জন উইলিয়াম হুডের মন জুড়ে রয়েছে কলকাতা। ষাটের দশকে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন উইলিয়াম হুড ভারততত্ত্বের ছাত্র হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন শিবনারায়ণ রায় এবং অতীন্দ্র মজুমদারকে। বাংলার সাহিত্য এবং ইতিহাসের সঙ্গে সেই সুবাদে পরিচয়। পরবর্তীতে গবেষণা করেছেন বিখ্যাত লেখক নীহাররঞ্জন রায়কে নিয়ে। মানে নীহাররঞ্জন রায়ের সাহিত্যকর্ম নিয়ে। নীহাররঞ্জন রায়ের বিখ্যাত ইতিহাস ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ‘হিস্ট্রি অফ দ্য বেঙ্গলি পিপল’ নামে। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণও হয়েছে কয়েক বছর আগেই।
এহেন জন উইলিয়ামকে চেনেন কলকাতার বিখ্যাত সব ছবি করিয়েরা, মানে পরিচালকরা। বাংলা সাহিত্য এবং সিনেমার সঙ্গে সেই কবে থেকে জড়িয়ে গেছে তাঁর নাম। ইংরেজিতে লিখেছেন জগৎ বিখ্যাত সব বাঙালি পরিচালক, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবি নিয়ে। শুধু বাঙালি পরিচালক নয়, ভারতীয় বিখ্যাত পরিচালকদের ছবি নিয়েও ইংরেজিতে তাঁর লেখা রীতিমতো রেফারেন্স হিসেবে গণ্য করা হয়।
আসলে, কলকাতায় থাকার সময় সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়, বুদ্ধদেব গুহ বা কবি-পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সঙ্গে জন উইলিয়াম হুডের সখ্যতা তাঁকে বাংলা সাহিত্য এবং চলচ্চিত্র, দুটো ধারাতেই সাবলীল করে তুলেছে।
পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর বহু ছবির ইংরেজি সাব-টাইটেল তাঁর করা। এই তালিকায় আছেন সত্যজিৎ-পুত্র আরেক বিখ্যাত পরিচালক সন্দীপ রায়, শেখর দাস-রাও। অনুবাদ করেছেন প্রফুল্ল রায়ের বহু বিখ্যাত ছোট গল্প এবং উপন্যাস। দু’পার বাংলায় এক সময় আলোড়ন ফেলে দেওয়া বুদ্ধদেব গুহর উপন্যাস ‘কোজাগর’-এর অনুবাদও জন উইলিয়াম হুডেরই করা। বাংলাদেশের হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রীর উপাখ্যান’ অনুবাদ করেছেন, শীঘ্রই তা প্রকাশিত হবে। এ রকম আরও ছয়টি বাংলা উপন্যাসের অনুবাদ-কর্ম শেষ। সেগুলো এখন ছাপা হওয়ার প্রতীক্ষায়।
কলকাতায় থাকতে থাকতে মেলবোর্নের জন উইলিয়াম হুড প্রায় বাঙালি হয়ে গেছেন। বাংলা তো ভালো বলেনই, আদবকায়দাতেও ষোলআনা বাঙালি। লুঙ্গি পরেন বাড়িতে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের অসহ্য গরমে ঘরোয়া বাঙালির মতো ঘরে কেউ না থাকলে ফ্যান ছেড়ে খালি গায়ে থাকতে ভালবাসেন, বা বাধ্য হন। আবার অতিথি বা পরিচিত কেউ এলে সঙ্গে সঙ্গে পাশে ফেলে রাখা পোলো টি-শার্টটি ঊর্ধ্বাঙ্গে গলিয়ে নেন সৌজন্যের খাতিরে। পাড়ায় হুট-হাট দরকারে ঐ পোশাকেই বেড়িয়ে পড়েন। পরিচিতরা অবাক হন না, কিন্তু অন্যরা মুখ ঘুরিয়ে বারবার দেখেন, লুঙ্গি-টি-শার্ট পরা সাহেব তো আর কলকাতায় সবসময় দেখা যায় না!
এবার অবশ্য বর্ষা শুরুর আগেই মেলবোর্ন ফিরে গেছেন জন উইলিয়া হুড। শীতে আবার ফিরে আসবেন। ১৯৪৪ সালে জন্ম, মানে বয়স এখন ৭৫ বছর। সেটা অবশ্য শুধুমাত্র একটা সংখ্যা, তার বেশি কিছু নয়। অস্ট্রেলিয়ায় এবার ফিরেছেন, বেশি কিছু কাজ জমে আছে আর ঐ যে শুরুতে যে-রকম বলা হয়েছে, ছোটদের ডিমান্ডে। কিন্তু, এই ক’ মাসেও জন উইলিয়াম হুডের মন জুড়ে শুধুই কলকাতা, বাংলা সাহিত্য আর ফিল্ম। দেখা হবে, আগামী শীতে আবার।
READ MORE
আপনি কি আবারও বিয়ে করতে চান?