সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে হিন্ডন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সি-১৩০ ট্রান্সফোর্ট এয়ারক্রাফট থেকে শেখ হাসিনা নামেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং কয়েকজন অফিসার।
এখনো পর্যন্ত জানা গিয়েছে, শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চান নি। তাই তাঁর পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে একটি অসমর্থিত সূত্রের খবর, শেখ হাসিনা সম্ভবত লন্ডনে যাবেন। ভারতে তিনি কোনও রাজনৈতিক আশ্রয় চান নি। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, সোমবার রাতেই তিনি লন্ডনের ফ্লাইট ধরতে পারেন। তার পরে জানা যায়, ব্রিটেন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও সরকারি সূত্রে এর কোনও সমর্থন মেলে নি। তবে তেমন হলে শেখ হাসিনা আগামী কয়েক দিন দিল্লিতেই সেফ হাউসে থাকতে পারেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, ভারতে পৌঁছুতেই বাংলাদেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে সবকিছু জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বিদেশ সচিবকে নিয়ে তাঁকে সংসদ ত্যাগ করতে দেখা গিয়েছে। তার আগে সংসদে বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। খবর, হিন্দোন বিমান ঘাঁটিতে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। জানা গিয়েছে, দু'জনের প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা জানা যায় নি। বৈঠকের পর বায়ুসেনা ঘাঁটি ত্যাগ করেছেন অজিত ডোভাল। এদিকে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক রয়েছে ভারত সরকার। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিকে বিশেষ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশে গণবিক্ষোভের জেরে শুধু প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়াই নয়, দেশও ছাড়তে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। সোমবার দুপুরে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ঢাকার বাসভবন তথা গণভবন ছাড়েন তিনি। তাঁকে কপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কপ্টারটি উড়িয়ে নিয়ে যান এয়ার কমান্ডার আব্বাস। তারপর জানা যায়, ভারতের আকাশসীমায় দেখা গিয়েছে শেখ হাসিনার বিমানকে। জল্পনা ছিল যে, দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করবে শেখ হাসিনার বিমান। কিন্তু পরে জানা যায়, দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ না করে রাজধানী লাগোয়া গাজিয়াবাদের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অবতরণ করেছেন শেখ হাসিনা।
এদিকে, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে যোগাযোগ আপাতত বন্ধ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভারতের সীমান্ত। জারি করা হয়েছে হাই অ্যালার্ট। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে সমস্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ ছিল বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বাস পরিষেবাও। ফলে সোমবার দুপুরের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের আর কোনও পথই খোলা নেই। যা দুশ্চিন্তায় ফেলে কাঁটাতারের দু’পারের মানুষকে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সীমান্তে আটকে পড়েছে ভারতে আসার শ’তিনেক মালবাহী ট্রাক। আর, ল্যান্ড পোর্ট অথোরিটি অব ইন্ডিয়া পেট্রাপোল সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে বাণিজ্য পরিবহন বন্ধ তো হয়েছেই। বন্ধ রয়েছে যাত্রী পরিবহনও।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়তে কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন বাংলাদেশীরা। মিষ্টিমুখ, কোলাকুলি করে বিজয় উৎসবে মেতেছেন তাঁরা। উৎসাহীরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকার যেভাবে ছাত্রদের আন্দোলন প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন, সাধারণ মানুষ তার জবাব দিয়েছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা কলকাতায় আসেন তাঁদের একটা বড় অংশ থাকেন মধ্য কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটে। কেউ চিকিত্সার প্রয়োজনে, কেউ আবার স্রেফ কলকাতায় ঘুরতে। সোমবার তাঁরাই পথে নেমে আনন্দ উল্লাসে মেতেছেন। অন্যদিকে, অশান্তি হিংসার জেরে যারা এতদিন ভারতে আটকে পড়েছিলেন, সেই সমস্ত বাংলাদেশিরা শেখ হাসিনার ইস্তফার পর দেশে ফেরার জন্য বস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু উদ্ভত পরিস্থিতিতে বিমান, বাস, ট্রেন বাতিল করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন কলকাতায় আটকে পড়া বাংলাদেশীরা।
এই অবস্থায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আর্জি, সবাইকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করছেন। বিষয়টা ভারত সরকারের অধীনে। ওরা যা সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার তা মেনে চলবে। সোশাল মিডিয়ায় পোস্টের ক্ষেত্রে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি নেতৃত্বকেও সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রাজ্য বিধানসভায় সোমবার দুপুরে যখন বাংলাভাগের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে তখনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পারেন পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে শান্ত ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, আমাদের বাংলায় কেউ যেন কোনও উত্তেজনা না ছড়ায়। উত্তেজনায় পা না দেয়। বিষয়টা ভারত সরকারের অধীনে। ওরা যা সিদ্ধান্ত নেবে আমরা মেনে চলব।
মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফ কথা, ভারত একটা দেশ। বাংলাদেশ একটা দেশ। পড়শি রাজ্য, দেশে যাই হোক তা পাশের রাজ্য বা দেশে পড়েই। সেক্ষেত্রে শান্ত থাকতে হবে। সব সন্তানরা ভাল থাকুন। সকলেই আমাদের ভাইবোন। বাংলাদেশের ঘটনায় আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। দু’দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য হোক। শান্তি রক্ষা করা হোক। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তা বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার এবং ভারত সরকার দেখে নেবে।
এর কিছুক্ষণ পর সোমবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে হিন্ডন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নামে হাসিনার বিমান। এই এয়ারবেসটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। বায়ুসেনার ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ড এয়ারবেসটির দেখভাল করে থাকে।
এদিকে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আয়োজিত বৈঠকে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রিন্সিপাল সচিব পিকে মিশ্র, ‘র’-এর প্রধান রবি সিন্হা এবং গোয়েন্দা বিভাগের (আইবি)-র ডিরেক্টর তপন ডেকা। অশান্তির এই আবহে নতুন করে বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশের মধ্যে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সদ্যপ্রাক্তন শাসকদল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি এই তালিকায় সে দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীও থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
">August 6, 2024</a></blockquote> <script async src="" charset="utf-8"></script>
আপডেট
দিল্লিতে গোপন আশ্রয়ে রয়েছেন হাসিনা, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে সময় দিচ্ছে ভারত: বৈঠকে জয়শঙ্কর
দিল্লিতে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে আপাতত কিছু দিন সময় দিয়েছে ভারত। দিল্লির সর্বদল বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজেজুরাও। সূত্রের খবর, বাংলাদেশে প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকদের পরিস্থিতি নিয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে নয়াদিল্লি।
পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের কী অবস্থান, সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত সকল সাংসদকে তা জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, আপাতত ভারত হাসিনাকে কিছু দিন সময় দিতে চায়। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তা তিনি ভারত সরকারকে জানাবেন। সেই ভাবনাচিন্তার জন্য সময় নিচ্ছেন। হাসিনার পরিকল্পনা জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে নয়াদিল্লি।