দিল্লিতে আরও ২৩ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা সেখানে বেড়ে হয়েছে ৭২। পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, কেরল, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও বিহার থেকে মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মহারাষ্ট্র থেকে ৬ জনের, মধ্যপ্রদেশে ২, কর্নাটকে ৩, গুজরাটে ৪ এবং দিল্লিতে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
এই অবস্থায়, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিব, ডিজির সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সিং-এ বৈঠক করেছেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব অজয় ভাল্লা। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লক ডাউন চলার সময় মানুষ যাতে রাস্তায় হাইওয়েতে না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে। শুধুমাত্র মালবাহী যান-বাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই নির্দেশিকা সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের।
অনাবাসী শ্রমিক ও গরিবদের যথাযথ খাবার পৌঁছে দিতেও আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১১টি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। কমিটিগুলির মধ্যে আটটির নেতৃত্বে থাকবেন সচিব পর্যায়ের আধিকারিকরা। দুটির মাথায় থাকবেন নীতি আয়োগের সদস্য আর একটির মাথায় থাকবেন নীতি আয়োগের সিইও। প্রত্যেক কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একজন আধিকারিক ও ক্যাবিনেট সচিব থাকবেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা, অর্থনীতির অবস্থা, গরিবদের দুর্দশা খতিয়ে দেখা-সহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখবে এই কমিটিগুলি।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। কলকাতায় কম্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসকের পরে আরও এক করোনা-আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৬ বছর বয়সী ওই প্রৌঢ়, যার জেরে পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ এ। এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্যে এক চিকিৎসকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আলিপুর কম্যান্ড হাসপাতালে কর্মরত তিনি। বয়স ৫০-এর উপর। পেশায় এই অ্যানাসথেটিস্ট ব্যক্তির সোয়াব নমুনা পাঠানো হয়। সেই রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দিল্লি গিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক।
পশ্চিমবঙ্গে কোনও চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। স্বভাবতই, স্বাস্থ্য মহল এই বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কারণ, করোনা-আক্রান্ত অবস্থাতেই ওই চিকিৎসক বহু রোগী দেখেছেন এবং যেহেতু তিনি ক্রিটিক্যাল কেয়ারের সঙ্গে যুক্ত, তাই রোগীদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে তাঁকে আসতে হয়েছে।
এর মধ্যে,যাঁরা লকডাউন মানছেন না তাঁরা নিজেদের জীবন নিয়ে খেলছেন। রবিবারের রেডিও অনুষ্ঠান মন কি বাত-এ এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিন সপ্তাহের সম্পূর্ণ লকডাউন রয়েছে ভারতে। কার্যত, দেশবাসীকে ফের ঘরবন্দি থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশে এই আচমকা লকডাউন ঘোষণা নিয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আর, সেই সব সমস্যার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে লকডাউন প্রয়োজনীয় কেন, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, রোগের নিয়মই হল শুরুতেই প্রতিরোধ করা। সেই কারণেই লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। একই সঙ্গে সতর্কতার বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লকডাউন অমান্য করা মানে জীবন নিয়ে খেলা। এর পাশপাশি কেউ অভুক্ত, অনাহারে থাকলে তাঁদের আহারের ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন দেশবাসীকে।
করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে দেশের সমস্ত নার্সদের প্রণাম নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমি জাতির কাছে ক্ষমা চাইছি কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। এর ফলে সাধারণ মানুষকে অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতেই হত আপনাদের রক্ষা করার জন্য।আর বাস্তব হলো, লকডাউন ঘোষণা করার পর দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশে নিজের বাড়িতে পৌঁছতে ২০০ কিলোমিটার হেঁটেছিলেন যে যুবক, তিনি রাস্তাতেই মারা গিয়েছেন। একজন ডেলিভারি এজেন্ট হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত ছিলেন রণবীর সিংহ। লকডাউনের ঘোষণার পর চাকরি, আশ্রয় ও অর্থের অভাবের মুখোমুখি যে মানুষরা নিজেদের রাজ্যে ফেরার চেষ্টা করছিলেন রণবীর ছিলেন তাঁদেরই একজন।পথঘাট শুনশান,অগত্যা পায়ে হেঁটেই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে অনেকেই নিজের গন্তব্যে পৌঁছেছেন। রণবীর সিংহও যাত্রা শুরু করেন ৩২৬ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলায় নিজের বাড়িতে পৌঁছনোর জন্য। দীর্ঘ পথ হাঁটতে হাঁটতে উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় এসে হাইওয়ের উপরেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। তখনও গ্রাম থেকে তাঁর দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার।
An Indian doctor checks the temperature of passengers at a railway station as a precautionary measure against the coronavirus in Jammu, India. Source: AAP Image/AP Photo/Channi Anand
অন্যদিকে, চতুর্থবার করোনাভাইরাস টেস্টেও শিল্পী কণিকা কাপুরের ফল পজেটিভ। অর্থাৎ, মারণ ভাইরাস থেকে এখনও মুক্তি মেলে নি তাঁর। সঞ্জয় গান্ধি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউটে কণিকা ভর্তি হয়েছেন করোনার লক্ষ্মণ শরীরে প্রকাশ পেতেই। পুলিশ সূত্রে খবর, লন্ডন থেকে ফেরার পর ১১ মার্চ লখনউ আসেন কণিকা। সেই সময় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁকে নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সবার থেকে আলাদা থাকতে বলেছিলেন। তিনি সেই সমস্ত নির্দেশ উপেক্ষা করে রীতিমতো পার্টি করেন।
আর এতো কিছুর মধ্যে ভালো খবর,সন্তানের জন্ম দেওয়ার ঠিক আগের দিন দেশের জন্যে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিয়েছেন ভাইরোলজিস্ট, মিনাল দাখাভে ভোঁসলে। দেশের জন্য প্রথম দেশীয় কিট বানিয়েছেন তিনি, যা ন্যাশনাল ইন্সটিউট অব ভাইরোলজির (এনআইভি) গুণমানের মাপকাঠিতে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার ঠিক আগের দিন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে এই কিটটি পরীক্ষার জন্য জমা দেন মিনাল দাখাভে ভোঁসলে। মিনাল মহারাষ্ট্রের পুনের মাইল্যাব ডিসকভারির গবেষণা ও উন্নয়ন প্রধান। মিনাল দাখাভে ভোঁসলে একজন ভাইরোলজিস্ট, ভাইরাস নিয়ে কাজ তার। বাইরে থেকে কিট এনে পরীক্ষার খরচ যেখানে সাড়ে চার হাজার টাকা, সেখানে মিনাল ও তাঁর সহকারীদের তৈরি একটি কিট দিয়ে একশোটি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে, খরচ পড়বে মাত্র বারোশ’ টাকা।
অস্ট্রেলিয়ানদেরকে অবশ্যই অন্যের সঙ্গে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ইনডোর বা অভ্যন্তরে, প্রতি চার বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেসে এক জনের বেশি লোক থাকা যাবে না।
আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারকে কল করুন। ডাক্তারের কাছে যাবেন না। আপনি ন্যাশনাল করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইনেও কল করতে পারেন এই নম্বরে: 1800 020 080
আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।
বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন: