স্বাধীনতার সত্তর বছর পর ঐতিহাসিক রায়, ভারতে সেনাবাহিনীতে স্থায়ী কমিশনড পদে নারীদের নিয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এতদিন তাঁরা শর্ট সার্ভিস কমিশনে চাকরি পেতেন। এক্ষেত্রে দিল্লি হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি সরকারকেও তার মানসিকতা বদল করার কথা বলেছে আদালত। এককথায় সেনাবাহিনীতে নারীদের স্থায়ী পদে নিয়োগ নিয়ে শীর্ষ আদালতে ধাক্কা খেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে কমব্যাট ফোর্সের ক্ষেত্রে এই রায় প্রযোজ্য নয়। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি অজয় রাস্তোগির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সেনাবাহিনীতে নারীদের নিযুক্তি প্রগতিশীল পদক্ষেপ। এ নিয়ে কোনওরকম বৈষম্য চলবে না।
দিল্লি হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নারীদের সেনাবাহিনীতে স্থায়ী কমিশনড পদে নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছিল। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের ওই মনোভাবকে লিঙ্গ স্টিরিওটাইপ বলে বর্ণনা করেছে শীর্ষ আদালত। বলা হয়েছে এই ধরনের মনোভাব নারীদের জন্য অপমান। শীর্ষ আদালতের রায় অনুযায়ী, যেসব নারী অফিসার স্থায়ী পদের জন্য আবেদন করেছেন তাদের আগামী তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ করতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সব শর্ত হবে পুরুষদের মতোই। সেনাবাহিনীতে স্থায়ী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি যুক্তি খাড়া করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে ছিল নারীদের শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক চাপ নেওয়ার ক্ষমতা। কেন্দ্রের দাবি ছিল নারীরা সামাজিক কারণেই পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে এবং শারীরিক দিকে দিয়েও পিছিয়ে।রায় ঘোষণার সময়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ২০১০ সালে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র সরকার বাধ্য সেনাবাহিনীর নারী অফিসারদের স্থায়ী কমিশন বা পারমানেন্ট কমিশন দিতে। শীর্ষ আদালত এও জানিয়েছে,মামলা চলাকালীন কেন্দ্র এই রায়ের বিরুদ্ধে যে যুক্তি দেখিয়েছিল তা সাম্যের নীতি লঙ্ঘন করেছিল। প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছিল লিঙ্গবৈষম্যকে।
A Women officer contingent of Indian Army march during the Army Day parade at Delhi Cantt on January 15, 2015 in New Delhi, India. Source: Arun Sharma/Hindustan Times via Getty Images
রায় ঘোষণার সময়ে শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার ৯ বছর অপেক্ষা করে অবশেষে ২০১৯ সালে আটটি বিভাগে স্থায়ী কমিশনের অধিকার দেয় নারী অফিসারদের। ২০১৯ সালের নীতি সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল নারী অফিসারদের স্থায়ী কমিশন দেওয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক চরিত্র কোনওভাবেই অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু, তার পরেও কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টের কাছে একটি নোট জমা দেয় যেখানে লিঙ্গ-বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে। তুলে ধরা হয় পুরুষদের তুলনায় নারীর শারীরিক ক্ষমতা, নারীর মাতৃত্ব এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যের যুক্তি। আর এই সবই ছিল সাম্যের নীতির বিরুদ্ধে। নারীদের ক্ষমতা ও তাঁদের দক্ষতা সম্পর্কে কোনও রকম সন্দেহ রাখার অর্থ শুধু তাঁদের অপমান করা নয়, গোটা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অপমান করা।কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বহু যুক্তির মধ্যে এও বলে যে, কোনও অপ্রিয় পরিস্থিতিতে যদি কখনও নারী অফিসার শত্রু পক্ষের হাতে ধরা পড়ে যান, তাহলে একদিকে যেমন তাঁর জন্য মানসিক এবং শারীরিক স্ট্রেস হতে পারে, তেমন সরকারের জন্যেও বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। যুক্তির এখানেই শেষ নয়। কেন্দ্র তার আবেদনে এও বলেছিল যে, বেশিরভাগ ইউনিটে পুরুষ সেনা কর্মীরা আছেন। তাঁরা সাধারণত গ্রাম থেকেই আসেন। সেখানে তাঁদের ঊর্ধ্বতন অফিসার হিসেবে কোনও নারী কর্মী নিযুক্ত হলে, তাঁকে মেনে নিতে নাও পারে গোটা ইউনিট।
National Cadet Corps women seen practise during the Final Dress Rehearsal for Republic Day. Source: AAP Image/Avishek Das / SOPA Images/Sipa USA
এর আগে, ২০১৮-র স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে সেনাবাহিনীতে স্থায়ী কমিশনড পদে নারীদের নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সমস্ত শাখায় এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে কি না, তা পরিষ্কার করেন নি তিনি। এই মুহূর্তে শর্ট সার্ভিস কমিশনের আওতায় ১০-১৪ বছর পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে কাজের সুযোগ পান নারীরা। তবে এর আওতায় সেনা পরিষেবা বিভাগ, অস্ত্র কারখানা, শিক্ষা ও বিচার বিভাগ, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যাল, গোয়েন্দা এবং ইলেকট্রিক্যাল এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে তাঁদের। কিন্তু পদাতিক বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, যন্ত্রনির্ভর বাহিনী এবং গোলন্দাজ বাহিনীতে যুদ্ধ করার সুযোগ নেই নারীদের। বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনীর সব ক্ষেত্রেও এই সুবিধা নেই নারীদের।