কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতে দু’জনের বেশি জন-সমাগম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এ পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এবং স্টেট ও টেরিটোরিগুলোর নেতৃবৃন্দ গত রবিবার ইনডোর ও আউটডোর গ্যাদারিংগুলোর নিয়ম আরও কঠোর করার বিষয়ে একমত হন। এক্ষেত্রে তারা জন-সমাগমের লোক সংখ্যা ১০ থেকে ২ এ নামিয়ে আনেন।
পুলিশ এই সিদ্ধান্তটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে কিনা সে বিষয়টি স্টেট ও টেরিটোরিগুলোর উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মিস্টার মরিসন বলেন, একই পরিবারের সদস্যদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞাটি প্রযোজ্য হবে না।
রবিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী সেল্ফ-আইসোলেশন সম্পর্কিত নতুন আরও নির্দেশনা প্রদান করেন।
সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরকে এবং দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরকে ও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনডিজেনাস (স্থানীয়) অস্ট্রেলিয়ানদেরকে ‘বাস্তবিকভাবে যতোটা সম্ভব’ ঘরের বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করেন তিনি।
মিস্টার মরিসন বলেন, সাধারণ জনগণের জন্য নয়, বরং সেই সব ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য এসব ব্যবস্থা, যারা এই ভাইরাসের দ্বারা ভয়ানকভাবে আক্রান্ত হতে পারেন।
তিনি বলেন, “যতোটা সম্ভব অন্যের সংস্পর্শে যাওয়া থেকে তাদেরকে রক্ষা পেতে হবে।”
থাকার নিয়ম অপরিবর্তিত রয়েছে।
Recently arrived overseas travellers arrive at the Crown Promenade Hotel in Melbourne for a mandatory 14-day quarantine period. Source: AAP
“এটি কোনো বাধ্যবাধকতা নয়। এটি জোরালো পরামর্শ-- সত্তর বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিদের উচিত ঘরে অবস্থান করা এবং নিজের সুরক্ষার জন্যই সেল্ফ-আইসোলেশন করা। বাস্তবিকভাবে সর্বোচ্চ যতোটা সম্ভব।”
“এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে ক্রনিক (দীর্ঘদিন ধরে) অসুস্থ্য ব্যক্তিদের প্রতি, যাদের বয়স ষাটের বেশি এবং ক্রনিক (দীর্ঘদিন ধরে) অসুস্থ্য ইনডিজেনাস (স্থানীয়) ব্যক্তিদের প্রতি, যাদের বয়স পঞ্চাশের বেশি।”
বৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ানদের গ্রুপ COTA বলছে, অসহায় অস্ট্রেলিয়ানদের ঘরে অবস্থান করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাণী তারা সমর্থন করেন।
COTA Australia এর চিফ একজিকিউটিভ ইয়ান ইয়েটস এক বিবৃতিতে বলেন,
“এই উপদেশ উপেক্ষা করাটা সমীচিন হবে না।”
“তবে, এর মানে এটা নয় যে, বৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ানরা নিজেদেরকে ঘরে বন্দি করে ফেলবেন এবং বাইরে একেবারেই যাবেন না।”
“যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বৃদ্ধরা এখনও কুকুরকে হাঁটাতে বের হতে পারবেন কিংবা নিজেরাও হাঁটতে বের হতে পারবেন।”
Returning overseas travellers at Sydney International Airport in Sydney are directed by army officers to go into quarantine. Source: AAP
দু’ব্যক্তির নিয়ম প্রয়োগ করবে স্টেট ও টেরিটোরিগুলো
দু’ব্যক্তির নিয়ম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মিস্টার মরিসন বলেন, শারীরিকভাবে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদেরই নিকটবর্তী হওয়া যাবে, যেমন, সন্তানদেরকে নিয়ে বাবা-মায়েরা বাইরে হাঁটতে পারবেন।
এই আইনটি কীভাবে প্রয়োগ করা হবে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা স্টেট ও টেরিটোরিগুলোর কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবেন।
“এই নিয়মগুলো নির্দেশনামূলক ও পরামর্শ স্বরূপ। তবে, এই দু’ব্যক্তির নিয়মটি এবং বিশেষভাবে ১০ ব্যক্তির নিয়মটি ইতোমধ্যে সাউথ অস্ট্রেলিয়ানদের মনে থাকবে। সেখানে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে ১০০০ ডলার জরিমানা করা হবে যদি আপনি এই নিয়মটি ভঙ্গ করেন। তাই তারা অযথা ঘুরে বেড়াচ্ছে না।”
দু’ব্যক্তির এই নিয়মটি শপিং সেন্টারগুলোতেও প্রয়োগ করা হবে।
“জোরালো পরামর্শ হচ্ছে দলবেঁধে একত্রিত হবেন না। এটা করবেন না। আপনি যখন বাজার করতে যান, তখন আপনার যা যা দরকার শুধুমাত্র সেগুলোর জন্য যান এবং বাজার করুন ও ঘরে ফিরুন। এটা ঘুরাঘুরি করার সময় নয়।”
“বন্ধুদের সঙ্গে খোশ-গল্প করার সময় এটা নয় কিংবা লম্বা আলাপে মশগুল হওয়ারও সময় এটা নয়। আপনি এ রকম কাজ আর করতে পারবেন না।”
উচ্ছেদ নিয়ন্ত্রণ
আর্থিক সমস্যার কারণে ভাড়া দিতে ব্যর্থ হলে কোনো ভাড়াটেকে ছয় মাসের মধ্যে উচ্ছেদ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে স্টেট এবং টেরিটোরিগুলো।
মিস্টার মরিসন বাড়িওয়ালাদের প্রতি আহ্বান জানান তাদের ভাড়াটেদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য।
“আমাদের বসা দরকার, পরস্পর কথা বলা দরকার এবং এর সমাধান করা দরকার। সেই ব্যবসাগুলো দেখুন যেগুলোর আয় অনেক কমে গেছে।”“আমরা চাই লোকজন বসুক এবং এর সমাধান করুক।”
اسکات موریسن، نخستوزیر آسترالیا و برندن مورفی، مدیر ارشد صحی Source: AAP
তিনি বলেন, ভাড়াটে, বাড়িওয়ালা এবং ব্যাংকগুলোর জন্য পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত তথ্য সামনে আসছে।
“এর জন্য কোনো নিয়মের বই নেই। আমরা এখন অচিহ্নিত ভূখণ্ডে আছি তবে উদ্দেশ্য শেয়ার করতে হবে।”
“অপর পক্ষে, এই বিজনেস পুনরায় চালু করতে হবে। যে বাড়িওয়ালার একজন ভাড়াটে আছে তাকে বকেয়া ভাড়ার কারণে অতিরিক্ত ঋণে ভারাক্রান্ত করা যাবে না। তারা যেন তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়তা পায়। আর ব্যাংকের ক্লায়েন্ট রয়েছে, বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটে, উভয়েই।”
বাণিজ্যিক ভাড়াটেদের জন্যও কাজ করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কমার লক্ষণ
চিফ মেডিকেল অফিসার ব্রেন্ডান মারফি বলেন, গৃহীত পদক্ষেপগুলো ‘র্যাডিক্যাল’ (সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী)।
“যাদের ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই তাদের ঘরে অবস্থান করা উচিত। এটি র্যাডিক্যাল (সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী)।
তিনি বলেন, বহু অস্ট্রেলিয়ান যেখানে পুরোপুরিভাবে লকডাউন মেনে চলছেন সেখানে এমন লোকও আছেন যারা নিয়ম মানছেন না।
“বিজ্ঞান বলছে যে, শতকরা ৯০ ভাগ জনগণকে পুরো সময় এটা মেনে চলতে হবে। তাই, যা মেনে চলছেন তা চালিয়ে যান।”
“এই নিয়মগুলো মেনে চলতে থাকুন এবং আশা করা যায়, ফ্লাটেনিংয়ের (করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমার) আগাম লক্ষণগুলোর অর্থ হলো যে, আমরা চালিয়ে যেতে পারি এবং প্রতিদিন এই হারের বৃদ্ধি হওয়া হ্রাস করতে পারি।”
অস্ট্রেলিয়ায় এ পর্যন্ত ৩,৮৭৩ জন সুনিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এ পর্যন্ত ১৬ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ানদেরকে পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্যদের সঙ্গে হলে দু’জনের বেশি একত্রিত হওয়া যাবে না।
অস্ট্রেলিয়ানদেরকে অবশ্যই অন্যের সঙ্গে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ইনডোর বা অভ্যন্তরে, প্রতি চার বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেসে এক জনের বেশি লোক থাকা যাবে না।
আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারকে কল করুন। ডাক্তারের কাছে যাবেন না। আপনি ন্যাশনাল করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইনেও কল করতে পারেন এই নম্বরে: 1800 020 080
আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।
বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন: