গত ২০ অক্টোবর রবিবার সিডনির বাংলাভাষী অধ্যুষিত সাবার্ব লাকেম্বার ৫৮-৬০ নম্বর কুইগ স্ট্রিটের দারুল উলুম মসজিদ সংলগ্ন কন্সট্রাকশন জোনের পিছনের অংশে এক বাংলাদেশী যুবকের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার নাম মোহাম্মদ মহসিন মিয়া, বয়স আনুমাণিক ৩৩ বছর। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে স্থানীয় লোকজন ধারণা করছে।
বিকেলে নামাজ পড়তে এসে মুসল্লিদের কেউ কেউ পিছনে অন্ধকার স্থানে একটি লাশ ঝুলতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
সেদিন ২০ অক্টোবর ছিল মহসিন আলীর বাবার মৃত্যু-বার্ষিকী।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহসিন মিয়ার বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুরের মধুখালীর মথুরাপুরে। তারা চার বোন ও তিন ভাই। পাঁচ বছর আগে তার বাবা মারা গেছেন। ২০০৮ সালে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। ২০১৩ সালে মালয়শিয়া থেকে বোটে করে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। সম্প্রতি তিনি শরণার্থী ভিসা-আবেদন করার সুযোগ পান। তবে, তার প্রাথমিক আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর তিনি ফেডারাল সার্কিট কোর্টে আপিল করেন। অস্ট্রেলিয়াতে তিনি ব্রিজিং ভিসা নিয়ে ছিলেন।ব্রিজিং ভিসায় বসবাসকারী অন্য বহু লোকের মতোই মহসিন মিয়ার কোনো উপার্জন ছিল না এবং কাজ করারও অনুমতি ছিল না। তাছাড়া, তার ব্যাক-পেইন ছিল বলে বেশি কাজ করতে পারতেন না তিনি। বাংলাভাষী কমিউনিটির সদস্যদের সহায়তায় তাকে জীবনধারণ করতে হতো।
Darul Ulum Sydney Source: SBS Bangla
দি রিফিউজি অ্যাকশন কোয়ালিশনের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তার বন্ধুরা জানিয়েছেন, দুর্বিষহ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কয়েক মাস আগেই তিনি আত্মহত্যা করবেন বলেছিলেন। অপরের সাহায্য নিয়ে চলার জন্য তিনি সবসময় অপরাধবোধে ভুগতেন।
রিফিউজি অ্যাকশন কোয়ালিশনের মুখপাত্র ইয়ান রিন্টুল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন,
“মোহাম্মদের (মহসিন মিয়া) মৃত্যু এখন পর্যন্ত আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা যার মাধ্যমে সরকারের ব্যর্থ অ্যাসাইলাম প্রসেসের চিত্র ফুটে ওঠে। রিফিউজি কমিউনিটিতে তার মৃত্যুর ঘটনা বড় আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছে।”
ইতোপূর্বে তিনি রকডেল মসজিদে থাকতেন। সম্প্রতি মাস খানেক আগে লাকেম্বার দারুল উলুম মসজিদে বাস করা শুরু করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সেখানে তিনি মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করতেন। বাংলাভাষী কমিউনিটির মুসল্লিরা মাঝে মাঝে অনিয়মিতভাবে তাকে আর্থিক সহায়তা দিত। দারুল উলুমের পাবলিক অফিসার সৈয়দ কামরুল হাসান বলেন, “মহসিন মিয়া ভাল লোক ছিলেন। তবে শেষের দিকে কিছুটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন।”মহসিন আলীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেন ক্যান্টারবেরি-ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিলের বাংলাভাষী কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহে জামান টিটু।
Councillor Mohammed Shahe Zaman Titu, Canterbury-Bankstown City Council. Source: Supplied
তিনি বলেন, “আমার মনে হয় আমাদের কমিউনিটির পক্ষ থেকে আরেকটু অ্যাক্টিভ হওয়া উচিত, আরেকটু সোশ্যাল কাজে সময় দেওয়া উচিত।”
“এই যে আত্মহত্যার প্রবণতা, এটা কিন্তু একদিনে হয় নি, এটা দীর্ঘ দিনের ব্যাপার।”
তিনি বলেন, মোহাম্মদ মহসিন আলীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত ব্যক্তিরা এবং দারুল উলুম সিডনি কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে দেখা করেন এবং মৃত মহসিন আলী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেন।
ইতোপূর্বে কাউন্সিলর টিটু তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। মাত্র দু’য়েকবার তার সঙ্গে দেখা হয়েছে, বলেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশে মহসিন আলীর বড় ভাই আসাদ বিশ্বাসের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন এবং বিষয়টি দেখাভাল করার প্রতিশ্রুতি দেন।
কাউন্সিলর টিটু আরও বলেন, তাদের পরিবারের চাওয়া হলো লাশটা যেন দেশে পাঠানো হয়।
মোহাম্মদ মহসিন মিয়ার লাশের ময়না তদন্ত ও করোনারের রিপোর্ট সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায় নি। তাই জানাজা কবে হবে, কোথায় হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তার লাশ দেশে পাঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে। এ সম্পর্কে কাউন্সিলর টিটু বলেন,
“ফরেনসিক, করোনার রিপোর্ট ইত্যাদির জন্য আরও ৮-১০ দিন লাগতে পারে।”
“তার পরিবার যদি আমাদেরকে অথরিটি দেয়, তাহলে দেশে মরদেহ পাঠানোর জন্য কাল-পরশুর মধ্যেই আমরা ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়াতে আপিল করার ও ফান্ড রেইজ করার কাজ শুরু করবো।”
“শাপলা-শালুক লায়ন্স ক্লাব এজন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।” এর আগেও তারা বাংলাদেশে লাশ পাঠিয়েছে, বলেন তিনি।
সিডনিতে বাংলাদেশ কনসুলেট এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন কাউন্সিলর টিটু।