, ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে এই ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। স্ক্যাম সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে কীভাবে অবহিত করা যায় সে সম্পর্কেও এই সাইটে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

সাইটটি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬৪১৫টি করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট অনলাইন প্রতারণার রিপোর্ট পেয়েছে, অর্থমূল্যে যার মোট ক্ষতির পরিমাণ ৯৮ লক্ষ ডলারেরও বেশি।
অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ডিজিটাল হেলথ এজেন্সি দেশের ডিজিটাল স্বাস্থ্য কর্মসূচি বা ‘ই-হেলথ’ এর আওতাধীন বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকি করে থাকে; তার মধ্যে রয়েছে ‘মাই হেলথ রেকর্ড’, ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন এবং হেলথ রেফারেল সিস্টেম।

সংস্থাটির চিফ ক্লিনিক্যাল এডভাইজর ডক্টর স্টিভ হ্যাম্বলটন বিভিন্ন ধরনের কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট প্রতারণার বিষয়ে বলেন, প্রতারকচক্র ভ্যাক্সিন দেওয়া আর ভ্যাক্সিন বা স্বাস্থ্য বিষয়ে জরিপ পরিচালনার নামে আপনার ব্যক্তগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।

প্রতারকচক্র নকল ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট দেবার নামে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় তারা ভ্যাক্সিনের দাম বা ভ্যাক্সিন দেবার পূর্বে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কারন দেখিয়েও প্রতারণা করতে পারে। 

ডিজিটাল হেলথ এজেন্সির কর্মকর্তা ডক্টর হ্যাম্বলটন এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে বলেন, নকল ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট প্রদানের সময় প্রতারকচক্র মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়, যেমন স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য, ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার ইত্যাদি।

ডক্টর হ্যাম্বলটন জানান, অনলাইন কালোবাজারে ব্যক্তিগত তথ্যাবলি খুব দামীএকটি বিনিময়যোগ্য পণ্য। কোনভাবে ব্যক্তিগত তথ্য ভান্ডারের নিয়ন্ত্রণ হারালে তা আবার ফিরে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।
Getty Images/Stefan Cristian Cioata
Source: Getty Images/Stefan Cristian Cioata
স্ক্যামাররা এমনকি সরকারী সংস্থার পরিচয়েও জালিয়াতি বা ‘ফিশিং’ করে চলেছে। তারা কোভিড-১৯ বিষয়ে মেসেজ এবং ইমেইল দিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে থাকে।   

ডক্টর হ্যাম্বলটন জানান, স্ক্যামাররা আপনাকে কল করতে পারে, তারা মেসেজ, ইমেইল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তাই মেসেজ বা ইমেইলে থাকা কোন ধরনের অযাচিত বা ‘আনসলিসিটেড’ লিংকে ক্লিক করার আগে ভাল করে যাচাই করে নিন।

সিডনী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক ডক্টর সুরাংগা সেনেভিরান্তে ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে চুরি হয় তার ব্যখ্যা দিয়ে বলেন, 

"তারা ম্যালওয়্যার সম্বলিত একটা লিংক আপনার কাছে পাঠাতে পারে। আপনি যদি সেটাতে ক্লিক করেন, তখন সেটা আপনার সক্রিয় হয়ে যাবে আর আপনার কম্পিউটারে জায়গা করে নেবে। এই ম্যালওয়্যার আপনার কম্পিউটারে কিছুকাল থাকে। তাতে থাকা যোগাযোগের প্রযুক্তিটি আপনি কম্পিউটারে কী টাইপ করছেন, বা কী কাজ কাজ করছেন তা উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দেয়।"

স্ক্যামাররা জালিয়াতির উদ্দেশ্যে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তির হুবহু নকল ওয়েবসাইট বানাতে পারে। জালিয়াতির প্রচেষ্টা সফল করতে অনেক সময় তারা কাউকে ফাঁদে ফেলা তার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে যোগাযোগ করতে পারে।
স্ক্যামাররা এমনকি ভুয়া বা অস্তিত্বহীন অনলাইন স্টোরও বানিয়েছে! যেখানে তারা কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন থেকে শুরু করে করোনাভাইরাসের ওষুধ এবং ফেইস মাস্কের পসরা সাজিয়েছে।
Getty Images/boonchai wedmakawand
Source: Getty Images/boonchai wedmakawand
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ কম্পিউটিং এর অধ্যাপক শ্যানটন চ্যাং জানান, স্ক্যামাররা সাধারণত ব্যক্তিগত তথ্য যোগার করতে অধিক সচেষ্ট হয়।

 “যদি তাদের কাছে আপনার নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ আর ফোন নাম্বার থাকে, তখন তারা এসব তথ্য নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আপনার পরিচয়ে প্রতারণার চেষ্টা করতে পারে। সচরাচর অফিসগুলোতে এসব তথ্য দিয়েই কারোর পরিচয় নির্ধারন করা হয়ে থাকে।”

ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য ডার্ক ওয়েবে বা ইন্টারনেটের কালোবাজারে বিক্রি করা যায়, আর এভাবে একজনের পরিচয় চুরি হয়ে যায়।

ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনীর ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড আইটির ডক্টর প্রিয়দর্শী নন্দ বলেন, ‘ওয়ার্কিং ফ্রম হোম’ এর কারণে মানুষ আরও অধিকহারে স্ক্যামের শিকার হতে পারে।

বৈশ্বিক মহামারি অর্থনৈতিক এবং মনস্ত্বাত্বিক দুইভাবেই সমাজকে আক্রান্ত করেছে। মানসিকভাবে ভারাক্রান্ত, অন্যদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ সহজেই প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছে বলে জানান ডক্টর চ্যাং।
Pexels/Anna Shvets
Source: Pexels/Anna Shvets
অতিমারীর সময়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাপকভাবে অনলাইন প্রতারণার শিকার হয়েছে। ডক্টর হ্যাম্বলটন জানান, স্ক্যামাররা অতিমারীতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুপার এন্যুয়েশন ফান্ড চুরি করা সহ ভুয়া ও অপ্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার নামে জালিয়াতি করে আসছে। 

স্ক্যামের শিকার হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতারণার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিৎ বলে মতপ্রকাশ করেন ডক্টর হ্যাম্বল্টন।

“হাজার হাজার মানুষ স্ক্যামের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন অন্যদিকে ভুক্তভোগী অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে বা অদরকারী মনে করে বিষয়টি গোপন রেখেছেন। আপনি যদি স্ক্যাম নিয়ে উদ্বিগ্ন হন তাহলে সাইট ভিজিট করুন। এই সাইটটি আপনার উপকারে আসতে পারে”


 

পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন। 

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 


 

Share