Feature

পার্টনারশীপ ব্যবসায় করণীয় ও বর্জনীয়

"অংশীদারি ব্যবসার (পার্টনারশিপ বিজনেস) শুরুতে এটা নিশ্চিত হওয়া জরুরী যে সকল অংশীদারের (পার্টনার) ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা আছে কিনা? পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলতা কেমন? সেটা জানাও জরুরী," বলেছেন পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট রেজা করিম।

Business

Source: Getty Images/Westend61

চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট কামরুল ইসলামের মতে, ব্যবসায় সফলতা পেতে চাইলে থাকতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। একে অপরকে বুঝতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে এবং সিদ্ধান্তের প্রতি থাকতে হবে শ্রদ্ধাবোধ। 

"অংশীদারি ব্যবসায় ব্যর্থতার সংখ্যা বেশী, প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ। এর মূল কারণ বোঝাপড়া। ব্যবসার সময় খারাপ যেতে থাকলেই অংশীদারিত্বে ফাটল ধরে," বলেছেন কামরুল ইসলাম। 

রাজ্যভেদে কিছুটা পরিবর্তনও আছে নিয়মনীতিতে। এখানে অংশীদারি ব্যবসা দু'রকম: ১. সাধারণ ২. লিমিটেড (কোম্পানি)।
Business
Source: Maskot
ব্যবসায়িক অংশীদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুরুতেই কিছু বিষয় বিবেচনার কথা বললেন কামরুল ইসলাম এবং রেজা করিম। আবেগ বা সম্পর্ক নয়, হতে হবে কমার্শিয়াল। 

১. ওয়ার্কিং পার্টনার নাকি ফিন্যান্সিয়াল পার্টনার? আগে ঠিক করুন কেমন অংশীদার চান আপনি।

২. অংশীদারের কাছে আপনার এবং তার প্রত্যাশা কি? আর কতটুকু?

২. অংশীদারের আগ্রহ কতটা শক্তিশালী? 

৩. জানুন ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোন সমস্যায় ভুগছে কিনা আপনার অংশীদার?

৪. ব্যবসায়িক সবকিছুর লিখিত দলিলে আপত্তি আছে কিনা?

চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট কামরুল বলেন, "আমাদের কমিউনিটির বেশীরভাগ মানুষই অংশীদারি ব্যবসায় যায় আর্থিক সহায়তার আশায়। সহায়তার আশ্বাস পেলে তারা অনেক কিছুই মৌখিকভাবে পরিকল্পনা করে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়।"

"কোন ব্যবসা করে একজন সফল হয়েছেন বলে আপনিও সফল হবেন তা কিন্তু নয়। আগে ব্যবসা জানুন তারপর সিদ্ধান্ত নিন।"

পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট রেজা বলেন, "দেখা গেলো অভিজ্ঞতা আছে এমন একজন রেস্টুরেন্ট খুলতে চাচ্ছে। তার সাথে আরো তিনজন অংশীদার হলো যাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসা থেকে মুনাফা অর্জনই বাকি তিনজনের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যবসার সব চাপ সামলাতে হয় অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে। আর তখনই ফাটল তৈরি হয় সম্পর্কে।"

"ফিন্যান্সিয়াল পার্টনারের ক্ষেত্রে তার সোর্স অফ ইনকাম (অর্থের উৎস) জানতে হবে। ব্যবসায় সে যে টাকাটা খাটাবে তা কি সঞ্চয় নাকি ঋণ করা। যদি শেষটা হয়, তবে অংশীদারের মধ্যে সবসময় ঋণ পরিশোধের তাড়া কাজ করবে।"
অংশীদারি ব্যবসা দীর্ঘমেয়াদি করতে যা প্রয়োজন: 

১. একে অপরের প্রতি দেখাতে হবে পূর্ণ বিশ্বাস, আস্থা এবং শ্রদ্ধাবোধ।

২. পরস্পরকে বুঝতে হবে। ধৈর্য্য এবং আস্থা রাখতে হবে অংশীদারের নেয়া ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ওপর। 

৩. হতে হবে নিয়মিত ব্যবসায়িক বৈঠক।  

৪. থাকতে হবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।

৫. স্বচ্ছতা থাকতে হবে সবক্ষেত্রে।  

ব্যবসা শুরুর আগে SWOT Analysis করার পরামর্শ দিয়েছেন কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, "ব্যবসায় প্রত্যেক অংশীদারকে তার শক্তি (S=Strength), দুর্বলতা (W= Weakness), সুযোগ (O= Opportunity) এবং হুমকি (T= Threat) সম্পর্কে জানতে/ হিসেব করতে হবে।"

বিশ্বের অনেক বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের শুরুই হয়েছিল অংশীদার নিয়ে। যদিও একটা পর্যায়ে গিয়ে অধিকাংশ ব্যবসাই একক মালিকানাধীন হয়ে যায়।

ক্ষুদ্র ব্যবসায় অংশীদারিত্ব না নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন সিডনির ব্যবসায়ি জামাল হোসেইন এবং এ্যাডিলেইডের মোল্লা জালাল উদ্দিন। তাদের সাথে একমত পোষণ করেছেন রেজা করিম। 

"ক্ষুদ্র ব্যবসায় অংশীদার নেয়া ঠিক নয়। এটা কোনভাবেই ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে না," বলেছেন রেজা।
Business
Source: EyeEm
অংশীদারি ব্যবসা অনেকটা বিবাহের মত। সময় যত গড়াবে আস্থা, বিশ্বাস আর আকাঙ্ক্ষার পরীক্ষা ততই কঠিন হবে। 

"যে কোন ব্যবসার শুরুতেই কঠোর পরিশ্রম বা সংগ্রাম করতে হয়। অভিজ্ঞতা থাকলে কম, না থাকলে বেশী করতে হয়।"

রেজা করিম আরো বলেন, "যে কোন ব্যবসা ব্রেক ইভেন্টে আসতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। কখনো কখনো পাঁচ বছরও লাগতে পারে। শুরুর পর পরিকল্পনার অতিরিক্ত অর্থও বিনিয়োগ করা লাগে। এসময় ধৈর্য্য আর সঠিক সিদ্ধান্ত জরুরী।"

Share
Published 15 November 2018 4:31pm
Updated 19 November 2018 1:26pm
By Hasan Tariq
Presented by Hasan Tariq
Source: SBS Bangla

Share this with family and friends