হাইলাইটস
- পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করছে ইন-টাচ মাল্টিকালচারাল সেন্টার। তারা বলছে, কোভিড-১৯ এর কারণে সহিংসতার শিকারদের ওপরে আরও চাপ বাড়ছে।
- কোভিড-১৯ এর কারণে ইন-টাচ সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কেস পাচ্ছে।
- সমর্থকরা বলছেন, সাপোর্ট সার্ভিসগুলো থেকে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের মাইগ্রেশন স্ট্যাটাস বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ সময়ে ১৫ এবং তদূর্ধ্ব বছর বয়সী নারীদের প্রতি ১০ জনে ৩ জন শারীরিক কিংবা যৌন সহিংসতার শিকার হন বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগ।
পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করছে ভিক্টোরিয়া-ভিত্তিক ইন-টাচ মাল্টিকালচারাল সেন্টার। এর প্রধান মিখাল মরিস মনে করেন, কোভিড-১৯ লকডাউনের সময়ে অনেক বেশি মানসিক চাপের অভিজ্ঞতা হচ্ছে পরিবারগুলোর। এর ফলে পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা হেল্পলাইনে অনেক বেশি কল করছেন।
তিনি বলেন, সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক নারীকে দূর থেকে সহায়তা প্রদানে ব্যস্ত রয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানটির দ্বি-ভাষিক ম্যানেজারগণ এবং অভিবাসন আইনজীবিরা।
মরিস আরও বলেন, অস্থায়ী ভিসাধারী অনেক নারী কাজ হারিয়েছেন। তারা সেন্টারলিঙ্ক থেকে সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ত নন। আর তাদের এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যাটাস পরিবর্তিত হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন সেবা, যেমন, জব সিকার এবং জব কিপার সহায়তা লাভের জন্যও তারা উপযুক্ত নন।
ইন-টাচ-এ কেস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন ড. রুচিতা-রুচিতা। তিনি বলেন, শরণার্থী এবং অভিবাসী পটভূমির নারীরা লজ্জাবশত সহায়তা চাইতে অনীহা দেখান। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই এ রকম আছেন যারা আর্থিক অসচ্ছলতা, সীমান্ত বন্ধ থাকা এবং নিজের সমাজে একঘরে হওয়ার ভয়ে তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারছেন না।
ড. রুচিতা বলেন, একজন ক্লায়েন্ট পারিবারিক সহিংসতা থেকে রক্ষ পেতে তিন বাচ্চাসহ চলে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, শুধুমাত্র বাচ্চাদের ভরণ-পোষণের স্বার্থে নির্যাতকের কাছে তাকে ফিরে আসতে হয়।
পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র মাল্টিকালচারাল সাপোর্ট এজেন্সি হলো ইন-টাচ। এদের অনসাইট লিগাল সেন্টার রয়েছে। ২০১৮-২০১৯ সালে এদের প্রায় ৪০ শতাংশ ক্লায়েন্ট ছিল অস্থায়ী ভিসাধারী।মরিস বলেন, ইন-টাচ লক্ষ করেছে, নির্যাতনকারীরা নতুন একটি প্যাটার্ন ব্যবহার করছে। তারা কোভিড-১৯ কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে অসহায় নারীদেরকে নির্যাতন করছে। এসব নারীরা ইংরেজিতে দক্ষ নন। লকডাউনের এই সময়টিতে তারা শুধুমাত্র তাদের নির্যাতনকারীদের কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
Source: Benjamin RondelGettyImages
তিনি বলেন, কোনো নারী যদি যে-কোনো কারনে অনিরাপদ বোধ করেন, যেমন, আবেগগত, আর্থিক, মনস্তাত্ত্বিক, যৌন এবং শারীরিক কারণে আর এ রকম নারীরা যদি তাদের কিংবা তাদের সন্তানদের জীবনের প্রতি হুমকি অনুভব করেন, এর মানে হলো, তারা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন এবং তারা সাহায্য চাইতে পারেন।
অভিবাসন আইনজীবি নীলেশ নন্দন বলেন, অস্থায়ী ভিসাধারী কোনো ভিক্টিম যদি তার নির্যাতকের সঙ্গের সহিংস সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে এবং ডিপেন্ডেন্ট ভিসা স্ট্যাটাস থেকে বের হওয়ার জন্য তাকে দু’টি সহায়ক প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে, সমাজকর্মী, জিপি, সাইকোলজিস্ট কিংবা পুলিশের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পরে নিজের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা ইমিগ্রেশনকে জানাতে হবে ভিক্টিমের।
করোনাভাইরাসের সময়ে পারিবারিক, ঘরোয়া এবং যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদেরকে সহায়তা করতে ফেডারাল সরকার ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।
মরিস উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, অস্থায়ী ভিসাধারী বহু নারীর কাজ করার সীমিত অধিকার রয়েছে। আর তারা তাদের ভিসা স্ট্যাটাসের কারণে মৌলিক স্বাস্থ্য-সেবা, কমিউনিটি কিংবা সোশাল সার্ভিসেস লাভ করার উপযুক্ত হয় না।
স্বাস্থ্য-সঙ্কট মোকাবেলায় মেলবোর্ন সোশাল এন্টারপ্রাইজ সিবলিংয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে ইন-টাচ। এ কাজে সহায়তা করেছে কিনফোক। তারা অসহায় ক্লায়েন্টদেরকে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সরবরাহ করবে।
Cre8tive Nails owner Rosie Thind with customer in Darwin, Friday, May 15, 2020. Source: AAP Image HELEN ORR
প্রায় দু’বছর আগে তার পার্টনার ড্রাগ ডিলারে পরিণত হলে তখন তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন ট্রেসি।
ট্রেসি সম্পর্ক ছিন্ন করার পর পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নেয়। তখন তার সাবেক পার্টনার তাকে ভয় দেখিয়ে টেক্সট মেসেজ পাঠানো শুরু করে।
ট্রেসি একাই নয়, অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অফ স্টাটিস্টিক্স-এর রিপোর্ট অনুসারে, ১৫ বছর ও এর চেয়ে বেশি বয়সী নারীদের মাঝে প্রতি চার জনে এক জন নারী তাদের বর্তমান কিংবা সাবেক সঙ্গীর দ্বারা ইমোশনাল অ্যাবিউজের বা আবেগগত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
প্রায় দু’বছর ধরে যে মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন ট্রেসি, এর ফলে তার মাঝে ভয়ানক আতঙ্ক এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
নর্দার্ন টেরিটোরিতে অসহায় এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের কেয়ারার হিসেবে কাজ করেন তিনি। সেখানে তার মতো দক্ষ কর্মী সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।
পাঁচ বছর কাজ করা সত্ত্বেও ট্রেসির নিয়োগদাতা তার অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে ট্রেসিকে ওয়ার্ক ভিসায় স্পন্সর করতে পারেন নি।
মানসিকভাবে নির্যাতনকারী সাবেক সঙ্গীকে পুরোপুরিভাবে ব্লক করতে পারছেন না ট্রেসি। কারণ, তিনি এখনও তার সঙ্গীর অস্থায়ী ভিসায় ডিপেন্ডেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছেন।
নর্দার্ন টেরিটোরিতে নতুনভাবে জীবন শুরু করা ট্রেসির সম্পর্কে আর কিছু বলা কঠিন।
নন্দন বলেন, যেহেতু ট্রেসির সাবেক সঙ্গী নিজেই একজন বিদেশী, তাই ট্রেসির একমাত্র পথ হলো তার নিজের জন্য ভিসার আবেদন করা।
তিনি বলেন, অস্থায়ী ভিসাধারী বহু নারী তাদের নির্যাতক সঙ্গীকে পরিত্যাগ করার পর এ ধরনের দুর্দশায় নিপতিত হন। আর, যখনই একজন ভিক্টিম একটি পারিবারিক সহিংসতার রিপোর্ট করেন, তখন অপরাধীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া, অস্থায়ী ভিসাধারী ভিক্টিমের জন্য কোনো ইমিগ্রেশন রিলিফ বা প্রতিকার নেই।
২০১৫-২০১৬ সালে, অস্থায়ী ভিসাধারী ৫২৯ জন নারী পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য ফ্যামিলি ভায়োলেন্স প্রভিশন্স-এর অধীনে আবেদন করেন। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি সফল হন।
অপর পক্ষে, নন্দন বলেন, মাইগ্রেশন অ্যাক্ট শুধুমাত্র পার্টনার ভিসা আবেদনকারীদেরকে সুরক্ষা দেয়। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত অস্থায়ী ভিসাধারী নারীদের, যাদের মাইগ্রেশন অ্যাক্ট-এর মতো কোনো সেফটি নেট নেই, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে অত্যন্ত দুঃখজনক।
Source: DME PhotographyGetty Images
নন্দন বলেন, ভিজিটর ভিসার মাধ্যমে স্বল্প সময়ের জন্য থাকা যায়। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদনকারীকে সত্যিকারের শিক্ষার্থী হতে হয় এবং আর্থিক সঙ্গতি থাকতে হয় ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হয়। আর, ওয়ার্ক ভিসার জন্য স্পন্সর করতে আগ্রহী কোনো নিয়োগদাতাকে খুঁজে বের করতে হয়, যা সাধারণত কঠিন। এটা আরও কঠিন হয়ে গেছে কোভিড-১৯ এর কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে।
তিনি বলেন, ডিপেন্ডেন্ট ভিসাধারী বহু ভিক্টিম অবশেষে মরিয়া হয়ে অন্য ভিসায় আবেদন করতে বাধ্য হন যেগুলোতে সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
এর ফলে ট্রাইবুনালগুলোতে এবং ফ্যামিলি সার্কিট কোর্টগুলোতে আবেদনের পাহাড় জমা হয়ে কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় যে-সব নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, ভিসা স্ট্যাটাস নির্বিশেষে তাদের সবাইকে নিরাপত্তা এবং সহায়তা সেবা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে ইন-টাচ।
পরিস্থিতি যদি নৈরাশ্যজনক হয়, এমনকি তাদেরকে যদি নির্যাতকের সঙ্গে বাধ্য হয়ে একই বাড়িতেও থাকতে হয়, তারপরও ভিক্টিমদেরকে সাহায্য চাইতে বলেন মিখাল মরিস।
ইন-টাচ সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য দেখুন: কিংবা আপনি যদি ভিক্টোরিয়ায় থাকেন তাহলে কল করুন তাদের টোল ফ্রি নম্বরে: 1800 755 988 সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
অস্ট্রেলিয়া জুড়ে সহায়তা লাভের জন্য যোগাযোগ করুন: 1800 RESPECT, the এ 1800 737 732 নম্বরে যে-কোনো সময়ে।
আপনি যদি নিদারুণ যন্ত্রণায় ভোগেন এবং আবেগগত সহযোগিতা চান তাহলে কল করুন করোনাভাইরাস মেন্টাল ওয়েলবিয়িং সাপোর্ট সার্ভিসে 1800 512 348 নম্বরে কিংবা এ 13 11 14 নম্বরে দিনে-রাতে যে-কোনো সময়ে।
আপনার ভাষায় নারীদের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন এ এর টোল ফ্রি নম্বরে: 1800 656 421 সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময়ে।
আপনার যদি ভাষাগত সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে দোভাষীর জন্য কল করুন নম্বরে এবং আপনার প্রয়োজনীয় সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে বলুন।
আপনার জীবন যদি বিপদগ্রস্ত হয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে 000 নম্বরে কল করুন।