গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদন ফি হিসেবে অস্ট্রেলিয়ানরা ৪৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনী খরচ হয় ৩.৭ বিলিয়ন ডলার।
- বিবাহ-বিচ্ছেদ হওয়া কিংবা আলাদা হওয়া অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে ৯ জন বলেন যে, সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে ছেড়ে আসার পর তারা আবেগীয়ভাবে আরও বেশি মানিয়ে নিতে পারেন।
- সন্তানদের উপরে বিবাহ-বিচ্ছেদের কী রকম প্রভাব পড়বে তা নিয়ে প্রায় ৬০ ভাগ বাবা-মা উদ্বিগ্ন।
বিয়ের সময়ে কেউ বিয়ে ভাঙার কথা ভাবে না। কিন্তু, কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে আইসোলেশন এবং লকডাউনের কারণে পারিবারিক জীবনে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতার বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেন রিলেশনশিপস অস্ট্রেলিয়া ভিক্টোরিয়ার ক্লিনিকাল সার্ভিসের জেনারেল ম্যানেজার Anastasia Panayiotidis.
সেই নারীর প্রতি যদি সম্মান প্রদর্শন না করা হয় এবং তার কাছে যদি প্রত্যাশা করা হয় যে, তিনি বাচ্চাদের দেখাশোনা, পড়াশোনা করানো ছাড়াও ঘরের সব কাজ সামাল দেবেন, তাহলে তিনি প্রায় কারাগারে থাকার মতোই জীবনযাপন করছেন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর সময়ে বৈবাহিক সম্পর্কের মাঝে ভাঙনগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে কখনও কখনও এগুলো সহিংস রূপও নিচ্ছে।
লিগ্যাল এইড এন-এস-ডাব্লিউ এর রিফিউজি সার্ভিসেস এবং ফ্যামিলি ল-এর সলিসিটর ফ্লোরেন্স ক্রুজ মন্টালভো লক্ষ করেন যে, এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে বিচ্ছেদ বাড়ছে।
মন্টালভো বলেন, যে-সব বাবা-মা সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব শেয়ার করেন, তাদের উচিত একটি আইসোলেশন প্লান তৈরি করে রাখা। এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে যদি তাদের মধ্য থেকে কেউ অসুস্থ হন তখন এটি কাজে লাগবে।
রিয়েল ইনস্যুরেন্সের সাম্প্রতিক একটি ‘রিয়েল কস্ট অফ সেপারেশন’ রিপোর্টে দেখা যায়, বিবাহ-বিচ্ছেদ ও এর আবেদন ফি বাবদ অস্ট্রেলিয়ানরা প্রতিবছর প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকেন। আর, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনী খরচ হয় বছরে ৩.৭ বিলিয়ন ডলার।
যারা বিবাহ-বিচ্ছেদ করতে চান তাদেরকে অত্যধিক আইনী খরচ থেকে বাঁচার জন্য মধ্যস্থতা বা সালিশ করার পরামর্শ দেন Anastasia Panayiotidis.তিনি বলেন, বড় ধরনের বিবাদের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা বা সালিশে কাজ হয় না। বিশেষত, যখন অতিমাত্রায় কটু কথা বলা হয়, ঝগড়া-বিবাদ হয় এবং পারিবারিক সহিংসতা দেখা যায়, তখন এটি কাজে আসে না। তবে, শান্তিপূর্ণ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে মিডিয়েশন বা মধ্যস্থতা উপকারী।
Source: Getty Images/Malte Mueller
বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্তটি জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলেও রিপোর্টটিতে আরও দেখা যায়, আলাদা হওয়া কিংবা বিবাহ-বিচ্ছেদ করা অস্ট্রেলিয়ানদের শতকরা ৯০ ভাগই আলাদা হওয়ার পরবর্তী অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেন।
মন্টালভো বলেন, যারা আলাদা হতে চান তাদের মধ্যে অনেকেই এর পর কীভাবে নতুনভাবে জীবন শুরু করবেন সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন।
রিপোর্টটিতে আরও দেখা যায়, আলাদা হতে যাওয়া দম্পতিদের অর্ধেকেরও বেশি ব্যক্তি উদ্বিগ্ন থাকেন বিচ্ছেদের ফলে কী রকম আর্থিক প্রভাব পড়বে সেটা নিয়ে।
মন্টালভোর মতে, সম্পর্ক ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায়ই বিবেচনা করা হয় যে, আর্থিকভাবে এটা করার সক্ষমতা আছে কিনা।আপনি যদি আর্থিক সমস্যায় থাকেন, সেক্ষেত্রে মন্টালভো পরামর্শ দেন সেন্টারলিঙ্কের সঙ্গে কথা বলে আপনি রেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স পাওয়ার উপযুক্ত কিনা তার খোঁজ নিতে। এ ছাড়া, লোকাল হাউজিং সার্ভিসেও যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
Source: Getty Images/valentinrussanov
মন্টালভো বলেন, পরিবর্তনশীল পাবলিক হেলথ নিষেধাজ্ঞাগুলোর মাঝে কোনো কোনো বাবা-মা কীভাবে সন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করবেন তা নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত।মন্টালভো বলেন, জন-দূরত্ব বিষয়ক সামাজিক নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণে বিচ্ছেদের পর শিশুর বাবা-মা কতো দূরে বাস করবেন সেটাও গুরুত্ব বহন করে।
Source: AAP Image/Moodboard
তিনি বলেন, যখন একজন প্যারেন্ট সন্তান নিয়ে অন্য কোনো স্টেট বা টেরিটোরিতে চলে যান, তখন বিষয়টি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়।
সেই বিশেষ স্টেট বা টেরিটোরির নিয়মের উপর নির্ভর করবে প্যারেন্টিং অর্ডার অনুসারে কোনো প্যারেন্ট সেই সীমান্ত নিষেধাজ্ঞায় ছাড় পাবেন কিনা।সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে ছেড়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ানদের তিন ভাগের দুই ভাগ ব্যক্তি বলেন, বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক বিষয় হলো মানসিক ও আবেগগত বিষয়গুলো।
Source: Getty Images/FatCamera
Anastasia Panayiotidis জোরালোভাবে পরামর্শ দেন যে, যারা অনেক বেশি মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তারা যেন পেশাদার ব্যক্তিদের কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, বিয়ে যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে কোনো কোনো সময় সাংস্কৃতিক চাপ উপেক্ষা করতে হয় এবং মানুষের জীবন রক্ষা করতে হয়। নিজের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি আগে। উদ্বেগ, হতাশা ও বিষণ্নতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
মন্টালভো বলেন, এ রকম মানসিক চাপ ও সঙ্কটপূর্ণ সময়ে আপনি যদি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ না করেন, তাহলে আপনার সন্তানদের দেখাশোনা করার ক্ষেত্রেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে, এ বিষয়ক সরকারি এজেন্সিগুলো তখন এতে জড়িত হতে পারে।
গবেষণায় দেখা যায়, বিবাহ-বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ জনে ৬ জনই চিন্তা করেন, এর কী রকম প্রভাব তাদের সন্তানের উপরে পড়বে।
সাইকোলজিস্ট ড. অ্যান্ড্রু ফুলার বলেন, পরিস্থিতি যে-রকমই হোক না কেন, একজন প্যারেন্টের উচিত তার সন্তানের অপর প্যারেন্টের প্রতি কিছুটা হলেও সম্মান প্রদর্শন করা।
ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক থেকে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে যা ভবিষ্যতে পুনরায় সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগে।
আপনার জীবন যদি তাৎক্ষণিকভাবে ঝুঁকিগ্রস্ত হয় তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।
ভাষাগত সহায়তার জন্য ন্যাশনাল ট্রানস্লেটিং অ্যান্ড ইন্টারপ্রিটিং সার্ভিসে 13 14 50 নম্বরে ফোন করুন এবং আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ দিতে বলুন।