বিএনপি-র নেতৃত্বে বিরোধীরা বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও পঞ্চম মেয়াদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একে জনগণের বিজয় বলে অভিহিত করেন তিনি।
নির্বাচনী পরিবেশ অত্যন্ত বিতর্কিত ছিল। মাত্র ৪১.৮ শতাংশ ভোটারের অংশগ্রহণ এবং ভোটের আগে বিরোধী সদস্যদের কারাগারে বন্দি থাকার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে, শেখ হাসিনার এই বিজয় অনিবার্য ছিল, এমনটাই ধারণা করা যায়।
বিরোধী দল বিএনপি-কে টেররিস্ট বা সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি-র স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আব্দুল মইন খান বলেন, সরকার একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করেছে।
মইন খান হলেন বিএনপি-র সেই স্বল্প-সংখ্যক জ্যেষ্ঠ নেতাদের একজন, যারা এখন গ্রেফতারকৃত অবস্থায় নেই।
২০ হাজারের অধিক দলীয় সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার মতে, ‘মিথ্যা ও কাল্পনিক’ অভিযোগে এদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ দলীয় কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। আর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করছেন, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
গত বছর মাসের পর মাস প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে গেছে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটের আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি করেছিল তারা।
৭ জানুয়ারি, নির্বাচনের দিন বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বিরোধীদের একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দেয় কর্মকর্তারা। শটগান দিয়ে গুলি বর্ষণ করা হয় এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়।
কিন্তু, নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। সেজন্য, দেশ জুড়ে প্রায় ৮ লক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ও সৈনিক নিয়োজিত করা হয়েছিল।
নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন আলেকজান্ডার বারটন গ্যারি। তিনি বলেন,
“While we did not witness instances of violence or disruption, we have seen media reports of such instances across Bangladesh and we have expressed to the appropriate authorities our concerns. However, as stated, none of us have personally observed anything other than a fair, transparent and accountable election in line with democratic norms, international standards and Bangladesh’s local circumstances.”
এবারের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামল আরও বর্ধিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তবে বিতর্কিত নেতা হিসেবে পরিগণিত হলেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, এবারের নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে শেখ হাসিনার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ ২২২টিতে জয়ী হয়েছে এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে।
ঢাকা-ভিত্তিক অর্থনীতিবিদ এবং পাবলিক পলিসি অ্যানালিস্ট ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বাংলাদেশে দৈনন্দিন জীবন-যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সংগ্রাম করছে মানুষ। গত নভেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি ছিল প্রায় ৯.৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২০২১ সালের আগস্ট মাসে ছিল রেকর্ড পরিমাণ ৭১ বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার। এখন তা ২৯ বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলারে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাস এবং রাজনীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের গভীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। তার পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের ‘জাতির পিতা’ হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একটি অংশ। বিদেশে অবস্থান করায় রক্ষা পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
ক্যানবেরা-ভিত্তিক অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু হলে, তার উত্তরসূরী কে হবেন, তা পরিষ্কার নয়।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে এসবিএস । ৫ অক্টোবর থেকে নতুন চ্যানেলে, পরিবর্তিত সময়ে সরাসরি সম্প্রচার শোনা যাচ্ছে।
প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ এ।
৫ অক্টোবর ২০২৩ থেকে নতুন চ্যানেলে ও নতুন সময়ে SBS Bangla Credit: SBS